হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতৃহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে তার পরমপ্রিয় মা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তিনি তার দাদা ও চাচার অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَى.
‘তিনি কি আপনাকে ইয়তিমরূপে পাননি? অতঃপর দিয়েছেন আশ্রয়।’ (আল-কুরআন, সূরা আদ-দোহা : ৯৩ : ৬)
বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতার শূন্যতা কতটা বেদনাদায়ক নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শতভাগ উপলব্ধি করেছেন। তার জীবনচরিতে দেখা যায়, এ উপলব্ধি থেকে তিনি ইয়তিমদের অত্যধিক স্নেহ করতেন, আদর-মমতায় জড়িয়ে নিতেন।
ইয়তিম প্রতিপালন ইসলামের অন্যতম আদর্শ ও শিক্ষা। এর অভাবনীয় মর্যাদা ও ফজিলত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
وَأَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا.
‘আমি ও ইয়তিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব’ বলে তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মধ্যে একটু ফাঁক করেন।’ (সহিহ বুখারি : ৫৩০৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
السَّاعِي عَلَى الْأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِينِ، كَالْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ – وَأَحْسِبُهُ قَالَ – وَكَالْقَائِمِ لَا يَفْتُرُ، وَكَالصَّائِمِ لَا يُفْطِرُ.
‘বিধবা, ইয়তিম ও গরিবের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে সংগ্রামকারীর সমতুল্য বা তার মর্যাদা রাতভর জাগ্রত থেকে নামাজ আদায়কারীর মতো, যে কখনো ক্লান্ত হয় না। অথবা তার মর্যাদা সেই রোজাদারের মতো, যে কখনো ইফতার (রোজা ভঙ্গ) করে না।’ (সহিহ মুসলিম : ২৯৮২)
ইয়তিমদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে অন্তর কোমল হয়, আত্মার প্রশান্তি লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তার কঠিন হৃদয়ের ব্যাপারে অভিযোগ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
امْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيمِ، وَأَطْعِمِ الْمِسْكِينَ.
‘ইয়াতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও (ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় কাছে টেনে নাও) এবং অভাবীকে আহার দাও।’ (মুসনাদ আহমাদ: ৯০১৮)
আমাদের দেশে অসংখ্য শিশু-কিশোর রয়েছে, যারা ইয়তিম ও নিঃস্ব। অভিভাবকত্বের অভাবে তারা নিত্যদিন জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধমূলক কার্যক্রমে। তাদের ফিরিয়ে আনা আমাদেরই কর্তব্য। সুস্থ একটি দেশ গড়তে আসুন আমরা এগিয়ে আসি। আসুন ইয়াতিম লালনপালন ফান্ডে মুক্তহস্তে দান করি। আপনার অর্থকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে নির্দিষ্ট ফান্ডে ব্যয় করতে আমরা বদ্ধপরিকর।