০১. অপরাধ
ধারা-১ ‘অপরাধ’
‘অপরাধ’ বলতে শরীআতের এমন আদেশ ও নিষেধ বুঝায় যা লঙ্ঘন করলে হদ্দ অথবা তাযীর প্ৰযোজ্য হয়।’[1]
বিশ্লেষণ
‘শরীআতের আদেশ ও নিষেধ লংঘন’ বলতে বুঝায় এমন কাজে লিপ্ত হওয়া যা করতে শরীআতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এমন কাজ ত্যাগ করা যা করতে শরীআতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
অতএব এমন প্রতিটি কাজে লিপ্ত হওয়াই অপরাধ-শরীআত যা নিষেধ করেছে এবং নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তাতে লিপ্ত হলে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অনুরূপভাবে এমন প্রতিটি কাজ না করা অপরাধ-শরীআত যা করতে নির্দেশ দিয়েছে এবং না করলে শাস্তিযোগ্য ঘোষণা করেছে।[2]
ধারা-২ অপরাধের উপাদানসমূহ
কোন কর্ম বা কর্মবিরতিকে অপরাধ গণ্য করার জন্য তার মধ্যে নিম্নবর্ণিত উপাদানসমূহ বিদ্যমান থাকতে হবে–
(ক) কোন কর্ম করলে অথবা না করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হওয়ার জন্য তার সমর্থনে নস বিদ্যমান থাকতে হবে;
(খ) যে কর্মটি করলে অথবা না করলে অপরাধ হয় তা বাস্তবে সংঘটিত হতে হবে;
(গ) অপরাধীকে বলেগ ও বুদ্ধিমান হতে হবে: তবে শর্ত হল, অমুসলিমদের ক্ষেত্রে, তাদের ধর্মমতে যে কর্মটি বৈধ তা ইসলাম ধর্মমতে নিষিদ্ধ হলেও উক্ত কর্মটি অপরাধকর্ম হিসাবে গণ্য হবে না;
আরো শর্ত হল, সামাজিক শৃংখলা ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাড়ালে তার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যাবে।
আরও শর্ত হল, তাযীরের আওতায় শান্তি প্ৰদানের জন্য অপরাধীর বালেগ হওয়া শর্ত নয়, বুদ্ধিমান হওয়াই যথেষ্ট।
বিশ্লেষণ
ইসলামী আইনে কোন কর্মকে বা কর্মবিরতিকে শাস্তিযোগ্য গণ্য করার জন্য তার সমর্থনে নস (কুরআন-হাদীসের উদৃতি) বিদ্যমান থাকতে হবে যা সংশ্লিষ্ট কাজটি করতে নির্দেশ প্রদান করে অথবা নিষেধ করে। যেমন কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তা’আলা আমানত প্ৰত্যাৰ্পণ সম্পর্কে বলেন,
{ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا }
‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার প্রাপককে প্রত্যাৰ্পণ করতে’ (সূরা নিসা: ০৪ : ৫৮) ।
উক্ত আয়াতে আমানত ফেরতদানের কর্মটি সম্পাদন করার জন্যে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উক্ত কাজটি না করলে তা তার জন্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। মানবজীবনের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
{وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ }
‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না’ (সূরা বনী ইসরাঈল: ১৭ : ৩৩) ।
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মানব হত্যা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং কর্মবিরতিকে বাধ্যতামূলক করেছেন। কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে হত্যা করলে তার সেই কর্মটি উপরোক্ত নস অনুযায়ী অপরাধকর্ম হিসাবে গণ্য হবে।
কোন কর্মের বাস্তব সংঘটনই তাকে অপরাধকৰ্মে পরিণত করে। অর্থাৎ যে কর্মটি করতে নির্দেশ প্ৰদান করা হয়েছে তা বর্জন করলে অথবা যে কর্মটি না করতে নির্দেশ প্ৰদান করা হয়েছে তা করলেই উক্ত বর্জন বা সম্পাদন ক্রিয়াটি অপরাধকর্ম হিসাবে গণ্য হবে। বাস্তবে সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত কোন কর্মের জন্য কাওকেও দায়ী করা যায় না।
যে কর্মটি করলে অথবা না করলে অপরাধ হয়; সেই কর্মের কর্তার অবশ্যই বালেগ ও বুদ্ধিমান হওয়া আবশ্যক। কারণ, নাবালেগ অথবা পাগলকে কোন কর্মের জন্য দায়ী করা যায় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ، وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ.
‘তিন ব্যক্তি শরীআতের বিধান বহির্ভূত: ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্ৰত না হওয়া পর্যন্ত, শিশু বালেগ না হওয়া পর্যন্ত এবং পাগল সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত।’[3]
মস্তিক বিকৃতির কারণে যার ভালোমন্দ পার্থক্য করার এবং নিজের কাজের পরিণতি অনুধাবন করার শক্তি লোপ পেয়েছে তাকে পাগল বলে, তা জন্মগত হোক অথবা অন্য কোন কারণে হোক।[4]
ইসলামী আইনতত্ত্বের (উসূলুল ফিকহ) পরিভাষায় ‘বালেগ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিকেই মুকাল্পাফ বলে।’[5] তবে অপরাধীর উপর শাস্তি কার্যকর করার জন্য তার মুসলমান হওয়া সকল ক্ষেত্রে শর্ত নয়। অমুসলিম ব্যক্তিও অপরাধ কর্ম করলে শাস্তিযোগ্য হবে। অবশ্য এই বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ আছে। ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্ৰদান করা যাবে না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا يُقْتَلُ مُسْلِمٌ بِكَافِرٍ!
‘সাবধান! কোন কাফেরের পরিবর্তে কোন মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না।’ মুসনাদে আহমাদ: ৫৯৯, ৬৬৬২ , ৬৬৯০, ৬৭৯৬, সহিহ বুখারী: ১১১, ৩০৪৭ , ৬৯০৩, ৬৯১৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৬৫৮, ২৬৫৯, সুনানুত তিরমিযি: ১৪১৩
অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে তাযীর প্রযোজ্য হবে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কোন মুসলিম নাগরিক অমুসলিম (যিমী) নাগরিককে হত্যা করলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে। তিনি সূরা বাকারার ১৭৮ নং আয়াত নিজের মতের সমর্থনে নস হিসাবে পেশ করেন। তাঁর মতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীতে কাফের বলতে ভিন্ন রাষ্ট্রের সেই অমুসলিম ব্যক্তিকে বুঝায় যে সংশ্লিষ্ট মুসলিম রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি সংগ্ৰহ না করে উক্ত রাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। আধুনিক কালের পরিভাষায় অমুসলিম রাষ্ট্রের যে অমুসলিম নাগরিক পাসপোর্ট ও ভিসা সংগ্ৰহ না করে অবৈধভাবে ইসলামী রাষ্ট্রে প্ৰবেশ করেছে এখানে ‘কাফের’ বলতে তাকে বুঝানো হয়েছে। এইরূপে অবৈধভাবে প্ৰবেশকারী অমুসলিম ব্যক্তিকে কোন মুসলিম ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে সে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে ভিন্নতর শাস্তি ভোগ করবে।
অনুরূপভাবে বিবাহিত অমুসলিম ব্যক্তি যিনায় লিপ্ত হলে ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে তার উপর রজম কার্যকর হবে না (বরং সে ভিন্নতর শাস্তি ভোগ করবে) । কিন্তু ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদের মতে তার উপর রজম কার্যকর হবে। ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে কোন ব্যক্তির মুহসান হওয়ার জন্য বিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে মুসলিম হওয়াও শর্ত, কিন্তু অপর তিন ইমামের মতে মুসলিম হওয়া শর্ত নয়, বিবাহিত হওয়াই যথেষ্ট।
অনুরূপভাবে যিনার অপবাদ (কাযাফ) আরোপের ক্ষেত্রেও মুসলিম ও অমুসলিমের শাস্তির মধ্যে পার্থক্য আছে। কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তিয় প্ৰতি যিনার অপবাদ আরোপের অপরাধ করলে সে আশি বেত্ৰাঘাত শাস্তি ভোগ করবে। কিন্তু কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম ব্যক্তির প্রতি যিনার অপবাদ আরোপ করলে সে কাযাফ-এর জন্য নির্ধারিত শাস্তি ভোগ না করে তাযীরের আওতায় শান্তিযোগ্য। হবে, তা ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর অভিমত। কিন্তু ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে এক্ষেত্রে কাযাফ-এর শাস্তি কার্যকর হবে। ফকীহগণের মধ্যে নস-এর ব্যাখ্যায় মতভেদ হওয়ার কারণে এই পার্থক্য হয়েছে।
সাধারণভাবে যেসব অপরাধের ক্ষেত্রে শরীআত মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট কোন কর্ম বা কর্মবিরতি মুসলিম ব্যক্তির জন্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হলেও অমুসলিম ব্যক্তির জন্য অপরাধ নয়, তা সম্পূর্ণ বিশ্বাসভিত্তিক হতে হবে।
এমন কোন কাজ যা ইসলাম ধর্মমতে নিষিদ্ধ কিন্তু অমুসলিমদের ধর্মমতে নিষিদ্ধ নয়, সেই ক্ষেত্রে মুসলিম ব্যক্তি উক্ত কর্মে লিপ্ত হলে তা তার ক্ষেত্রে অপরাধ হিসাবে পণ্য হবে কিন্তু অমুসলিম ব্যক্তি তাতে লিপ্ত হলে সে অপরাধী গণ্য হবে না। যেমন ইসলাম ধর্মমতে মদ্যপান ও শূকরের পোশত ভক্ষণ হারাম, কিন্তু খৃস্টান ও হিন্দু ধর্মমতে তা তাদের জন্য বৈধ।
যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إذ الخمر لهم كالخل لنا، والخنزير لهم كالشاة لنا.
‘তাদের জন্য শূকর বৈধ, যেমন আমাদের জন্য ছাগল। তাদের জন্য মদ বৈধ যেমন আমাদের জন্য শরবত।’
তবে এই জাতীয় কোন বিষয় সমাজ ও নৈতিকতার জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হলে, সরকার তার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পরবে। যেমন অমুসলিম ব্যক্তি মদপান করে প্ৰকাশ্য রাস্তায় মাতলামি করলে তার এই কর্ম অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে, রমযান মাসে দিনের বেলায় প্রকাশ্য জনসমক্ষে পানাহার করা মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু, উক্ত পানাহার অপ্রকাশ্যেও মুসলিম ব্যক্তির জন্য নিষিদ্ধ হলেও অমুসলিম ব্যক্তির জন্য নিষিদ্ধ নয়। অতএব মুসলিম ব্যক্তির গোপনে পানাহার অপরাধ হিসেবে গণ্য হলেও অমুসলিম ব্যক্তির গোপন পানাহার অপরাধী নয়।
ইসলামী আইনের প্রধান লক্ষ্য হলো, ন্যায়-ইনসাফ ও সমতা প্ৰতিষ্ঠা করা। ইসলামী রাষ্ট্র অমুসলিমদেরকে তার নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও তদনুযায়ী কর্ম সম্পাদনের অধিকারও স্বীকার করেনিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর হস্তক্ষেপ করা হলে আইনের লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
কুরআন মজীদে বলা হয়েছে,
{لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ}
‘দীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নেই’ (সূরা বাকারা: ০২ : ২৫৬) ।
হদ্দ ও কিসাসের দণ্ডে দণ্ডিত করার জন্য অপরাধীর বালেগ ও বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হওয়া শর্ত হলেও তাযীরের আওতায় অপরাধী সগীর মুমায়্যিযের উপরও শাস্তি কার্যকর হবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مُرُوا أولاكمِ بالصلاةِ وهم أبناءُ سبعِ سِنينَ، واضرِبوهم عليها وهم أبناءُ عَشرٍ.
‘তোমাদের সন্তানগণ সাত বছরে উপনীত হলেই তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দাও। তারা দশ বছরে পদার্পণ করলে এর জন্য তাদেরকে মারো’।[6]
এটি শান্তি নয়, বরং শাসন। তাকে সৎ, সভ্য, আদ্র, কর্মঠ, নিয়মানুবতী করে গড়ে তোলার জন্য এই শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ’
ধারা-৩ অপরাধের আইনগত উপাদান
(ক) কোন কাজকে অপরাধ সাব্যস্ত করার জন্য তার সমর্থনে এমন নস বিদ্যমান থাকতে হবে যা সংশ্লিষ্ট কাজকে হারাম ঘোষণা করে এবং সেই কাজে লিপ্ত হলে শাস্তি নির্ধারণ করে।
(খ) যে নসটি সংশ্লিষ্ট কার্যকে হারাম ঘোষণা করে, সেই নসটি নিষিদ্ধ কাজ করার সময় আইনত বলবৎ রয়েছে, যেখানে কাজটি কৃত হয়েছে সেখানেও বলবৎ রয়েছে এবং যে করেছে তার উপরই নির্দেশ আরোপিত হয়েছে।
বিশ্লেষণ
এই শর্তগুলির মধ্যে কোন একটি শর্তের অনুপস্থিতিতে কৃত অপরাধের শাস্তি কার্যকর হবে না।’[7]
ধারা-৪ অপরাধের শ্রেণীবিভাগ
শাস্তির মাত্রার দিক থেকে অপরাধ নিম্নোক্ত তিন শ্রেণীতে বিভক্ত।
(ক) হদ্দ-এর আওতাভুক্ত অপরাধ: যেসব অপরাধের জন্য হদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। যিনা, যিনার অপবাদ, মদ্যপান, চুরি, ডাকাতি, বিদ্রোহ ও ধর্মত্যাগের অপরাধ এই শ্রেণীভুক্ত।
(খ) কিসাস ও দিয়াতের আওতাভুক্ত অপরাধ: যেসব অপরাধের জন্য কিসাস (মৃত্যুদণ্ড বা অঙ্গহানি) অথবা দিয়াত (রক্তপণ) নির্ধারণ করা হয়েছে। কতলে আমদ, কতলে শিবহি আমদ, কতলে খাতা এবং ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতিসাধনের অপরাধসমূহ এই শ্ৰেণীভুক্ত।
(গ) তাযীরের আওতাভুক্ত অপরাধ: যেসব অপরাধের জন্য তাযীরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপধারা (ক) ও (খ)-এ উল্লিখিত অপরাধসমূহ ব্যতীত অন্য সব অপরাধ এই শ্রেণীভুক্ত। এই শ্রেণীভুক্ত অপরাধের শান্তি কুরআন ও সুনায় নির্ধারণ করা হয়নি, বরং শান্তি নির্ধারণের বিষয়টি সরকারের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ
উপধারা ক-এ উল্লিখিত অপরাধসমূহের শাস্তির পরিমাণ ও ধরন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এবং এই শাস্তির মাত্রার মধ্যে কোন কম-বৃদ্ধি নেই। এই শাস্তি রহিত করা যায় না, এমনকি কাযী বা ক্ষতিগ্ৰস্ত পক্ষ (বাদী) কেউই তা মাফ করতে পারে না।[8]
উপধারা খ-এ উল্লেখিত অপরাধসমূহ জিনায়াত (ব্যক্তির জীবন ও দেহের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধ)-এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে।’[9] ক্ষতিগ্ৰস্ত ব্যক্তি বা তার (নিহত হওয়ার ক্ষেত্রে) ওয়ারিসগণ দিয়াত (রক্তপণ) গ্রহণের বিনিময়ে অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারে, এমনকি দিয়াতও ক্ষমা করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে অপরাধী শান্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।[10]
উপধারা গ-এ উল্লিখিত অপরাধের সংখ্যা উপধারা ক ও খ-এ উল্লিখিত অপরাধসমূহের মত সীমিত নয়। এক কথায় বলতে গেলে, উপধারা ক ও খ-এ উল্লিখিত অপরাধসমূহ ব্যতীত আর সমস্ত অপরাধই এই শেষোক্ত শ্ৰেণীভুক্ত। এক্ষেত্রে সরকার অথবা বিচারক অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং ক্ষমা আইনত কার্যকর হবে-যদি তার ক্ষমার দ্বারা ক্ষতিগ্ৰস্ত পক্ষের অধিকার ক্ষুন্ন না হয় এবং এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্ৰস্ত ব্যক্তিও অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কৃত এই জাতীয় অপরাধ সরকার অথবা কাযীও ক্ষমা করতে পারেন না।’[11]
ধারা-৫ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত অপরাধ
অপরাধীর ইচ্ছার দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ দুই প্রকার–
(ক) ইচ্ছাকৃত অপরাধ অর্থাৎ আদেশ বা নিষেধ ইচ্ছাকৃতভাবে (Inenionay) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
(খ) ইচ্ছাবহির্ভুত অপরাধ অর্থাৎ আদেশ বা নিষেধ লঙ্ঘনের সংকওল্পে করা হয় নি, বরং ভুলবশত লঙ্ঘিত হয়েছে।
বিশ্লেষণ
ইচ্ছাকৃত অপরাধ প্রমাণ করে যে, অপরাধীর মধ্যে অপরাধের প্রবণতা বিদ্যমান আছে, কিন্তু ইচ্ছাবহির্ভুত অপরাধের মধ্যে উক্ত উপাদান বিদ্যমান থাকে না। তাই ইচ্ছাকৃত অপরাধের শান্তি হয় কঠিনতর এবং ইচ্ছাবহির্ভুত অপরাধের শাস্তি হয় হালকা। দ্বিতীয়ত, ইচ্ছাকৃত অপরাধের ক্ষেত্রে ইচ্ছা পূর্ণরূপে প্রতীয়মান না হওয়া পর্যন্ত অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া যায় না, কিন্তু ইচ্ছাবহির্ভূত অপরাধের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অসাবধানতা ও অসতর্কতার জন্য শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।[12]
ধারা-৬ ভুল-এর শ্রেণীবিভাগ
(ক) অপরাধীর ইচ্ছাকৃত কাজের ফলে যা সংঘটিত হয়েছে তা তার অপরাধ করার ইচ্ছাভিত্তিক ছিল না এবং ভুলটি স্বয়ং অপরাধীর দ্বারা ঘটেছে অথবা সংশ্লিষ্ট কাজের মধ্যে ভুল সংঘটিত হয়েছে।
(খ) অপরাধীর অপরাধকর্মটিও করার ইচ্ছা ছিল না এবং অপরাধ করারও ইচ্ছা ছিল না, বরং অসাবধানতাবশত কাজটি ঘটেছে এবং অপরাধ প্ৰকাশ পেয়েছে।
বিশ্লেষণ
উদাহরণস্বরূপ উপধারা ক-এর ক্ষেত্রে বলা যায়, কোন ব্যক্তি মানুষের নিরাপত্তার জন্য রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু, যেমন-পাথর উঠিয়ে রাস্তায় বাহিরে নিক্ষেপ করল এবং ঘটনাক্রমে তা কোন পথিকের গায়ে পড়ল অথবা কোন, শাকারী শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করল এবং তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কোন মানুষের দেহে আঘাত হানল অথবা কোন ব্যক্তি শিকারের পশু ধারণা করে তার প্রতি বন্দুকের গুলি ছুড়ল, প্রকৃতপক্ষে তা ছিল মানুষ এবং ফলে লোকটি আহত বা নিহত হল। উল্লিখিত উদাহরণগুলিতে কর্মের পিছনে অপরাধীর ইচ্ছা বিদ্যমান, কিন্তু অপরাধের ইচ্ছা বিদ্যমান নেই। তার কাজের অথবা ধারণার ভুলই অপরাধ সংঘটনের কারণ হয়েছে।[13]
উপধারা খ-এর ক্ষেত্রে বলা যায়, দুই ব্যক্তি একই বিছানায় একত্রে ঘুমিয়েছে। তাদের একজন পার্শ্ব বদল করতে গিয়ে অপরজনের দেহের উপর উঠে গিয়েছে এবং এর ফলে (দেহের চাপে) অপরজন নিহত হয়েছে। অথবা কোন ব্যক্তি রাস্তার পাশে কূপ খনন করেছে এবং নিরাপত্তামূলক কোন দেওয়াল বা বেড়া কুপের চারিদিকে নির্মাণ করেনি, ফলে তাতে পতিত হয়ে কেউ মারা গিয়েছে।’
ধারা-৭ প্ৰকাশ পাওয়ার সময়কাল হিসাবে অপরাধের শ্ৰেণীবিভাগ
অপরাধকর্ম সংঘটিত হওয়ার সময়কাল হিসাবে তা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত—
(ক) সংঘটিত হওয়ার সময়ই অথবা কিছুক্ষণ পরেই যে অপরাধ প্ৰকাশ পায় তা এক শ্রেণীতে পড়ে (আল-জারীমাতু লা মুতালাব্বিস বিহা) ।
(খ) সংঘটিত হওয়ার সময় যে অপরাধ প্ৰকাশ পায় না অথবা অপরাধ সংঘটনের অনেক সময় অবহিত হওয়ার পরে যা প্রকাশ পায় তা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে (আল-জারীমাতুল লা তালাব্বাসু ফীহা) ।
বিশ্লেষণ
দুটি দিক থেকে এই শ্রেণীবিভাগের গুরুত্ব রয়েছে। প্রথমত, অপরাধকর্মটি হদের আওতাভুক্ত হলে এবং এর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাক্ষী বিদ্যমান থাকলে তাদেরকে স্বচক্ষে অপরাধকর্মটি সংঘটিত হতে এবং অপরাধীকে সরাসরি উক্ত কর্মে লিপ্ত দেখতে হবে। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে প্ৰত্যক্ষদশীর নিকট ঘটনার আদ্যপান্ত শ্রবণপূর্বক সাক্ষী দিলে তাও গ্রহণযোগ্য হবে।’[14] কিন্তু অপর ইমামগণের মতে উপরোক্ত সাক্ষ্য’গ্রহণযোগ্য নয়।[15]
দ্বিতীয়ত, যে কেউ অপরাধীকে অপরাধকৰ্মে লিপ্ত দেখবে সে তাকে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগে বাধা প্ৰদান করবে, তা তার অধিকার এবং কর্তব্য। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন;
{تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ} [آل عمران: ১১০]
‘তোমরা সৎকর্মের নির্দেশ দান কর এবং অসৎকার্যে নিষেধ কর’ (সূরা আলু ইমরান: ১১০) ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন;
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ
‘তোমাদের কেউ দুষ্কর্ম ঘটতে দেখলে সে শক্তি প্রয়োগ করে হাতে বাধা দিবে।’[16]
واللهِ لَتأمُرُنَّ بالمَعروفِ،ولَتَنهَوُنَّ عن المُنكَرِ، ولَتأخُذُنَّ على يَدِ الظّالِمِ
‘তোমরা অবশ্যই সৎকার্যের নির্দেশ দিবে, অসৎকাৰ্য হতে বিরত রাখবে এবং স্বৈরাচারীকে প্রতিরোধ করবে’।[17]
ধারা-৮ ইতিবাচক ও নেতিবাচক অপরাধ
ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থেকেও অপরাধ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত—
(ক) নিষিদ্ধ কাজসমূহে লিপ্ত হলে তাকে ইতিবাচক অপরাধ বলে।
(খ) যে কর্ম করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা না করাকে নেতিবাচক অপরাধ বলে।
বিশ্লেষণ
‘ইতিবাচক অপরাধ’; যেমন চুরি, যিনা, মদ পান ইত্যাদি। ইতিবাচক অপরাধ নেতিবাচক পন্থায়ও সংঘটিত হতে পারে এবং এর জন্য অপরাধী শাস্তি ভোগ করবে। যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে গৃহবন্দী করে রাখল এবং সে তাকে পানাহার করাল না অথবা শীতের রাত্রে শীত নিবারক বস্ত্ৰ দিল না, ফলে সে অনাহারে অথবা শীতের প্রকোপে মারা গেল। হত্যার উদ্দেশ্যে তা করে থাকলে অপরাধী ইচ্ছাকৃত হত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবে। এটি ইমাম আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ, মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ-এর অভিমত।[18]
বাধাদানকারীর কোন কাজ থেকে বিরত থাকা বা না থাকার পরিণতিতে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় তার প্রতিটির জন্য সে দায়ী সাব্যস্ত হবে না। বরং আইনগত বা ঐতিহ্যগত দিক থেকে সংশ্লিষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকা বা না থাকা তার জন্য অপরিহার্য হলে কেবল সেই ক্ষেত্রেই তাকে দায়ী করা যায়। যেমন কোন ব্যক্তি পানিতে বা আগুনে অথবা হিংস্ৰ প্ৰাণীর আক্রমণে পতিত হল। এবং অপর ব্যক্তি তা অবলোকন করল। এক্ষেত্রে অবলোকনকারীর দায়িত্ব কি? বিপদগ্ৰস্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করা তার কর্তব্য কি না এবং সেই শক্তি তার আছে কি না ইত্যাদি বিষয়ের উপর তাকে দায়ী করা বা না করা নির্ভর করবে।[19]
ধারা-৯ অপরাধে লিপ্ত হওয়ায় ধরনের দিক থেকে অপরাধের শ্রেণীবিভাগ
অপরাধে লিপ্ত হওয়ায় ধরনের দিক থেকে অপরাধ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত–
(ক) অ-পুনরাবৃত্ত অপরাধ যা একটি মাত্র অপরাধকর্ম থেকে অস্তিত্ব লাভ করে। যেমন চুরি, মদ পান, অপরাধ সাময়িক প্ৰকৃতির হোক অথবা চলমান প্ৰকৃতির।
(খ) অব্যাহত অপরাধ যা কোন কাজ পুনঃ পুনঃ করার ফলে ঘটে থাকে। অর্থাৎ কাজটি সরাসরি অপরাধ নয়, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়া অপরাধ।
বিশ্লেষণ
হদ্দ, কিসাস ও দিয়াতের সমস্ত অপরাধ উপধারা ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত এবং তাযীরের আওতাভুক্ত অপরাধসমূহ উপধারা ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত। যে নস সংশ্লিষ্ট কাজটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সেই নস যদি অপরাধীকে শান্তি দেওয়ার জন্য অপরাধে অভ্যন্ত হওয়াকে শর্ত নির্ধারণ করে তবে তা অভ্যাসগত অপরাধ, আর যদি সংশ্লিষ্ট কাজটি সংঘটিত হওয়াকেই অপরাধ গণ্য কয়ে তবে তা অ-পুনরাবৃত্ত/সাধারণ সরল অপরাধ।[20]
এই ব্যাপারে ফকীহগণ একমত যে, হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া এবং ফরয ও ওয়াজিব কর্ম বর্জন করার ক্ষেত্রে তাযীর নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ‘মাকরূহ’[21] কাজে লিপ্ত হওয়া এবং কোন ‘মানদূব’ কাজ বর্জন করার ক্ষেত্রেও তাযীরের সন্মুখীন হতে হবে কিনা। এই ব্যাপারে ফকীহগণের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। একদল ফকীহের মতে মাকরূহ কাজে লিপ্ত হওয়ায় এবং মানদুব কাজ বর্জন করায় মোটেই কোন শান্তি নেই।[22] অপর একদল ফকীহ সার্বিক কল্যাণের দাবি বিবেচনা করে পুনঃ পুনঃ মাকরূহ কার্যে লিপ্ত হওয়ার ও মানদূব কাৰ্য ত্যাগ করার শর্তে শাস্তির কথা বলেন।[23]
ধারা-১০ অপরাধের স্তরসমূহ
অপরাধকৰ্মে লিপ্ত হওয়ার জন্য অপরাধীকে নিম্নোক্ত স্তরসমূহু অতিক্ৰম করতে হয়–
(ক) পরিকল্পনা: এই স্তরে অপরাধী অপরাধকৰ্মে লিপ্ত হওয়ার পরিকল্পনা করে এবং অপরাধ সংঘটনের সংকল্প গ্ৰহণ করে।
(খ) উপকরণ সংগ্ৰহ: এই স্তরে অপরাধী অপরাধকর্ম সংঘটনের প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ সংগ্ৰহ করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে উপকরণ সংগ্রহও শান্তিযোগ্য গণ্য হতে পারে।
(গ) অপরাধ সংঘটন: এই স্তরে অপরাধী তার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণসহ অপরাধকৰ্মে লিপ্ত হয়।
বিশ্লেষণ
অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করা এবং এই সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে দৃঢ় সংকল্প গ্ৰহণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। কারণ মানুষের অন্তরে যে কুমন্ত্রণার সৃষ্টি হয়, তার অন্তর যে কথা বা কাজের চিন্তা করে এবং সংকল্প গ্ৰহণ করে তার জন্য শরীআত তাকে দায়ী করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِأُمَّتِي عَمَّا وَسْوَسَتْ أَوْ حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أَوْ تَكَلَّمْ.
‘আল্লাহ তা’আলা আমার উন্মতের মনে উদিত কুমন্ত্রণা ও কুধারণাসমূহ উপেক্ষা করেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তা অনুযায়ী কাজ করে বা কথা বলে।’[24]
উপকরণ সংগ্রহের স্তরটি শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতাভুক্ত নয়। তবে উপকরণ সংগ্রহের প্রকৃতি স্বয়ং অপরাধ হলে তা শান্তিযোগ্য হবে। যেমন কোন মুসলমান চুরির উদ্দেশ্যে অপর কাওকে মাদকদ্রব্য পান করাল। এক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য ক্রয় ও তা সঙ্গে রাখা স্বয়ং গুনাহ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এখানে শাস্তি কার্যকর করার জন্য চুরি সংঘটিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। উপকরণ সংগ্রহের স্তরকে অপরাধ সাব্যস্ত না করার কারণ হল, কোন কাজ তখনই গুনাহের কাজ এবং শান্তিযোগ্য অপরাধ সাব্যস্ত হয় যদি তার দ্বারা আল্লাহ অথবা বান্দার অধিকার খর্ব হয়।[25]
তৃতীয় স্তরে পৌঁছে অপরাধীর কাজ অপরাধকর্ম হিসাবে গণ্য হয় এবং শরীআত এর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।
ধারা-১১ অসমাপ্ত অপরাধের শাস্তি
অসমাপ্ত অপরাধের শাস্তি সমাপ্ত অপরাধের শাস্তির সমান হবে না।
বিশ্লেষণ
হদ্দ ও কিসাসের অপরাধের ক্ষেত্রে শরীআতের মূলনীতি হল, কোন ব্যক্তি অপরাধকৰ্মে লিপ্ত হয়ে তা সমাপ্ত না করে বিরত হলে তাকে সংশ্লিষ্ট অপরাধের পূর্ণ শান্তি দেওয়া যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَن بَلَغَ حَدًّا في غَيرِ حَدٍّ فهو مِنَ المُعتَدينَ.
‘যে ব্যক্তি অপরাধ ছাড়াই অপরাধের শাস্তি কার্যকর করল সে সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’[26]
হদ্দ ও কিসাস-এর অপরাধে র ক্ষেত্রে উক্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করা যায় না। অতএব যিনার সূচনা করায় যিনার পূর্ণ শাস্তি, চুরির সূচনাতে চুরির পূর্ণ শান্তি প্ৰদান করা যায় না। কারণ চুরির শুরুতেই চুরির পূর্ণ শান্তি দেওয়া হলে আংশিক অপরাধ পূর্ণ অপরাধ হিসাবে গণ্য হতে বাধ্য। অথচ কার্যের সূচনা ও সমাপ্তির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। তাই যতটুকু অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তদনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।[27]
তাযীরের আওতাভুক্ত অপরাধসমূহের সূচনাকেও হাদ ও কিসাসের উপর কিয়াস করা যেতে পারে এবং তার নীতিমালা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।[28]
ধারা-১২ অপরাধকর্ম থেকে বিরতি
অপরাধকর্ম শুরু করার পর তা অসমাপ্ত রেখে বিরত হলেও অপরাধীকে শান্তি ভোগ করতে হবে।
বিশ্লেষণ
অপরাধকর্ম শুরু করে অপরাধী কখনও তা সম্পন্ন করে, আবার কখনও অসম্পন্ন রেখে বিরত হয়। এই বিরতি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন চোরাই মাল একত্র করার এক পর্যায়ে চোর ধরা পড়েছে অথবা সে যে পরিমাণ অপরাধ করেছে তাকেই যথেষ্ট মনে করেছে অথবা তার নিকট প্রয়োজনীয় অস্ত্র নেই, অথবা অপর এক সময়ে তা পূর্ণ করার চিন্তা করে বিরত হয়েছে অথবা কেউ তাকে দেখে ফেলার আশংকা হয়েছে ইত্যাদি। এরূপ অবস্থায় অপরাধীকে তার কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে।[29]
ধারা-১৩ অপরাধীর তওবা গ্ৰহণযোগ্য নয়
‘হিরাবাহ্’য় অপরাধ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধী তওবা করলেও শান্তি থেকে রেহাই পাবে না।
বিশ্লেষণ
‘হিরাবাহ্’ বলতে সংঘবাদ্ধ শক্তির জোরে আক্রমণ চালিয়ে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা বোঝায়। সম্পদ লুণ্ঠন, শ্ৰীলতাহানি, হত্যা ও রক্তপাত এর অন্তর্ভুক্ত। ভিন্ন একটি ধারায় বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনা হবে। তা ব্যতীত অন্য কোন অপরাধের শান্তি তওবার দ্বারা রহিত হবে না। এক্ষেত্রে মূলনীতি হল, ‘তওবা দ্বারা শান্তি রহিত হয় না’।[30] বরং যেইসব অপরাধের শান্তি মহান আল্লাহ্ নির্ধারণ করে দিয়াছেন সেসব অপরাধে লিপ্ত অপরাধী তওবা করার পরও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাস্তি কার্যকর করেছেন। মাইয আসলামী যিনার অপরাধ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তওবা করতে আসলে তিনি তাকে শাস্তি দেন এবং তার তওবাও কবুল করেন।’[31] অনুরূপভাবে জুহায়না গোত্রের গামিদ উপ-গোত্রের এক নারী একই অপরাধ করে তওবা করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হলে তিনি তার তওবাও কবুল করেন এবং তার উপর শাস্তিও কার্যকর করেন। অতঃপর তিনি বলেন, ‘এই নারী যে ধরনের তওবা করেছে তা মদীনার সত্তরজন লোকের মধ্যে বণ্টন করলে তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে ।’[32]
ধারা-১৪ অপরাধকৰ্মে অংশীদার
অপরাধকৰ্মে অংশীদারগণ নিম্নোক্ত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত–
(ক) প্ৰত্যক্ষ অংশীদায়: যারা সরাসরি অপরাধকর্মটি বাস্তবায়ন করে তাদেরকে প্ৰত্যক্ষ অংশীদার বলে।
(খ) পরোক্ষ অংশীদার: যারা অপরাধ কর্মের বান্তবায়নে প্ৰত্যক্ষ অংশীদারগণকে বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন পর্যায়ে সহায়তা করে তাদেরকে পরোক্ষ অংশীদার বলে।’[33]
বিশ্লেষণ
কখনও এক ব্যক্তিই অপরাধকর্ম ঘটায়, আবার কখনও একাধিক অপরাধী একত্র হয়ে বিভিন্ন অপরাধকর্মের বাস্তবায়নে পরস্পরের সহযোগী হয়। তা চার পর্যায়ে হতে পারে:
(১) কোন ব্যক্তির সাথে একত্র হয়ে সরাসরি অপরাধকর্ম সংঘটন;
(২) অপরাধকর্ম সংঘটনে একমত হয়ে;
(৩) কখনও অন্যকে অপরাধে লিপ্ত হতে উল্কানি দিয়ে এবং
(৪) কখনও সরাসরি শরীক না হয়ে উপায়-উপকরণ সরবরাহ করে।’[34]
অপরাধকৰ্মে একমত হওয়ার অর্থ হল, অপরাধীগণ সংশ্লিষ্ট অপরাধকর্মটি সংঘটনে একমত হয়েছে। কিন্তু অপরাধকর্মটি কিভাবে সংঘটিত করবে সেই সম্পর্কে আগে থেকে তাদের মধ্যে কোন পরিকল্পনা ছিল না; বরং যে যা করেছে তা নিজ নিজ উদ্যোগে ও উপস্থিত বুদ্ধিতে করেছে। এক্ষেত্রে সকলেই শাস্তিযোগ্য অপরাধী গণ্য হবে।’[35]
অপরাধী অপরাধকর্মের সূচনা করলেই তাকে প্রত্যক্ষ অংশীদার গণ্য করা হবে, অপরাধকর্মটি শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করুক অথবা আংশিক সম্পন্ন করুক। অপরাধকর্মটি হদের আওতাভুক্ত হলে এবং তা সম্পন্ন হলে অপরাধীর উপর হদের শাস্তি কার্যকর হবে (যদি হাদযোগ্য অপরাধ হয়) এবং আংশিক সম্পন্ন হলে তাযীরের আওতায় শাস্তি কার্যকর হবে।’
প্ৰত্যক্ষ অংশীদার যদি পরোক্ষ অংশীদারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন পরোক্ষ অংশীদারের নির্দেশে সে (প্ৰত্যক্ষ অংশীদার) কাওকেও হত্যা করেছে, তবুও সে প্রত্যক্ষ অংশীদারই গণ্য হবে, যদি তাকে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে বাধ্য করা না হয়ে থাকে।[36]
সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য শরীকগণ সেই শাস্তিই ভোগ করবে যা উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত রয়েছে, যদিও প্রত্যেক অংশীদার স্বতন্ত্রভাবে সম্পূর্ণ অপরাধকর্মটি ঘটায় নি। অবশ্য প্রত্যেক অপরাধীর শাস্তি তার নিজস্ব বিশেষ অবস্থার দ্বারা অর্থাৎ অপরাধকর্মটির বৈশিষ্ট্য, অপরাধীর অবস্থা ও ইচ্ছার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। যেমন দুই অপরাধীর একজন পাগল এবং অপরজন বুদ্ধিমান। তবে একজন অপরাধীর বিশেষ অবস্থার দ্বারা অপর অপরাধীর শাস্তি প্রভাবিত হবে না। যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করল। আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মরক্ষা করতে গিয়ে আক্রমণকারীকে আহত করল। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির কাজটি শান্তিযোগ্য নয়, যদিও আক্রমণকারীর কাজটি শাস্তিযোগ্য।’[37]
ধারা-১৫ পরোক্ষ অংশীদায় হওয়ায় শর্তাবলী
নিম্নোক্ত তিনটি শর্ত পূর্ণ হলে কোন অপরাধী পরোক্ষ অংশীদার গণ্য হবে–
(১) কাজটি শাস্তিযোগ্য অপরাধকর্ম থেকে হবে;
(২) একমত হওয়া, উত্তেজিত করা, সাহায্য করা ইত্যাদি অপরাধকর্মটি সংঘটনের উপলক্ষ হতে হবে; এবং
(৩) শরীককে তার উপায়-উপকরণের দ্বারা শাস্তিযোগ্য কার্যটির বাস্তবায়নে ইচ্ছুক হতে হবে।
বিশ্লেষণ
পরোক্ষ অংশীদার গণ্য করার জন্য কর্মটি শান্তিযোগ্য অপরাধকর্ম হওয়া এবং সংঘটিত হওয়া আবশ্যক, শেষ হওয়া জরুরী নয়। এমনকি প্রত্যক্ষ অংশীদারের শাস্তি হওয়াও জরুরী নয়। যেমন মূল কর্মের সংঘটক নাবালেগ অথবা পাগল, তাই তার শাস্তি নাও হতে পারে। অংশীদার হওয়ার জন্য অপরাধকর্ম সংঘটনে একমত হওয়া, উত্তেজিত করা এবং সাহায্য করা ইত্যাদি বিষয়ের বিদ্যমান থাকা এবং এর ফলে অপরাধকর্মটি সংঘটিত হওয়া আবশ্যক।
যদি শরীক তার (পরোক্ষ অংশীদারের) উপায়-উপকরণ ব্যবহার করে অপরাধকর্ম বাস্তবায়ন করতে ইচ্ছুক থাকে এবং পরোক্ষ অংশীদার ভিন্ন কোন অপরাধ সংঘটনের সংকল্প বা কোন নির্দিষ্ট অপরাধ সংঘটনের সংকল্প করেছিল, কিন্তু প্ৰত্যক্ষ অংশীদার অন্য একটি অপরাধকর্ম করেছে, এক্ষেত্রে প্রথমোক্ত জনকে অপরাধী গণ্য করা যাবে না। যেমন, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে নিজের বাগান থেকে কাঠ কাটার জন্য একটি কুঠার দিল, সে কুঠারের আঘাতে এক ব্যক্তিকে হত্যা করল। এক্ষেত্রে উপকরণ সরবরাহকারী (কুঠারদাতা) অপরাধকৰ্মে শরীক গণ্য হবে না। পরোক্ষ অংশীদারের তৎপরতা তাযীরের আওতায় শান্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হবে। কারণ শরীআতে অপরাধকর্ম সংঘটনে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, তার জন্য উত্তেজিত করা এবং তাতে সাহায্য করা ইত্যাদি প্ৰত্যেকটি স্বতন্ত্রভাবে অপরাধ হিসাবে গণ্য, অপরাধকর্মটি সংঘটিত হোক বা না হোক।[38]
আরো পড়ুন: আইন ও ইসলামি আইন
তথ্যনির্দেশিকা
[1] আবুল হাসান আলী ইব্ন মুহাম্মাদ ইবনে হাবীব আল-মাওয়ারদী (মৃত্যু: ৪৫০ হিজরী/১০৫৮ ঈসাব্দ), আল-উলায়াতুত-দীনিয়া ফিল আহকামিস সুলতানিয়া, বৈরূত ১৩৯৮ হি./১৯৭৮ ঈ., পৃষ্ঠা: ২১৯ ।
[2] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৬৬।
[3] সুনানে আবু দাউদ: 4398, 4401, 4403 ; মুসনাদে আহমাদ: 940, 956, 1183, 1328, 1362, 24694, 24703, 25114; সুনানে ইবনে মাজাহ: 2041, 2042 ; সুনানুত তিরমিযি: 1423
[4] মাজমূআহ কাওয়ানীন ইসলামী, ২২, পৃষ্ঠা: ৩৯৬-৩৯৭; আল-বাহরুর রাইক, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৮৯-এর বরাতে।
[5] আল-মুসতাসফা , খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৬৩-এর বরাতে আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১১৬
[6] সুনানে আবু দাউদ, সালাত, বাব ২৬, নং ৪৯৪; সুনানে তিরমিযী, সালাত, নং ৪০৭। সুনানে আবু দাউদ: 495, মুসনাদে আহমাদ: 6756, সুনানে দারাকুতনী : 887, 888, শারহুস সুন্নাহ; ইমাম বাগাবী : 505
[7] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১১২।
[8] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৭৯, ৮১।
[9] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ২৩৩।
[10] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৮০, ৮১।
[11] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৮১-৮২।
[12] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৮৩-৮৪।
[13] ইবুন কুদামা, আল-মুগনী, মাকতাবা ইব্ন তায়মিয়া সংস্করণ, কায়রো, পৃষ্ঠা: ৬৫০-6৫২; আবুল আস আর-রামলী, নিহায়াতুল মুহতাজ ইলা শারহিল মিনহাজ, মাতবা আল-বাবী আল-হালাবী ১ম সংস্করণ, খণ্ড: 7; পৃষ্ঠা: ২৩৫ ; তাবইনুল হাকায়িক শারহি কানযিদ দাকাইক, উসমান ইবনে আলী আল-যায়লাঈ, ১ম সং বুলাক ১৩১৫ হি, খণ্ড : ৬; পৃষ্ঠা ১০১, ১০২; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, ২য় সং বৈরূত ১৪০২/১৯৮২, খণ্ড : 7; পৃষ্ঠা: ২৩০; আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড : ১ , পৃষ্ঠা: 8৩-8৪।
[14] আল-মুদাওনা আল-কুবরা, ১ম সংস্করণ, আল-মাতাউস সানা, ৬/৪৫।
[15] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, ৭৩, পৃষ্ঠা: ৯০; নিহায়াতুল মুহতাজ, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ৩০৭; আল-ইকনা, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা: ৪০৭ (আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, হতে গৃহীত, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৮৫-৬) ।
[16] আবু দাউদ, কিতাবুল মালাহি, বাব ১৭, নং ৪৩৪১; ইব্ন মাজাহ, ইকামাহ, বাব ১৫৫, নং ১২৭৫, ফিতান, বাব ২০, নং ৪০১৩; মুসনাদে আহমাদ, ৩থ, পৃষ্ঠা: ১০, ৫২। সহিহ মুসলিম: 49; মুসনাদে আহমাদ : 11460; আসসুনানুল কুরবা ইমাম বাইহাকি: 11624
[17] আবু দাউদ, মাহিম, বাব ১৭ নং ৪৩৬; আসসুনানুল কুরবা ইমাম বাইহাকি: 20221।
[18] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ২৩৪; আল-বাহরুর রাইক, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ২৯৫; আশ-শারহুল কাবীর, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২১৫; নিহায়াতুল মুহতাজ, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ২৩৯ (আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, হতে গৃহীত, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৮৬-8৭) ।
[19] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৮৮।
[20] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, উল জিনাইত ইসলামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৯০।
[21] যে কাজ বর্জন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বর্জন করা অপরিহার্য (বাধ্যতামূলক) নয় তাকে মাকরূহ’ বলে। যে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু করাটা অপরিহার্য (বাধ্যতামূলক) নয় তাকে মানদূব’ (মুসতাহাব) বলে।
[22] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, ৭ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৬৩ ; মাওয়াহিবুল জালীল, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ৩২০ ; আল-ইকনা, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২৭০, ২৭১; আল-ইহকাম ফী উলিল আহকাম, ৩২, পৃষ্ঠা: ২১, ২২।
[23] আল-গাযালী, আল-মুসতাসা , পৃষ্ঠা: ৭৫, ৭৬ ; তুহফাতুল মুহতাজ, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ১৮ ; মাওয়াহিবুল জালীল, ৬, পৃষ্ঠা: ৩২০; আল-আহকামুস সুলতানিয়া, পৃষ্ঠা: ২১২, ২১৩ (আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, হতে গৃহীত, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৯০-৯১) ।
[24] সহিহ বুখারী, কিতাবুল ইতক, তালাক ও ঈমান, হা. 6664 ; সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান ; আবু দাউদ, কিতাবুত তালাক, বাব ১৫, নং- ২২০৯ ; সুনানে তিরমিযী, তালাক, বাব ৮, নং ২২. ২২২ ১১৮৩; সুনানে ইব্ন মাজাহ, তালাক , বাব ১৪, নং ২০৪০, বাব ১৬, নং ২০৪৩-৫; সুনানে নাসাঈ, তালাক ; মুসনাদে আহমাদ, ২য়, পৃষ্ঠা: ৩৯৮, ৪২৫, ৪৭৪, ৪৮১, ৪৯১।
[25] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৪৮।
[26] আসসুনানুল কুরবা ইমাম বাইহাকি: : ১৭৬৪৮, আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৫০।
[27] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৫০-35১।
[28] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৫১।
[29] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৫১-35২
[30] “ হিরাবার অপরাধের শাস্তি ব্যতীত তওবা অন্য কোন শান্তি বাতিল করে না।”
[31] সহিহ মুসলিম, কিতাবুল হুদুদ।
[32] সুনানে আবূ দাউদ, কিতাবুল হুদুদ।
[33] শারহুয যুরকানী আলা মুখতাসার আল-খালীল, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ১০।
[34] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৫৭।
[35] আয-যায়লাই, তাবঈনুল হাকাইক, খণ্ড: ৬ , পৃষ্ঠা: ১১৪; আল-বাহরুর রাইক, খণ্ড: ৮ , পৃষ্ঠা: ৩১০।
[36] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ১৮০।
[37] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৬৩-৪।
[38] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড: ১