ইতিহাসে বাংলাদেশ
প্রাচীন বাংলাদেশ
বাংলাদেশের পশ্চিম-উত্তররাঞ্চল, পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চল অপেক্ষাকৃত প্রাচীন। পলিমাটি দ্বারা গঠিত মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল অপেক্ষাকৃত নতুন।
সর্বপ্রথম কোন সময় বাংলাদেশে মানব বসতি শুরু হয় তা বলা কঠিন। তবে অপেক্ষাকৃত প্রাচীন অঞ্চলে প্রাচীন মানুসের বসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে।
খৃষ্টপূর্ব তিন কি দুই হাজার বছর পূর্বে যখন দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলে উন্নত জীনব মানের অধিকারী মানব গোষ্ঠীর বসবাস ছিলো তখন বাংলাদেশের পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলেও সভ্য মানুষের বসবাস ছিলো বলে আভাস পাওয়া গেছে।
উপমহাদেশে আর্যদের আগমন
খৃষ্টপূর্ব ১৭৫০ সনে উরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত কিরগিজ অঞ্চল থেকে আর্যদের কয়েকটি গোত্র ইরানে প্রবেশ করে। কয়েকটি গোত্র হিন্দুকুশ পর্বত পেরিয়ে এই উপমহাদেমের সিন্ধা ও পাঞ্জাব অঞ্চলে পৌঁছে। ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন গোত্র আসতে থাকে।
আর্যরা ছিলো যাযাবর। তারা ছিলো দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। তারা এই উপমহাদেশের প্রাচীন অধিবাসীদের ওপর চড়াও হয়। তাদের হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় হরপ্পা, মোয়েন-জো-দারো, চান-হু-দারো, প্রভৃতি সুন্দর শরহ। অসংখ্য লোক নিহত হয়। বহু সংখ্যক লোককে বন্দী করে দাসে পরিণত করা হয়।
এইসব হামলা থেকে যারা বেঁচে ছিলো তারা ক্রমশঃ পূর্ব দিকে সরে আসে। আর্যগণও পূর্ব দিকে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখে। খৃষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর মধ্যেই আর্যগণ পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কাশী, কোসল, বিদেহ প্রভৃতি রাষ্ট্রের পত্তন করে। মগধ (দক্ষিণ বিহার) ও মগধের পূর্বে অবস্থিত অংগ রাজ্য তখনো আর্যদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো। বংগ ও কামরূপ (আসাম) রাজ্য ছিলো আরো দূরে।
আর্য সমাজ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ আর্যগণ প্রকৃতি ও কল্পিত বহু দেবদেবীর পূজারী ছিলো। তাদের প্রতাপশালী দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্র ও বরুনের স্থান ছিলো সর্বোচ্চ।
আর্যদের মাঝে নানা রকম পূজা- পার্বন প্রচলিত ছিলো। তাদের ধর্মের কেন্দ্র ছিলো যজ্ঞ। যজ্ঞের জন্য বড়ো আকারের আগুনের কুণ্ডলী প্রজ্জ্বলিত করা হতো। এতে ক্রমাগত ঘি ও অন্যান্য দ্রব্য নিক্ষেপ করা হতো। একদিকে স্তুপীকৃত হতে থাকতো বলি দেয়া পশুগুলো। বেদিতে বসে ব্রাহ্মণ পাঠ করতে থাকতেন মন্ত্র। এইভাবে সৃষ্টি হতো একটি ভয় ও বিস্ময়ের পরিমণ্ডল। আর্যরা বিশ্বাস করতো যে দেবতারা যজ্ঞস্থরে হাজির হয় ও ভক্তদের সংগে পানাহার করে। আর সন্তান লাভ, ধন-সম্পদ লাভ কিংবা যুদ্ধে বিজয় লাভের আশ্বাস দেয়।
আর্য সমাজে প্রকট জাতিভেদ প্রথা চালু ছিলো। আর্যদের ধর্মীয় গ্রন্হ ঝক-বেদের পুরুষসুক্ত শ্লোকে বলা হয়েছে যে পুরুষের (অর্থাৎ ব্রাহ্মার) মুখ থেকে ব্রাহ্মণের, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়ের, উরু থেকে বৈশ্যের ও পা থেকে শূদ্রের জন্ম। তাদের সমাজ ব্যবস্থায় শূদ্রদের জীবনের মূল্য কুকুর- বিড়ালের জীবনের মূল্যের চেয়ে বেশি ছিলো না। আর্যগণ স্থানীয় যেইসব লোককে পরাজিত করে দাসে পরিণত করে ছিলো, এরা শূদ্র শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস গ্রন্হে সুনীল চট্টোপাধ্যায় বলেন যে ‘চতুর্বর্ণ সমাজে সর্বনিম্ন স্থানে ছিল শূদ্র। উচ্চতর তিন বর্ণের সেবা করাই ছিল তার কাজ। এর মধ্যে ব্রাহ্মণদে সেবা করাই ছিল প্রধান’।
‘শূদ্রদের নিচে ছিল অস্পৃশ্যগণ। কখনও তাদের ‘পঞ্চম জাতি” বলা হত। তারা ছিল আদিবাসি উপজাতি”। চণ্ডালগণ ছিল তাদের মধ্যে প্রধান। মনুতে অনেক সময় চাণ্ডালদেরকে কাক ও কুকুরের সঙ্গে একাসনে বসানা হয়েছে। তাদের কোন অধিকার ছিল না। তাদের স্পর্শকেও অপবিত্র মনে করা হত। আর্যদের বাসস্থান, গ্রাম এবং শহরের বাইরে তারা বাস করতো’।
আর্য সমাজে নারীদের কোন মর্যাদা ছিলো না। সম্পত্তির মালিকানায় তাদের অংশ ছিলো না। আর্যগণের ভাষা ছিলো সংস্কৃত। এই ভাষা ছিলো জটিল ও জনগণের জন্য দুর্বোধ্য। আর্যগণ সংস্কৃত ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করতো। অবজ্ঞা করতো অন্যসব ভাষাকে। ঘৃণা করতো সেই সব ভাষায় যারা কথা বলতো তাদেরকে।
আর্যসমাজ ছিলো ব্রাক্ষণ-প্রধান। শুধু ধর্মীয় নয়, আর্যদের সামাজিক জীবনাদর্শও ছিলো ব্রাহ্মণ্যবাদ।
রাঢ়, পুণ্ড্রবর্ধন, বংগ ও সমতট রাজ্য
উল্লেখ্য যে খৃষ্টপূর্ব অষ্টম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর কোন এক সময়ে আর্য পণ্ডিতদের দ্বারা ঐতরেয় ব্রাহ্মণ রচিত হয়। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে অনার্য ও দস্যু বলে যেইসব জাতির নাম ঘুণা ভরে উল্লেখ করা হয়েছে পুণ্ড্র জাতি সেই গুলোর একটি। পুণ্ড্রদের রাজ্যের নাম ছিলো পুণ্ড্রবর্ধন। এর রাজধানী ছিলো পুণ্ড্রনগর। আজকের বগুড়া জিলার মহাস্থাগড়ই সেই কালের পুণ্ডুনগর। অতীতে পশ্চিম বংগের বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের নাম ছিলো রাঢ়। বর্তমান বাংলাদেশের উত্তরাংশ ও পশ্চিম বংশের উত্তর-পূর্বাংশ জুড়ে ছিলো পুণ্ডুবর্ধন। বাংলাদেশের বৃহত্তর ঢাকা, বৃহত্তর ফরিদপুর ও বৃহত্তর যশোর জিলা নিয়ে গঠিন অঞ্চরের নাম ছিলো বংগ। তার দক্ষিণের অঞ্চল পরিচিত ছিলো বঙ্গাল নামে। বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের নাম ছিলো সমতট। আবার বৃহত্তর সিলেট, বৃহত্তর কুমিল্লা, বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর চট্টগ্রামকে একত্রে বলা হতো হরিকেল।
যুগে যুগে এইসব রাজ্যের সীমানার পরিবর্তন ঘটেছে। পরিবর্তন ঘটেছে নামেরও।
মগধ ও অংগ রাজ্যে আর্য প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা
খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে মগধ রাজ্য বরতে বুঝাতো পাটনা ও গয়া জিলাকে। এই রাজ্যের রাজধানী ছিলো গয়ার নিকটবর্তী গিরিব্রজ বা রাজগৃহ।
অংগ রাজ্যের অবস্থান ছিলো মগধ রাজ্যের পূর্ব দিকে। মনে হয় প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্য ছিলো অংগরাজ্যের মূল ভূ-খণ্ড। চম্পা নদী মগধ রাজ্য ও অংগ রাজ্যের সীমানা রচনা করেছিলো। অংগ-রাজ্যের রাজধানী ছিলো চম্পা নগরী।
খুব সম্ভব খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুতে বংগ রাজ্য অংগ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। আর স্বাভাবিকভাবেই বংগ রাজ্যেও ব্রাহ্মণ্যবাদের আগমন ঘটে।
মগধ ও অংগ রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা
আর্যদের নিয়ন্ত্রিত রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও মগধ রাজ্য ও অংগ রাজ্যের মধ্যে বনিবনা ছিলোণা। খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে অংগ রাজ্যের রাজা ছিলেন ব্রহ্মদত্ত। সেই সময় মগধ রাজ্যের রাজা ছিলেন, হর্যঙ্ক বংশের ভক্তিয় বা মহাপদ্ম। অংগ রাজ্যের রাজা ব্রহ্মদত্ত মগধ রাজ্য আক্রমণ করেন। যুদ্ধে মগধ রাজ্যের রাজা ভক্তিয় পরাজিত হন। খৃষ্টপূর্ব ৫৪৫ সনে মগধের রাজা হন বিম্বিসার। তিনি তাঁর পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অংগ রাজ্র আক্রমন করেন। যুদ্ধে অংগ রাজ্যের রাজা ব্রহ্মদত্ত পরাজিত হন। অংগ রাজ্য মগধ রাজ্যের অধীনে চলে যায়। উল্লেখ্য যে বংগ রাজ্য অংগ রাজ্যের সাথে যুক্ত ছিলো বিধায় বংগরাজ্যও মগধ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্রাহ্মণ্যবাদ আর্য সমাজ নিয়ন্ত্রণ করেছে। চিন্তাশীল মানুষদের একটি অংশ আর্য সমাজে ব্রাহ্মণ-প্রাধান্য, জটিল যাগ-যজ্ঞ ও জাতিভেদ প্রতার অসারতা উপলব্ধি করতো। এই সবের প্রতিবাদ করার সাহস তারা পায়নি।
কিন্তু খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী প্রবল আন্দোলন গড়ে ওঠে। এর পেছনে তাওহীদবাদী চিন্তা-চেতনাই ক্রিয়াশীর ছিলো বলে মনে হয়।
বিম্বিসার যখন মগধ সাম্রাজ্যের অধিপতি তখন ইরানের সম্রাট সাইরাস (জুলকারনাইন) হিন্দুকুশ পর্বত পেরিয়ে এসে আর্যদের অন্যতম রাজ্য গান্ধারা জয় করেন। তখন গান্ধারা রাজ্য গঠিত ছিলো পেমাওয়ার, রাওয়ালপিণ্ডি ও কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে। এর রাজধানী ছিলো তক্ষশিলা।
উল্লেখ্য যে সাইরাস (জুলকারনাইন) ছিলেন তাওহীদী জীবন দর্শনে বিশ্বাসী। তাঁর গান্ধারা বিজয়ের পর তাওহীদী জীবন দর্শনের আলোকচ্ছটা এখানে পৌছেঁছিলো নিম্চয়ই। তখন বিম্বিসার কর্তৃক শাসিত মগধ সাম্রাজ্য থেকে বহু লো জ্ঞান চর্চার জন্য গান্ধারা যেতো। এদের কেউ কেউ ইরান-সাম্রাজ্যের সহজ সরল উপাসনা পদ্ধতি, সামাজিক সাম্য, নারীর অধিকার ইত্যাদির সাথে পরিচিত হয়ে নতুন ধ্যান ধারণায় উজ্জীবিত হয়ে দেশে ফিরেছে এবং অন্যদের সাথে এই সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করেছে এমনটি ধারণা করা মোটেই অযৌক্তিক নয়। ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী কোন কোন আন্দোলন সামান্য পরিমাণে ও পরোক্ষভাবে হলেও সাইরেসের গান্ধারা বিজয়ের কাছে ঋণী, এই কথা বোধ হয় জোর দিয়েই বলা চলে।
মগধ সাম্রাজ্যে হর্যঙ্ক বংশের শাসন
আগেই বলেছি বিম্বিসার মগধের রাজা হন খৃষ্টপূর্ব ৫৪৫ সনে। তিনি খৃষ্টপূর্ব ৪৯৩ সন পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তাঁর শাসন কালে গৌতম বুদ্ধ ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী বৌদ্ধবাদ প্রচার শুরু করেন। বিম্বিসার ব্রাহ্মণ্যবাদ ত্যাগ করে বৌদ্ধবাদে দীক্ষিত হন।
খৃষ্টপূর্ব ৪৯৩ সন থেকে ৪৬২ সন পর্যন্ত বিম্বিসারের পুত্র অজাতশক্র রাজ্য শাসন করেন। খৃষ্টপূর্ব ৪৩০ সন পর্যন্ত মগধ সাম্রাজ্য হর্যঙ্ক বংশের শাসনাধীন ছিলো। উল্লেখ্য যে বিম্বিসার ও অজাতশক্রুর প্রচেষ্টায় মগধ রাজ্য বিশাল মগধ সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। কালক্রমে এই বিশাল সাম্রাজ্যের রাজধানী হয় পাটলীপুত্র।
বলাই বাহুল্য যে হর্যঙ্ক বংশীয় বৌদ্ধ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধবাদ ব্যপকভাবে প্রচারিত ও গৃহীত হয়। গৌতম বুদ্ধ প্রাকৃত ভাষায় তাঁর মতাদর্শ প্রচার করেছিলেন। তাই সংস্কৃতের পরিবর্তে প্রাকৃত ভাষা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে।
উল্লেখ্য যে তখন যেহেতু বংগ রাজ্য মগধের হর্যঙ্ক বংশীয় বৌদ্ধ শাসকদের শাসনাধীন ছিলো সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই তখন বংগ রাজ্যেও বৌদ্ধবাদের প্রসার ঘটার কথা।
হর্যঙ্ক বংশের শেষ সম্রাট নাগদশক খৃষ্টপূর্ব ৪৩০ সনে তাঁর অন্যতম পরিষদ শিশুনাগের হাতে নিহত হন। শিশুনাগ ও তাঁর পুত্র কালাশোক খৃষ্টপূর্ব ৩৬৪ সন পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
মগধ সাম্রাজ্যে নন্দ বংশের শাসন
খৃষ্টপূর্ব ৩৪৬ সনে মহাপদ্ম নন্দ কালাশোককে হত্যা করে মগধ সাম্রাজ্যের অধিপতি হন। মহাপদ্মনন্দ ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী ছিলেন। সেই জন্য নীচু বংশজাত সত্ত্বেও তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নন্দ সম্রাটদের শাসন কালে ব্রাক্ষণ্যবাদের প্রতিপত্তি অনেকাংশে হ্রাস পায়। নন্দ বংশীয় নয়জন সম্রাট মগধ সাম্রাজ্য শাসন করেন।
সংগত কারণেই ব্রাহ্মণগণ তাঁদেরকে সুনজরে দেখতেন না। তাঁরা মনে প্রাণে নন্দ সম্রাটদের পতন কামনা করতেন। নন্দ বংশীয় শেষ সম্রাট ধননন্দ ব্যক্তিগত মন্দ আচরণ ও জনগণের ওপর অত্যাধিক করারোপ করে জনগণের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেন। ব্রাহ্মণগণ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ধননন্দকে উৎখাত করতে সচেষ্ট হন।
মগধ সাম্রাজ্যে মৌর্য বংশের শাসন
খৃষ্টপূর্ব ৩২৪ সনে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য গান্ধারার রাজধানী তক্ষশিলার প্রখ্যাত ব্রাহ্মণ চানক্য বা কৌটিল্যের সহযোগিতায় মগধ সাম্রাজ্যের সম্রাট হন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ব্রাহ্মণ্যবাদের শক্ত পুষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি মহিলাদের দ্বারা গঠিত দেহরক্ষী বাহিনী পরিবেষ্টিত থেকে প্রাসাদ অভ্যন্তরে আমোদ প্রমোদে মগ্ন থাকতেন। পূজা ও যজ্ঞের জন্য মাঝেমধ্যে বাইরে আসতেন। চন্দ্র মৌর্যের শাসন কালে ব্রাহ্মণগণ আবার প্রতাপশালী হয়ে ওঠেন। সংস্কৃত ভাষা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। বৌদ্ধবাদ ও অন্যান্য মতবাদগুলোর ওপর দুর্দিন নেমে আসে। খৃষ্টপূর্ব ৩০০ সনে চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র বিন্দুসার মগধ সাম্রাজ্যের সম্রাট হন। তাঁর শাসন কালেও ব্রাহ্মণ্যবাদ সরকারী আনুকূল্য পেতে থাকে।
মগধ সাম্রাজ্যে অশোক মৌর্যের শাসন
খৃষ্টপূর্ব ২৭৩ সনে বিন্দুসারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আশোক মৌর্য মগধ সাম্রাজ্যের সম্রাট হন। এই সময় কলিঙ্গ রাজ্য ছাড়া উপমহাদেশের প্রায় সকল রাজ্যেই সংগে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধে এক লাখ লোক নিহত ও দেড় লাখ লোক বন্দী হয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা অশোক মৌর্যের মনকে দারুণ ভাবে নাড়া দেয়। অচিরেই তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদ ত্যাগ করে বৌদ্ধবাদ গ্রহণ করেন। বৌদ্ধবাদের শান্তি ও অহিংসার বাণী তাঁকে আকৃষ্ট করেছিলো। তিনি এই মতবাদ প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর বলিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধবাদ দৃঢ়মূল হয়। প্রাকৃত ভাষা মর্যাদার আসন লাভ করে। খৃষ্টপূর্ব ২৭৩ সন থেকে ২৩২ সন পর্যন্ত অশোক মৌর্য মগধ সাম্রাজ্য শাসন করেন।
চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ দক্ষিণ-পশ্চিম বংগের তাম্রলিপ্তি, কর্ণসুবর্ণ (বর্ধমান বীরভূম মুর্শিদাবাদ), পুণ্ড্রবর্ধন (উত্তর বংগ), বংগ ও সমতট অঞ্চলে স্থাপিত অশোক স্তুপের কথা উল্লেখ করেছেন। এত্থেকে প্রতীয়মান হয় যে এইসব অঞ্চলে তাঁর শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিলো। এবং সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এই সব অঞ্চলেও বৌদ্ধবাদের প্রসার ঘটেছিলো।
মগধ সাম্রাজ্যের গুপ্ত বংশের শাসন
প্রথম চন্দ্রগুপ্ত গুপ্ত রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। সম্ভবত গুপ্তদের আদি বাসস্থান ছিলো অযোধ্যা ও বেনারসের মধ্যবর্তী স্থান অন্তর্বেদী।
প্রথম চন্দ্রগুপ্ত সম্ভবত খৃষ্ঠীয় চতুর্থ শতাব্দীর প্রথমভাগে রাজ্য শাসন করেন। তাঁর রাজ্য পশ্চিমে প্রয়াগ ও অযোধ্যার দিকে এবং পূর্বে মগধের দিকে কিছু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। তখন লিচ্ছবীগণ পাটলীপুত্র শাসন করতো। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত লিচ্ছবী বংশে বিবাহ করে পাটুলীপুত্রে স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রথম চন্দ্রগুপ্তের পর সম্রাট হন প্রথম সমুদ্রগুপ্ত। আনুমানিক খৃষ্টীয় ৩৫০ সনে তিনি মসনদলাভ করেন। গোটা মগধ, পুণ্ড্রবর্ধন ও বংগ রাজ্য তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। তবে সমতট তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না।
সমতট রাজ্য প্রথম সমুদ্রগুপ্তের সময় একটি স্বাধীন করদরাজ্য ছিলো। খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুতে সম্রাজ বৈন্যগুপ্তের সময় সমতট রাজ্য মগধ সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে।
খৃষ্টীয় ৫০৭ সনের গুনাইগড় লেখ থেকে জানা যায় যে তখন বৈন্যগুপ্ত এই অঞ্চল শাসন করতেন। তিনি ত্রিপুরা জিলায় (বর্তমান বুহত্তর কুমিল্লা জিলা) ভূমিদান ও স্বর্ণমুদ্রা জারি করেন।
প্রথম যুগের গুপ্ত বংশীয় সম্রাটগণ গোঁড়া ব্রাহ্মণ্যবাদী ছিলেন। তাঁদের সময় ব্রাহ্মণগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় ও সেনাবাহিনীতে নতুন মর্যাদা লাভ করেন। পরবর্তী যুগের গুপ্ত বংশীয় সম্রাটগণ বৌদ্ধবাদ ও জৈনবাদের প্রতি উদারতা দেখান। ফলে গুপ্ত যুগের প্রথম ভাগে সাম্রাজ্যে ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রসার ঘটে এবং পরবর্তী ভাবে বৌদ্ধবাদ অস্তিত্ব প্রকাশ করতে সক্ষম হয় তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশের মতো পুণ্ড্রবর্ধন, বংগ ও সমতটেও একই অবস্থা বিরাজ করে।
স্বাধীন বংগ রাজ্য
খৃষ্টীয় ৫০৭ সনের কিছুকাল পর বংগ রাজ্য একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়। এই স্বাধীন রাজ্যের স্থপতি ছিলেন রাজা গোপচন্দ্র। পশ্চিম বংগের অংশ বিশেষও তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিলো। রাজা গোপ চন্দ্র আঠার বছর রাজ্য শাসন করেন। তাঁর পর বংগ রাজ্যের রাজা হন ধর্মাদিত্য।
অতপর সমাচার দেব। তিনি চৌদ্দ বছর রাজ্য শাসন করেন। সমাচার দেব স্বর্ণ মুদ্রা জারি করেন।
ঢাকা জিলার সাভার ও ফরিদপুরের কোটালীপাড়ায় অনেকগুলো নিম্নমানের স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে। এত্থেকে অনুমিত হয় যে, এই অঞ্চলে অন্যান্য রাজাও ছিলেন। তাঁদের মধ্যে পৃথৃবীর ও সুধন্যাদিত্য নাম দুইটির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলেও বিভিন্ন সময় ছোট ছোট রাজাগণ রাজত্ব করতেন তার আভাস পাওয়া যায়।
খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্তদের শাসিত বিশাল মগধ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো ছোট ছোট রাজ্য গড়ে ওঠে। উত্তর ভারতের মধ্যাঞ্চল-রাজপুতানা- পাঞ্জাবের-একাংশের রাজা হন যশোধর্মন। থানেশ্বর রাজ্যে পুষ্যভূতি বংশের রাজত্ব কায়েম হয়। কনৌজ রাজ্যে মৌখরি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বিশাল মগধ সাম্রাজ্য কেবল মগধ ও মালবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ‘পরবর্তী গুপ্ত বংশ’ নামে একটি রাজবংশ মগধ-মালব রাজ্য শাসন করতে থাকে।
স্বাধীন গৌড় রাজ্য
খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পুণ্ড্রবর্ধন ও মগধ রাজ্য গৌড় রাজ্য নামে পরিচিতি লাভ করে।
‘পরবর্তী গুপ্ত বংশের’ শাসনের বিলুপ্তি কালে আনুমানিক খৃষ্টীয় ৬০১ সনে অর্থাৎ খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর সূচনাতে গৌড় রাজ্যের রাজা হন শশাঙ্ক। তাঁর রাজধানী ছিলো কর্ণসুবর্ণ (বর্তমান মুর্শিদাবাদের রাংগামাটির নিকট অবস্থিত কানসোনা)।
তিনি রাঢ় অঞ্চলে তাঁর রাজ্য বর্ধিত করেন। উড়িষ্যার চিলকা হ্রদ পর্যন্ত তাঁর রাজ্য বিস্তৃত ছিলো। বংগ রাজ্য ও সমতট রাজ্য তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলো কিনা, বলা যায় না।
মালব রাজ্য তখন মগধ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হয়েছিলো।
কনৌজ রাজ্যের মৌখরী বংশীয় রাজাগণ ছিলেন বৌদ্ধ। থানেশ্বর রাজ্যের পুষ্যভূতি রাজাগণও ছিলেন বৌদ্ধ। কনৌজের রাজা গ্রহবর্মন থানেশ্বরের রাজা প্রভাকর বর্ধনের কন্যা রাজ্যশ্রীকে বিয়ে করেন। ফলে উভয় রাজ্যই শক্তিশালী হয়।
মালব রাজ্যের রাজা দেবগুপ্ত কনৌজের মৌখরী গণকে ভালে চোখে দেখতেন না। গৌড় রাজ্যের গোঁড়া হিন্দু রাজা শশাঙ্কও কনৌজের মৌখরী গণকে শক্র গণ্য করতেন। ফলে কনৌজ- থানেশ্বর শক্তিকে খর্ব করার জন্য গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক মালবের রাজা দেবগুপ্তের সংগে মৈত্রী গড়ে তোলেন।
থানেশ্বর রাজ প্রভাকর বর্ধনের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই মালব রাজ দেবগুপ্ত কনৌজের ওপর আক্রমণ চালিয়ে গ্রহবর্মনকে নিহত ও রানী রাজ্য শ্রীকে বন্দী করেন। কনৌজ পদানত করে তিনি থানেশ্বরের দিকে অগ্রসর হন। থানেশ্বরের নতুন রাজা রাজ্যবর্ধন তাঁর ভাই হর্ষবর্ধনের হাতে শাসনভার অর্পণ করে নিজে সেনাবাহিনী নিয়ে দেব গুপ্তের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। যুদ্ধে দেবগুপ্ত পরাজিত হন। এবার দেবগুপ্তের মিত্র রাজা শশাঙ্ক তাঁর সেনা বাহিনী নিয়ে রাজ্যবর্ধনের সম্মুখীন হন। এই সময় শশাঙ্ক রাজ্য বর্ধনের নিকট আপন কন্যা বিবাহ দেবেন ও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করবেন আশ্বাস দিয়ে রাজ্য বর্ধনকে তাঁর শিবিরে আমন্ত্রণ জানান। রাজ্য বর্ধন যখন খাবার খাচ্ছিলেন তখন তাঁর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। রাজ্য বর্ধনের হত্যার পর রাজা শশাঙ্ক অপ্রতিদ্বন্দ্ব শাসক হয়ে ওঠেন। অবশ্য থানেম্বর রাজ্যের এই দুর্দিনে কামরূপ (আসাম) রাজ ভাস্করবর্মন থানেশ্বরে নতুন রাজা হর্ষ বর্ধনের সাথে মৈত্রী চুক্তি করেন। এতে রাজা শশাঙ্ক দ্রুত কনৌজ ত্যাগ করে গৌড়ে ফিরে আসেন।
রাজা শশাঙ্কের বৌদ্ধ পীড়ন
উত্তর ভারতের বৌদ্ধ রাজাগণ হীনবল হয়ে পড়লে রাজা শশাঙ্ক ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রসার ঘটানোর প্রচেষ্টা চালান। তিনি বৌদ্ধবাদের ওপর অত্যাচার করেন। তিনি বৌদ্ধদেরকে হত্যা করার জন্য সরকারী কর্মচারিদের প্রতি নির্দেশ জারি করেন।
শশাঙ্কের নির্দেশে গয়াতে অবস্থিত বৌদ্ধদের বোধিবৃক্ষ কেটে ফেলা হয়। বহু বৌদ্ধ নিদর্শন ভেংগে ফেলা হয়, নদীতে নিক্ষেপ করা হয় কিংবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।
খৃষ্টীয় ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীতে বংগ দেশ ও কামরূপে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিলো। সমাজের উচ্চশ্রেণীর লোকেরা এর পৃষ্ঠপোষকতা করতো। তবুও হিউয়েন সাঙের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে তখন বংগ রাজ্যের সর্বত্র বৌদ্ধবাদেরও যথেষ্ট প্রভাব ছিলো।
সম্ভবত খৃষ্টীয় ৬৩৭ সনে শশাঙ্কের মৃত্যু হয়। খৃষ্টীয় ৬৩৮ সনে চীনা পর্যটন হিউয়েন সাঙ এই অঞ্চল সফরে আসেন। হিউয়েন সাঙ এই অঞ্চলে তখন নিম্নোক্ত পাঁচটি রাজ্য দেখেনঃ কজঙ্গল (রাজমহল), পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপ্তি।
আনুমানিক খৃষ্টীয় ৬৪১ সনে থানেম্বর-কনৌজের অধিপতি হর্ষবর্ধন মগধ রাজ্য জয় করেন। খৃষ্টীয় ৬৪২ সনে তিনি কজঙ্গল (রাজমহল) রাজ্যে অবস্থান করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
হর্ষবর্ধনের মিত্র কামরূপ রাজ ভাস্করবর্মন কর্ণসুবর্ণ রাজ্য আপন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
উল্লেখ্য যে শশাঙ্ক যখন গৌড় রাজ্যের ও হর্ষবর্ধন থানেশ্বর- কনৌজের অধিপতি তখন অর্থাৎ খৃষ্টীয় ৬১০ সনে আরব উপদ্বীপে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) ইসলামী জীবন দর্শন প্রচার শুরু করেন। খৃষ্টীয় ৬২২ সনে তিনি ইয়াসরিবে, যা পরে মদীনা নামে পরিচিত হয়- ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করেন।
বংগ রাজ্যে ভদ্র বংশের শাসন
খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথমার্ধের কোন একসময়ে বংগ রাজ্যে (ঢাকা- ফরিদপুর-যশোর) ভদ্রবংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ভদ্র রাজাগণ ছিলেন ব্রাহ্মণ। ফলে স্বভাবতই বংগ রাজ্যে তখন ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রসার ঘটে।
সমতট রাজ্যে খড়গ বংশের শাসন
খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে সমতট রাজ্যে খড়গ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। খড়গ রাজাগণ ভদ্র বংশের উচ্ছেদ সাধন করে ছিলেন। তাই মেনে নিতে হয় যে বংগ রাজ্যও তাদের দখলে আসে। ঢাকা জিলার আফরাফপুরে প্রাপ্ত তাম্রশাসন ও কুমিল্লা জিলার দেউলবাড়িতে প্রাপ্ত একটি মূর্তি লিপি থেকে খড়গোদ্যম, জাত খড়গ ও দেব খড়গ নামক তিন রাজার কথা জানা গেছে। খড়গ রাজাদের রাজধানী ছিলো কর্মান্ত বাসক। কুমিল্লা জিলার বড়কামতাই সম্ভবত সেই কর্মান্তবাসক। খড়গ রাজাগণ বৌদ্ধ ছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা বৌদ্ধবাদের পৃষ্ঠ পোষকতা করেন।
সমতট রাজ্যে দেব বংশের শাসন
খৃষ্টীয় অষ্টম শতকের প্রথমভাবে এই অঞ্চলে দেব বংশের রাজত্ব কায়েম হয়। শ্রী শান্তিদেব, শ্রী বীরদেব, শ্রী আনন্দ দেব ও শ্রী ভবদেব এই রাজ্যে শাসন করেন। তাঁদের রাজধানী ছিলো দেব পর্বত। সম্ভবত কুমিল্লা জিলার লালমাই পাহাড়ে এটি অবস্থিত ছিলো।
গৌড় রাজ্যে পাল বংশের শাসন
খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে পুরাতন গৌড় রাজ্যে ভগ্ন স্তূপের ওপর একটি সুশৃংখল রাজ্য গড়ে তোলার জন্য নেতৃস্থানীয় লোকেরা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁরা বরেন্দ্র ভূমির (পুণ্ড্রবর্ধন) বপ্যট নামক এক ব্যক্তির সুযোগ্য সন্তান গোপালকে রাজা নির্বাচিত করেন। সম্ভবত খৃষ্টীয় ৭৫০ সনে গোপাল গৌড়ের রাজা হন। খৃষ্টীয় ৭৭৫ সনে ধর্মপাল গৌড়ের রাজা হন। তিনি কনৌজে কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। তাঁর রাজ্যভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন গান্ধারা (পশ্চিম পাঞ্জাব), মদ্র (মধ্য পাঞ্জাব), কীর (কাংড়া), কুরু (থানেশ্বর), মৎস্য (জয়পুর) অবন্তি (মালব), যবন (সিনধের মুসলিম রাজ্য), যদু (পাঞ্জাবের সিংহপুর) ও ভোজ (বেরার) এর রাজাগণ।
পাল বংশীয় রাজাগণ চারশত বছর রাজ্য শাসন করেন। কালক্রমে তাঁদের প্রতিপত্তি কমে আসে এবং রাজ্য সীমা সংকুচিত হয়। ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রবল চাপে অন্যান্য রাজ্যে বৌদ্ধবাদ কোনঠাসা হয়ে পড়ে। পাল রাজাগণ সকলেই ছিলেন বৌদ্ধ। আর তাঁদের শাসিত রাজ্যই ছিলো বৌদ্ধবাদের শেষ আশ্রয়স্থল।
উল্লেখ্য যে মহাযানপন্হী বৌদ্ধগণ বৌদ্ধবাদকে অনেকাংশে পরিবর্তিত করে ফেলেন। বুদ্ধের মতবাদে কোন দেবতা বা উপদেবতার স্থান ছিল না। কিন্তু মহাযানপন্হী বৌদ্ধগণ বুদ্ধকেই দেবতা বানিয়ে ফেলেন। ফলে বৌদ্ধবাদেও পূজা আর্চনা স্থান লাভ করে। পাল রাজাদের আমলে পুণ্ড্রবর্ধনে এই পরিবর্তিত বৌদ্ধবাদই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
পাল আমলে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটে। মাগধী প্রাকৃত ভাষার গৌড়-বংগীয় রূপই এই ভাষার আদিরূপ। বৌদ্ধ প্রচারকগণই প্রথম এই ভাষায় তাঁদের পদ রচনা করেন। কয়েক শতাব্দী ধরে বৌদ্ধ কবিগণ এই সাহিত্য ধারা অনুসরণ করেন। তাঁদের রচিত পদ সংকলন, চর্যাপদ, প্রাচীনতম বাংলা ভাসার নিদর্শন।
সমতট রাজ্যে চন্দ্র বংশের শাসন
খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীর শুরু থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত সমতট (দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায়) চন্দ্র বংশীয় রাজাদের রাজত্ব কায়েম ছিল।
চন্দ্র বংশের প্রথম ভূপতি পূর্ণ চন্দ্র রোহিত গিরির (সম্ভবত কুমিল্লা জিলার লালমাই অঞ্চলের) ভূ-স্বামী ছিলেন। তাঁর পুত্র সুবর্ণ চন্দ্রও তা-ই ছিলেন। তাঁর পুত্র ত্রৈলোক্যচন্দ্র হরিকেলের রাজার অধীনে একজন সামন্ত রাজা ছিলেন।
তৈলোক্যচন্দ্র প্রথমে চন্দ্রদ্বীপে (বরিশাল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে) স্বাধীন রাজ্য কায়েম করেন। পরে তিনি সমতট জয় করেন।
ত্রৈলোক্যচন্দ্র আনুমানিক খৃষ্টীয় ৯০০ সন থেকে ৯৩০ সন পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন। তাঁর পর তাঁর পুত্র শ্রী চন্দ্র রাজা হন। খৃষ্টীয় ৯৭৫ সন পর্যন্ত তিনি রাজ্য শাসন করেন। তিনি বিক্রমপুরে রাজধানী স্থাপন করেন। এত্থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে বংগ রাজ্য তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিলো। তিনি সিলেট জয় করেন।
শ্রীচন্দ্র যখন সমতট-বংগের রাজা তখন কাম্বোজদের আক্রমণে গৌড়ের পাল বংশীয় রাজা দ্বিতীয় গোপাল গৌড় থেকে বিতাড়িত হন। ম্রীচন্দ্র তাঁর সাহায্যে এগিয়ে যান। তাঁর সাহায্যে দ্বিতীয় গোপাল গৌড়ে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হন। অতপর কল্যাণ চন্দ্র, লডহ চন্দ্র ও গোবিন্দ চন্দ্র রাজ্য শাসন করেন। গোবিন্দ চন্দ্রই চন্দ্র বংশের শেষ রাজা। ভূ-স্বামী সুবর্ণ চন্দ্র থেকে শুরু করে গোবিন্দ চন্দ্র পর্যন্ত এই বংশের সকল রাজা বৌদ্ধ ছিলেন। গৌড়ের বৌদ্ধ পাল বংশীয় রাজাদের সাথে তাঁদের সু সম্পর্ক ছিলো।
চন্দ্র বংশীয় রাজাদের শাসন কালে সমতট ও বংগ রাজ্যে বৌদ্ধবাদ দৃঢ়মূল হয়।
খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সম্ভবত বংগরাজ্য ও সমতটে গৌড়ের পাল রাজাদের প্রত্যক্ষ শাসন সম্প্রসারিত হয়।
সমতট রাজ্যে বর্মন বংশের শাসন
খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর শেষভাগে গৌড় রাজ্যের বরেন্দ্র অঞ্চলে সমান্ত্র বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই বিশৃংখলার সুযোগে সমতটে ও বংগ রাজ্যে বর্মন বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জাত বর্মন, হরিবর্মন, সামল বর্মন ও ভোজ বর্মন এই রাজ্য শাসন করেন। সামল বর্মন একটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে তাঁর রাজ্যে এনে প্রতিষ্ঠিত করেন। ভোগ বর্মনের রাজধানী ছিলো বিক্রমপুর। সামগ্রিকভাবে বর্মন বংশীয় রাজাগণ বৌদ্ধদেরকে ঘৃণার চোখে দেখতেন।
গৌড় রাজ্যে সেন বংশের শাসন
খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর শেষভাগে বরেন্দ্র অঞ্চলে গৌড়ের বৌদ্ধ পাল শাসনের বিরুদ্ধে সামন্ত বিদ্রোহ দেখা দেয়। এই সময় গৌড়ের রাজা ছিলেন মদন পাল। বিশৃংখল পরিস্থিতির সুযোগে বিজয় সেন নামক একব্যক্তি বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে পাল শাসন এবং বংগও সমতট রাজ্য থেকে বর্মন শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেন বংশের শাসন কায়েম করেন।
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট ছিলো সেনদের আদি বাসস্থান। এই বংশের পূর্ব পুরুষগণ ব্রাহ্মণ ছিলেন। পরে তাঁরা ক্ষত্রিয় হন।
সামন্ত সেন কর্ণাট থেকে রাঢ়ে এসে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর পুত্র হেমন্ত সেন রাঢ় অঞ্চলে গৌড়ের পাল রাজাদের সামন্ত ছিলেন। তাঁর পুত্র বিজয় সেন স্বাধীন রাজা হন। তিনি আনুমানিক খৃষ্টীয় ১০৯৮ সন থেকে ১১৬০ সন পর্যন্ত রাঢ়ের রাজা ছিলেন। প্রথমে রাঢ় অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হলেও পরে তিনি উত্তর বংগ জয় করেন। অতপর বংগ-সমতটের বর্মন বংশীয় রাজাকে পরাজিত করে এই অঞ্চল দখল করেন। সেই সময় পাল বংশের শাসন কেবলমাত্র মগধেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
বিজয় সেন যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রাহ্মণগণ বিত্তশালী ও প্রতাপশালী হয়ে ওঠেন।
খৃষ্টীয় ১১৬০ সনে তাঁর পুত্র বল্লাল সেন গৌড় রাজ্যের রাজা হন। তিনি কুলীন প্রথা প্রবর্তন করেন। সমাজে কুলীনদের বিশেষ মর্যাদা স্বীকৃত হয়।
খৃষ্টীয় ১১৭৯ সনে তাঁর পুত্র লক্ষণ সেন গৌড় রাজ্যের রাজা হন। তিনি গৌড়েশ্বর উপাধি ধারণ করেন। গৌড় রাজ্য তখন লক্ষণাবতী নামেও পরিচিত হন।
সেন রাজাদের শাসন কালের বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করেছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সুনীল চট্টোপাধ্যায়। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নামক গ্রন্হে তিনি লিখেছেন: “সেন রাজাদের সময় বৌদ্ধ ধর্মের অস্তিত্ব ছিলো। লক্ষণ সেনের তর্পণদীঘি লেখতে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু সেন রাজাদের বিস্তৃত দান তালিকায় বৌদ্ধদের জন্য দানের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। সুতরাং বলা যায় যে পাল রাজাদের ধর্ম বিষয়ে যে উদারতা ছিলো, সেন রাজাদের তা ছিলো না। তাঁরা পাল যুগের গতি-প্রকৃতি এবং আদর্শকে বর্জন করে বৈদিক, স্মার্ত ও পৌরণিক যুগের পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন ধর্ম ও আদর্শের সমন্বয়ের কথা ভাবেন নি, একমাত্র ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সমাজদর্শনকেই মনে প্রাণে গ্রহণ করেছিলেন।
এর ফল যা হওয়ার তাই হয়েছিলো। ব্রাহ্মণগণ সমাজের উচ্চ চূড়ায় আরোহন করেছিলেন। কিন্তু সমাজের অন্যান্য স্তর থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন”। ২/৩১৬
“অধ্যয়ন, অধ্যাপনা এবং ধর্মকর্ম ব্রাহ্মণদের প্রধান বৃত্তি ছিলো। তাঁদের মধ্যে অনেকে রাষ্ট্র ও অভিজাত শ্রেণীর আনুকূলে প্রচুর অর্থ ও জমির মালিক হয়েছিলেন। অনেকে প্রত্যক্ষভাবে রাজকার্যে অংশ নিতেন। তাঁরা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতেন এমন প্রমাণও আছে। তাঁদের জন্য কৃষি বৃত্তিও নিষিদ্ধ ছিলো না। অথচ শূদ্রদের অধ্যাপনা, তাঁদের পুজানুষ্ঠানে পৌরহিত্য এবং চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিত্রশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পচর্চা নিষিদ্ধ হয়েছিলো। এ থেকে শূদ্রদের সম্পর্কে এবং তাঁদের নিজস্ব জীবন বোধ সম্পর্কে সংকীর্ণতার পরিচয় পাওয়া যায়”।২/৩১৬
“সমাজের এক দিকে ছিলেন মুষ্টিমেয় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়, অন্য দিকে অন্ত্যজ স্নেচ্ছ সম্প্রদায়, আর মধ্য স্থলে বৃহৎ শূদ্র সম্প্রদায়। বলা বাহুল্য এই ব্যবস্থা সমাজ স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল ছিলো না”। ২/৩১৭
“এই যুগেই বাঙলায় আধ্যাত্ম সাধনার ক্ষেত্রে ভাগবত ধর্মী ও সহজযানী আবির্ভাব ঘটেছিলো, যাঁরা তুচ্ছ জাত-পাতের উর্ধে উঠে মানুষের অন্তর্নিহিত ঐক্যের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁদের চিন্তা ও সাধনা ব্যক্তি জীবনকে প্রভাবিত করলেও, তৎকালীন সমাজ জীবন ও রাজনীতিকে করেনি”। ২/৩১৭
“তখন যাঁরা শহরে বাস করতেন তাঁদের স্বভাবে সংযমের অভাব ছিলো। পবনদূত ও রামচরিত কাব্য দুইটি সভা নন্দিনীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেশব সেনের ইদিলপুর লেখ এবং বিশ্বরূপ সেনের সাহিত্য পরিষদ লেখ থেকে জানা যায় যে প্রতি সন্ধায় তাদের নুপুর নিক্কনে সভা ও প্রমোদাগারগুলি মুখরিত হতো। জীমুত বাহনের ‘দায়ভাগ’ নামক গ্রন্হে আছে যে গ্রাম ও শহরে যাঁরা ধনী তাঁরা দাসী রাখতেন এবং তার উদ্দেশ্যে খুব সাধু ছিল না। অস্থাবর সম্পত্তির মতো তাদের কেনা-বেচা হতো। তার ওপর দেব-দাসী প্রথা ছিলো। পাল আমলে এই প্রথা খুব ব্যাপক ছিলো না। কিন্তু সেন আমলে, দক্ষিণা প্রভাবে এই প্রথা ব্যাপক আকার ধারণ করেছিলো”। ২/৩১৯,৩২০
“গরীব মানুষের নিরানন্দ জীবনে ধনীগৃহের ব্রত পার্বন, পূজা উৎসবই ছিলো একমাত্র আনন্দ। দরিদ্রতর শ্রেণীর মানুষ নিজেদের মধ্যে নৃত্য-গীতের মাধ্যমে দুঃখ কষ্ট ভুলতে চাইতো।… চুরি ডাকাতির ভয় ছিলো। ঘরে তালা দিতে হতো। প্রহরীর প্রয়োজন ছিলো। পূর্বে যেই যৌতুকের কথা বলা হয়েছে, তার লোভে অনেকে সময় উচ্চবর্ণের পুরুষ নিম্ন বর্ণের কন্যাকে বিবাহ করতো। অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষ গ্রামের বাইরে বাস করতো। উচ্চ বর্ণের মানুষের সঙ্গে তাদের ছোঁয়াছুঁয়ি ছিলোনা”। ২/৩২০
“পাল রাজাদের সময় বৌদ্ধধর্ম বিশেষ প্রাধান্য অর্জন করেছিলো। আবার সেন রাজাদের সময় ব্রাহ্মণ্যধর্ম বড় হয়ে দেখা দিয়েছিলো। পাল রাজাদের সময় বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি জৈনধর্ম ও ব্রাহ্মণ্য ধর্ম স্বমহিমায় বিরাজ করতো। কিন্তু সেন আমলে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অপ্রতিহত প্রভাবে অন্যান্য ধর্ম ম্রিয়মান হয়ে পড়েছিলো”।২/৩২৭
“তাঁদের (সেন রাজাদের) সময় বাঙলায় সংস্কৃত সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি ঘটেছিলো”। ২/৩০৬
“তাঁরা হিন্দু সংস্কৃতিতে নূতন প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন”। ২/৩০৬
সেন শাসিত গৌড় রাজ্যের তিনটি রাজধানী ছিলোঃ নদীয়া (নবদ্বীপ), গৌড় ও বিক্রমপুর। খৃষ্টীয় ১২০৩ সনের তুর্ক মুসলিম ইখতিয়ারউদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খালজী একদল অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে নদীয়া এসে পৌঁছেন। তাঁর আগমন সংবাদ শুনে রাজ প্রাসাদের পেছন দরওয়াজা দিয়ে খালি পায়ে লক্ষণ সেন পালিয়ে যান। তিনি নদীপথে বিক্রমপুর এসে পৌঁছেন। ইখতিয়ারউদ্দীন মুহাম্মদ বাখতিয়ার খলজী অতপর গৌড় জয় করেন।
আনুমানিক খৃষ্টীয় ১২০৫ সনে লক্ষণ সেনের মৃত্যু হয়। তাঁর পর বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন বিক্রমপুর কেন্দ্রিক বংগ-সমতট রাজ্য শাসন করেন।
খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিক্রমপুরে সেন শাসনের অবসান ঘটে। দেব রাজবংশ নামে একটি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। আদাবাড়ি তাম্র শাসনে এই বংশের দশরথ দেব নামক একজন রাজার উল্লেখ পাওয়া যায়।
এই দেব বংশই বংগ-সমতট রাজ্যের শেষ হিন্দুরাজ বংশ।
তথ্যসূত্র
১. প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড সুনীল চট্টোপাধ্যায়
২. বাংলাদেশের ইতিহাস, ডঃ মুহাম্মদ আবদুর রহীম প্রমুখ
৩. বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ড. এম. রহীম
৪. হিষ্ট্রি অব দ্যা মুসরিম অব বেংগল, ড. মুহাম্মদ মোহর আলী
৫. ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস, এ.কে.এম. আবদুল আলীম।