জাকাত-সাদাকা-ফিতরা তহবিল

ইসলামে ইমান এবং সালাতের পরই জাকাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে সালাতের পাশাপাশি জাকাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে। বস্তুত, জাকাত প্রদান দাতার মনকে ধনসম্পদের প্রতি লোভ থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে। উপরন্তু, ধনীদের ধনসম্পদে গরিব-মিসকিনদের অধিকার রয়েছে—এই সত্যকেও তা প্রতিষ্ঠিত করে।

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللَّهِ.

‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং জাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। (আল-কুরআন, সূরা বাকারা : ০২ : ১১০)

হাদিসে এসেছে,

مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ.

‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর স্বর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ঐ ধন, আমিই তোমরা পুঞ্জিভূত সম্পদ।’ (সহীহ বুখারি : 1403)

ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হচ্ছে সদকা। দান-সদকায় মনে শান্তি আসে। দানে বিভিন্ন বালা-মুসিবত থেকে মহান রব আমাদের হিফাজত করেন। দান করলে ধন বেড়ে যায়, কমে না। তাই দানের হাত প্রসারিত করলে গরিব-দুঃখীসহ অনেকের উপকার হয়। মহান রব বলেন,

إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ.

‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরো বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’ (আল-কুরআন, সূরা বাকারা : ০২ : ২৭১)

হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.

‘যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ব্যতীত- সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান অথবা সৎকর্মশীল সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম : ১৬৩১)

রমজান, রোজা ও ঈদের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়াজিব ইবাদত সদকাতুল ফিতর। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে দিতে হয়। যিনি ঈদের দিন সকালবেলায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব। একে অন্যের ফিতরা আদায় করতে পারেন।

বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করেন। আমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্যবান, তারা যদি জাকাত, সদকা ও ফিতরা আদায়ে এগিয়ে আসি, একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা জাকাতের প্রকৃত হকদার ব্যক্তিদের নিকট আর্থিক সহায়তা পৌঁছিয়ে থাকি। আপনার জাকাত সদকা কিংবা ফিতরার অর্থ অভাবী ও দরিদ্র মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে আমাদের রয়েছে জাকাত-সদকা ও ফিতরা তহবিল। সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে নির্দিষ্ট ফান্ডে ব্যয় করতে আমরা বদ্ধপরিকর।

error: Content is protected !!