০২. শাস্তি
ধারা-১৬ শাস্তির সংজ্ঞা
অপরাধের জন্য আইন দ্বারা নির্ধারিত প্রতিফলকে শাস্তি বলে।
বিশ্লেষণ
শাস্তির আরবী প্রতিশব্দ (العقاب) যার বহুবচন (العقوبات)। এটিই শরীআতের পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত। ‘অপরাধকৰ্মে লিপ্ত হওয়ার কারণে অপরাধীকে যে কষ্ট ভোগ করতে হয় তাকে শাস্তি বলে।’[1] লিসানুল আরাব নামক আরবী ভাষার বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, ‘মানুষ যে খারাপ কাজ করে তার প্রতিদানকে শাস্তি বলে।’[2]
কাওয়াইদুল ফিকহ-এ বলা হয়েছে, ‘অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধীকে প্রতিদান হিসাবে দুনিয়া বা আখেরাতে যে কষ্ট ভোগ করতে হবে তাঁকে শাস্তি বলে।’[3]
আমাদের আলোচনা রাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় শাস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
ধারা-১৭ শাস্তির শ্রেণীবিভাগ
অপরাধের ধরন অনুযায়ী তার শাস্তি নিম্নোক্ত তিন শ্রেণীতে বিভক্ত–(ক) হাদ্দ, (খ) কিয়াস ও দিয়াত এবং (গ) তাযীর।
ধারা-১৮ হদ্দ–এর সংজ্ঞা
হদ্দ হলো, নির্ধারিত শাস্তি; তা কার্যকর করা বাধ্যতামূলক।[4]
বিশ্লেষণ
হদ্দ (الحد) শব্দের অর্থ বাধাদান বা প্রতিরোধ (المنع) এবং এই শব্দ থেকেই দ্বাররক্ষী (الحداد للبواب) নিষ্পন্ন হয়েছে। কারণ সে আগন্তুককে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। হদ্দ এজন্য কার্যকর করা হয় যে, মানুষ শাস্তির কথা বিবেচনা করে অপরাধকর্ম থেকে বিরত থাকবে। উপরোক্ত সংজ্ঞা হতে প্ৰতীয়মান হয় যে, হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধের শাস্তি নস দ্বারা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সমাজের সার্বিক নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে যে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো আল্লাহর অধিকার হিসাবে গণ্য হয়। হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধের দ্বারা সামগ্রিকভাবে সমাজ ক্ষতিগ্ৰন্ত হয় এবং শাস্তি কার্যকর করলে সমাজ উপকৃত হয়। এজন্য হদকে আল্লাহর অধিকার (Pubic Righ) বলা হয়েছে।’[5]
ধারা-১৯ হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধকৰ্মসমূহ
নিম্নোক্ত অপরাধকর্মসমূহ হদ্দের আওতাভুক্ত—
(ক) যিনা, (খ) চুরি, (গ) ডাকাতি, (ঘ) মদ্যপান, (ঙ) যিনার অপবাদ, (চ) রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও (ছ) ইরতিদাদ (ধৰ্মত্যাগ) ।
(খ) যেসব অপরাধ কর্মের শাস্তি সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত কেবল সেগুলোই হদ্দের আওতাভুক্ত হবে।
ধারা-২০ অপরাধকর্ম প্ৰমাণে নস–এর প্রয়োজনীয়তা
কোন কর্মে লিপ্ত হওয়াকে হদের আওতায় শাস্তিযোগ্য গণ্য করতে হলে তার অনুকূলে নস থাকতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কাজটি অপরাধও নয় এবং শাস্তিযোগ্যও নয়।
বিশ্লেষণ
যেসব অপরাধকে হদের আওতাভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করলে উপরোক্ত নীতির বাস্তবতা প্রমাণিত হয়। কারণ হদের তালিকাধীন প্রতিটি অপরাধের শাস্তির সমর্থনে হয় কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ নিম্নক্ত আয়াতে যেনাকে হারাম ঘোষণা করেছে,
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
‘অবৈধ যৌন সংযোগের নিকটবর্তী হইও না, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পন্থা।’ (সূরা বনী-ইসরাইল: ১৭ : ৩২) ।
নিম্নোক্ত আয়াত তার শাস্তির ঘোষণা করেছে,
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ
‘যিনাকারিণী ও যিনাকার ইহাদের প্রত্যেককে একশো কশাঘাত করবে’ (সূরা নূর: ২৪ : 0২) ।
ধারা-২১ সন্দেহের কারণে হদ্দ রহিত হয়
অপরাধকর্মটি সন্দেহজনক হলে হদ রহিত হয়ে যাবে, তবে তাযীরের আওতায় শাস্তি হতে পারে।
বিশ্লেষণ
যেমন কোন ব্যক্তি অপরাধের স্বীকারোক্তি করে পুনরায় তা প্ৰত্যাহার করলে তার স্বীকারোক্তির মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়ে যায়। অথবা কোন ব্যক্তি তার ও অপর এক ব্যক্তির যৌথ মালিকানাধীন মাল চুরি করল। আর চুরি তো বলা হয় অপরের মালিকানাধীন সম্পদ অলক্ষে হস্তগত করাকে। কিন্তু এখানে তো চোরাই মালের মধ্যে তার অংশ থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সন্দেহের ক্ষেত্রে হদ্দ রহিত কর।’[6]
মুয়ায ইবনে জাবাল, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদবু ও উতবা ইবনে আমের রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘হদ্দ কার্যকর করা তোমার জন্য সংশয়পূর্ণ হয়ে গেলে তা রহিত করে দাও।’
‘উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সন্দেহ বিদ্যমান থাকতে হদ্দ কার্যকর করার চাইতে তা বাতিল করে দেওয়াই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়।’[7]
ধারা-২২ কিয়াস–এর সংজ্ঞা
কোন ব্যক্তিকে হত্যা বা আহত করার দায়ে হত্যাকারীকে বা আহতকারীকে পৰ্যায়ক্রমে হত্যা বা আহত করাকে ‘কিসাস’ বলে।’[8]
বিশ্লেষণ
আরবী (قص) শব্দের অর্থ কর্তন করা, তা থেকে (قصاص) (কিসাস) পরিভাষা গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ, অপরাধ ও শাস্তির মধ্যে সমতা বা সাদৃশ্য বিধান।[9]
অর্থাৎ অপরাধী কোন ব্যক্তির যে পরিমাণ দৈহিক ক্ষতি সাধন করেছে তারও সেই পরিমাণ দৈহিক ক্ষতি সাধনই হলো কিসাস। অপরাধী তাকে হত্যা করলে প্রতিশোধ স্বরূপ সেও মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হবে এবং যখম করে থাকলে প্রতিশোধ স্বরূপ তাহাকেও যখম করা হবে।
ধারা–২৩ কিয়াসের ভিত্তি
কুরআন ও প্রামাণ্য হাদীসের ভিত্তিতেই কেবল কিয়াস কার্যকর করা যায়।
বিশ্লেষণ
কুরআন মজীদে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى
‘হে মুমিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী।’ (সূরা বাকারা: ০২ : ১৭৮) ।’[10]
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِفْ فِي الْقَتْلِ إِنَّهُ كَانَ مَنْصُورًا
‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করো না। কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি তার প্ৰতিকারের অধিকার দিয়েছি। অতএব হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে।’ (সূরা বনী ইসরাঈল: ১৭ : ৩৩)
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ
‘তাদের জন্য কুরআনে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্ৰাণের বদলে প্ৰাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম।’ (সূরা মাইদা: ০৫ : ৪৫)
ধারা–২৪ কিসাস ক্ষমাযোগ্য
নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ এবং আহত ব্যক্তি ইচ্ছা করলে দিয়াত (রক্তপণ) গ্ৰহণ করে অথবা দিয়াত ব্যতীতই অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারে।
বিশ্লেষণ
কুরআন মজীদে হত্যাকাণ্ডের শাস্তি উল্লেখের পরপরই বলা হয়েছে,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى
‘কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসণ করা এবং সততার সাথে তার দেয় পরিশোধ করা বিধেয়। তা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ’ (সূরা বাকারা: ০২ : ১৭৮) ।
ধারা-২৫ দিয়াত-এর সংজ্ঞা
মনুষ্য হত্যার ক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে শরীআত মোতাবেক পক্ষবৃন্দের আপোস-রফার ভিত্তিতে যে অর্থ প্ৰদান করা হয় তাকে ‘দিয়াত’ বলে।[11]
বিশ্লেষণ
নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ আদালতের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে হত্যাকারীর সঙ্গে আপোসরফা করতে পারে। এই অর্থই দিয়াত হিসাবে গণ্য।
ধারা-২৬ আল-আরশ
(ক) মানবদেহের কোন অঙ্গের ক্ষতিসাধনের কারণে যে অর্থ প্ৰদান বাধ্যতামূলক হয় তাকে ‘আল-আরশ’ বলে।[12]
(খ) অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আল-আরশ-এর পরিমাণ নির্ধারণ করবে: আইন প্ৰণয়নকারী কর্তৃপক্ষ।
বিশ্লেষণ
‘আরশ’ শব্দের অর্থ যখম বা অনুরূপ ক্ষতি। দেহের কোন অঙ্গ আহত বা অকেজো করার সমান পরিমাণ শাস্তি অপরাধীর উপর কার্যকর করা কোন কারণে সম্ভব না হলে তার পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ যে অর্থ প্ৰদান করা হয় তা-ই আরশ হিসাবে গণ্য। যেসব ক্ষেত্রে ‘দিয়াত’ আরোপ করা সম্ভব নয়। সেসব ক্ষেত্রে ‘আরশ’ প্রযোজ্য হয়।[13]
ধারা-২৭ তাযীর–এর সংজ্ঞা ও শ্ৰেণীবিভাগ
(ক) আল্লাহ বা মানুষের অধিকার সংশ্লিষ্ট এবং হদ্দ ও কাফফারা বহির্ভূত যেসব অপরাধের জন্য শরীআতে নির্দিষ্ট কোন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি, তাকে তাযীর (Discreionary Punishmen) বলে।
(খ) তাযীর নিম্নবর্ণিত তিন শ্রেণীতে বিভক্ত—
(১) পাপকর্মের তাযীর অর্থাৎ শরীআতে যেসব কাজ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে তাতে লিপ্ত হওয়া পাপকর্ম ও শাস্তিযোগ্য হিসাবে গণ্য;
(২) জনস্বার্থে তাযীর, অর্থাৎ যেসব কাজ স্বয়ং নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু কতিপয় বৈশিষ্ট্যের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছে;
(৩) বিপরীত কর্ম করার কারণে তাযীর, অর্থাৎ শরীআতে যেসব কাজ মানদুব (সুন্নাত, নফল ইত্যাদি) অথবা মাকরূহ হিসাবে গণ্য তার বিপরীত কর্মানুষ্ঠানের জন্য শাস্তি।
বিশ্লেষণ
উপরোক্ত তিন শ্রেণীর মধ্যে পার্থক্য হল, প্রথমোক্ত শ্রেণীভুক্ত কাজ স্থায়ীভাবে হারাম, দ্বিতীয় শ্রেণীর কাজ ততক্ষণ হারাম নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান পাওয়া যাবে এবং তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত কাজ হয় করার নির্দেশ প্ৰদান করা হয়েছে অথবা না করার নির্দেশ প্ৰদান করা হয়েছে, কিন্তু তার বিপরীত কার্যক্রমকে পাপ আখ্যায়িত করার পরিবর্তে শুধু বিরোধিতা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ফকীহগণ এই বিষয়ে একমত যে, তাযীর কেবল সেসব অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, শরীআত যার জন্য হদ্দ অথবা কাফফারা ধাৰ্য করেনি, অপরাধকর্মটি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ হোক অথবা এমন অপরাধই হোক যার প্রভাব মানুষের উপর পতিত হয়।’[14] আল্লাহর অবাধ্যাচরণ বলতে এমন প্রতিটি কর্মকে বুঝায় যার দ্বারা জনস্বাৰ্থ, সমাজের ঐক্য ও তার শাস্তি-শৃংখলা বিঘ্নিত হয়। আর যে অপরাধের প্রভাব মানুষের উপর পতিত হয় তা ব্যক্তি-অধিকার সংশ্লিষ্ট। ‘শরীআত যে কাজ করতে নিষেধ করেছে তাতে লিপ্ত হওয়া এবং যে, কাজ করতে নির্দেশ প্রদান করেছে তা থেকে বিরত থাকাকে পাপকৰ্ম’ বলে। অর্থাৎ অপরাধের সংজ্ঞা ও পাপকর্মের সংজ্ঞা একই।
তাযীর সম্পর্কে হানাফী ফকীহ ইমাম যায়লাঈ বলেন, প্রতিটি পাপকর্মে তাযীর প্রযোজ্য। কিন্তু তাযীরের অধীন সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুনির্দিষ্ট শাস্তি নির্ধারিত নেই। ইমাম অপরাধের ধরন ও অপরাধীর অবস্থা বিবেচনা করে শাস্তি নির্ধারণ করবেন।[15] একজন শাফিঈ ফকীহ বলেন, কোন ব্যক্তি এমন কোন অপরাধকৰ্মে লিপ্ত হলে, যার জন্য হদ্দও নির্ধারিত হয়নি এবং কাফ্ফারাও নয়, তার শাস্তি ইমাম নির্ধারণ করবেন।’[16]
একজন মালিকী ফকীহ কিসাস, দিয়াত ও হাদ-এর আওতাভুক্ত অপরাধ আলোচনার পর বলেন, তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে তাযীর প্রযোজ্য হবে, যা ইমাম নির্ধারণ করবেন এবং তিনি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ ও মানুষের অধিকার খর্বকারী অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করবেন।[17]
একজন হাম্বলী ফকীহ বলেন, তাযীর মূলত শিক্ষামূলক শাস্তি, যা সেই অপরাধের ক্ষেত্রে প্রদত্ত হবে যার জন্য হদ্দ অথবা কাফফারা নির্ধারণ করা হয়নি। তাযীরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারিত নেই, বরং ইমাম তার সুবিবেচনা অনুযায়ী অপরাধীর অবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখে তা নির্ধারণ করবেন।’[18]
শরীআতের সাধারণ নীতিমালা হল, তাযীর কার্যকর করতে হলেও তার সমর্থনে নস বিদ্যমান থাকতে হবে। কিন্তু জনস্বাৰ্থ বিবেচনা করে শরীআত উক্ত নীতির ব্যতিক্রম করারও অনুমতি দিয়েছে এবং নস বিদ্যমান না থাকলেও জনস্বার্থে শাস্তির ব্যবস্থা করা যাবে।[19] যেসব কর্ম এই ব্যতিক্রমের আওতাভুক্ত হবে তার পূর্ণ তালিকা প্ৰদান সম্ভব নয়। কারণ এই ব্যতিক্রমের আওতাভুক্ত কাজসমূহ সরাসরি হারাম নয়, বরং কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে নিষিদ্ধ সাব্যস্ত করা হয়। কোন বৈধ কাজকে তখনই শাস্তিযোগ্য সাব্যস্ত করা যায় যখন তা জনস্বার্থ ও শৃংখলার (Pubic order and adminisraion) জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাড়ায়। জনস্বার্থে শাস্তির ব্যবস্থা করার পক্ষে ফকীহগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস দলীল হিসাবে পেশ করেছেন। ‘এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে উট চুরির অভিযোগ দায়ের করা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আটক করেন। কিন্তু চুরির অপরাধ প্ৰমাণিত না হওয়ায় তিনি তাকে বেকসুর খালাস দেন’।[20]
উপরোক্ত ঘটনায় কয়েদ তাযীরের আওতাভুক্ত একটি শাস্তি, কারণ আসল শাস্তি কেবল অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরই কার্যকর করা যেতো। জনস্বার্থেই তিনি অনুরূপ শাস্তির ব্যবস্থা করেন। কারণ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিলে তার পলায়ন বা আত্মগোপন করার আশংকা থাকতো। সে পলায়ন বা আত্মগোপন করলে এবং আদালতে দোষী প্ৰমাণিত হলে তার উপর শাস্তি কার্যকর করা সম্ভব হতো না এবং নিরপরাধ প্রমাণিত হলে অযথা হয়রানির শিকার হতো। অতএব জনস্বার্থ ও শাস্তি-শৃংখলা রক্ষার স্বার্থেই এই ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বিপরীত কর্ম করার কারণেও তাযীর প্রযোজ্য হতে পারে। ফকীহগণের ঐক্যমত অনুযায়ী হারাম কাজে লিপ্ত হলে অথবা ফরজ কাজ ত্যাগ করলে তাযীর কার্যকর হবে। কিন্তু মাকরূহ কাজে লিপ্ত হলে এবং মানদূব কাজ ত্যাগ করলে তা তায়ীরের আওতাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে ফকীহগণের মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। তাদের একদলের মতে তা তাযীরের আওতাভুক্ত হবে[21] এবং অপর দলের মতে তাযীরের আওতাভুক্ত হবে না।[22] মাকরূহ ও মানদূব-এর সংজ্ঞায় মতপার্থক্য হওয়ার কারণেই এই মতভেদ হয়েছে।
শাস্তির বিপক্ষ দলের মতে মাকরূহ এমন কাজ যা বর্জনের নির্দেশ থাকলেও তা করার এখতিয়ার আছে এবং মানদূব এমন কাজ যা করার নির্দেশ থাকলেও বর্জনের এখতিয়ার আছে। শাস্তি কার্যকর করার পক্ষপাতী দলের মতে মাকরূহ। এমন নিষিদ্ধ কাজ যা করার এখতিয়ার (Opion) নেই এবং মানদূব এমন কাজ যা বর্জনের এখতিয়ার নেই। এই শেষোক্ত দল শাস্তির পক্ষপাতী হওয়া সত্ত্বেও এই পর্যায়ভুক্ত কর্ম বা কর্মবিরতিকে পাপ এবং কর্তাকে পাপী বলেন না, বরং তাকে ‘বিপরীত কর্ম’ বলেন। এই শেষোক্ত দলের মতে উক্ত কর্ম বা কর্মবিরতি বারবার ঘটলেই কেবল তা শাস্তিযোগ্য হবে, একবার বা দু’বার ঘটলে নয়।
তবে বিষয়টি জনস্বার্থ ও শাস্তি-শৃংখলা বিনষ্টকারী হলে তার একবার সংঘটনই শাস্তির জন্য যথেষ্ট। হযরত উমার ফারাক রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর কার্যক্রম এই মতের সপক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করা হয়। একবার তিনি এক ব্যক্তিকে অতিক্ৰম করে যাচ্ছিলেন। লোকটি একটি বকরী যবেহ করার উদেশ্যে শক্ত করে বেধে তাকে মাটিতে শুয়িয়ে রেখে ছুড়িতে শান দিচ্ছিল। উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু তাকে বেত্ৰাঘাত করেন এবং বলেন, তুমি আগেই ছুড়িতে শান দিলে না কেন? [23]
ধারা-২৮ তাযীর বাধ্যতামূলক হওয়ার শর্ত
নারী-পুরুষ, মুসলিম-অমুসলিম, বালেগ-নাবালেগ নির্বিশেষে যে কোন বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন অপরাধীর উপর তাযীর কার্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
অপরাধী বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হলেই তাযীরের আওতায় শাস্তিযোগ্য হবে, তার বালেগ হওয়া শর্ত নয় এবং সে যে ধর্মেরই অনুসারী হোক, যে লিঙ্গেরই হোক।[24] অবশ্য নাবালেগকে প্রদত্ত শাস্তি শাস্তি হিসাবে গণ্য না হয়ে প্রশিক্ষণ হিসাবে গণ্য হবে। তাকে ভদ্র, সভ্য, অধ্যবসায়ী, কর্মঠ, নিয়মানুবতী ও ধর্মানুরাগী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য তার উপর তাযীর তাদীব হিসাবে কার্যকর হবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের সন্তানগণ সাত বছরে পদাৰ্পণ করতেই তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দাও। তারা দশ বছরে পদাৰ্পণ করলে এর জন্য তাদেরকে মার।’[25]
ধারা-২৯ তাযীর ক্ষমাযোগ্য কিনা
অপরাধ কর্মের দারা মানুষের অধিকার খর্ব হলে বিচারক অপরাধীকে ক্ষমা করতে পরবেন না, তবে ক্ষতিগ্ৰস্ত পক্ষ ক্ষমা করতে পারে। কিন্তু তার দ্বারা আল্লাহর অধিকার খর্ব হলে বিচারক তার সুবিবেচনা অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তিও দিতে পারেন, ক্ষমাও করতে পারেন অথবা শুধু তিরষ্কার করেও ছেড়ে দিতে পারেন।
বিশ্লেষণ
মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ, যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ইজ্জতহানি করল বা তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করল বা অনুরূপ অপরাধ। এক্ষেত্রে বিচারক অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন না। আল্লাহ্-র অধিকারে হস্তক্ষেপ, যেমন কোন ব্যক্তি রমযান মাসে সঙ্গত কোন ওজর ব্যতীত প্রকাশ্যে পানাহার করল, নামায ত্যাগ করল বা অনুরূপ অপরাধ। এক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন, তবে তিনি তার শাস্তির ব্যবস্থা করবেন, আর যদি মনে করেন যে, তাকে তিরষ্কার করা বা সতর্ক করে দেওয়াই যথেষ্ট। তবে তিনি তা-ই করবেন।[26]
ধারা-৩০ তাযীরের আওতায় সম্পদ আটক
তাযীরের আওতায় অপরাধীর মাল ক্রোক করা যাবে কিন্তু তা নষ্ট করা যাবে না এবং অপরাধী সংশোধন হলে তার মাল তাকে ফেরত দিতে হবে।
বিশ্লেষণ
এখানে মাল ক্রোক অৰ্থ অপরাধীর মাল একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আটক রাখা, যাতে অপরাধী পরিণাম উপলব্ধি করে সংশোধন হতে পারে। অতঃপর তা সে ফেরত পাবে। বিচারক তা নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারেও লাগাতে পারবেন না এবং বায়তুল মালেও যোগ করবেন না। কারণ কোন মুসলমানের জন্য অপর কোন ব্যক্তির মাল আইনসঙ্গত পন্থা ব্যতীত ভোগদখল করা বৈধ নয়। অপরাধীর সংশোধন হওয়ার ব্যাপারে বিচারক নিরাশ হলে তিনি তার আটককৃত মাল জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে পরবেন।[27]
ধারা-৩১ শাস্তির সীমা
তাযীরের আওতায় অপরাধীকে তিরস্কার, সতর্কীকরণ, বেত্ৰাঘাত, সম্পদ আটক ও কয়েদ করা যেতে পারে এবং জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্ৰীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে।
বিশ্লেষণ
অপরাধ যদি হদ্দের আওতাভুক্ত না হয়, যেমন কেউ অপর কাওকেও বলল, তুমি পাপাচারী, চোর, মদখোর ইত্যাদি, তবে এসব ক্ষেত্রে বিচারক অপরাধের তারতম্য অনুযায়ী তিরষ্কার, বেত্ৰাঘাত, কয়েদ ইত্যাদি যে কোন শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু যে উবাদা ইবনুস সমিত রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে আহাম্মক বলেছিলেন তা তাযীরের আওতায় তিরস্কার অর্থেই বলেছিলেন, তাঁকে অপমান বা খাটো করার উদ্দেশ্যে বলেন নি। ফকীহগণ এই বিষয়ে একমত যে, তাযীরের পরিমাণ হদ্দের পরিমাণের চাইতে কম হতে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি হদ্দ-বহির্ভুত অপরাধে হদ্দের সমান শাস্তি দিল সে সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’
অবশ্য সার্বিক কল্যাণের দিক বিবেচনা করে রাষ্ট কর্তৃপক্ষ হদ্দের পরিমাণের অধিক শাস্তিও দিতে পারেন।[28]
জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে অপরাধীকে তাযীরের আওতায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। হানাকী ফিকহ-এ এর জন্য ‘রাজনৈতিক হত্যা’ পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। বিচারক যদি মনে করেন যে, অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ব্যতীত সামাজিক নিরাপত্তা ও শাস্তি-শৃংখলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে সেই ক্ষেত্রে তিনি অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দিতে পারেন। যেমন কোন ব্যক্তি বারবার চৌর্যকর্মে, মদপানে বা পশ্চাদ্বারে যিনায় লিপ্ত হলে অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায়।[29]
সালামা ইবনুল আকওয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে থাকাকালে তাঁর নিকট এক গুপ্তচর আসল এবং তাঁর কোন এক সাহাবীর নিকট বসে কথাবার্তা বলল, অতঃপর কেটে পড়ল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন; তোমরা তার অনুসন্ধান করে তাকে হত্যা কর। আমি (সালামা) তাদের সকলের আগে যেয়ে তাকে হত্যা করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুপ্তচরের সঙ্গের মালপত্র আমাকে প্ৰদান করেন।’[30]
‘এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গালিগালাজ করত। তাকে বারণ করা হলেও সে বিরত থাকল না। এমনকি তাকে হুমকি প্ৰদান করা হলেও সে তাতে কৰ্ণপাত করল না। এক মুসলিম ব্যক্তি তাকে হত্যা করলে বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উত্থাপিত হল। তিনি তার রক্ত নিষ্ফল বলে রায় দিলেন।’[31]
শরীআত তাযীরের আওতাভুক্ত অপরাধ এবং শাস্তি বৰ্ণনা করেছে। বিচারক বিবেচনা করে দেখবেন যে, অপরাধকর্মটি শরীআতের কোন নস দ্বারা সমর্থিত এবং এই জাতীয় অপরাধের জন্য শরীআত কোন ধরনের শাস্তির প্রস্তাব করে, অতঃপর তিনি তার রায় প্ৰদান করবেন। শরীআত বিচারককে এই অধিকার প্রদান করেছে যে, তিনি তার বিবেচনামতে অপরাধীকে এক বা একাধিক প্রকারের শাস্তি প্রদান করতে পারেন। অপরাধের ধরন, অপরাধ সংঘটনের পরিবেশ এবং অপরাধীর অবস্থা বিবেচনা করে তিনি তাকে ছেড়েও দিতে পারেন। তিনি নিজ বিবেচনায় হালকা অথবা কঠোরতর শাস্তির ব্যবস্থাও করতে পারেন।
ধারা–৩২ (ক) তাযীর নির্ধারণকারী কর্তৃপক্ষ
(ক) আইন প্ৰণয়নকারী কর্তৃপক্ষ তাযীরের আওতাধীন অপরাধসমূহের শাস্তি নির্ধারণ করবেন।
(খ) তাযীরের আওতায় প্রদত্ত যে কোন শাস্তি নস দ্বারা সমর্থিত হতে হবে।
বিশ্লেষণ
তাযীরের আওতায় যেসব শাস্তি প্ৰদান করা হবে তা নস দ্বারা সমর্থিত হতে হবে। ইসলামী আইনের অধীনে তাযীরের আওতাভুক্ত শাস্তিসমূহ হলো, উপদেশ দান, (সাময়িকভাবে) সম্পর্কচ্ছেদ, সাতকীকরণ, ভীতিপ্ৰদৰ্শন, হালকা মারধর, বেত্ৰাঘাত, তিরস্কার, কয়েদ, জরিমানা, ক্ষতিপূরণ, জনসমক্ষে অপমান, নির্বাসন, ফাঁসি, মৃত্যুদণ্ড ইত্যাদি। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে,
‘তোমরা তাদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, অতঃপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ মহান, শ্রেষ্ঠ।’ (সূরা নিসা: ০৪ : ৩৪) ।
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা পৰ্যায়ক্রমে তিন প্রকারের তাযীর অনুমোদিত হয়েছে–সদূপেদেশ, সম্পর্কত্যাগ ও মারধর। উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের কোনটিই হন্দের আওতাভুক্ত শাস্তি নয়। অতএব যেসব অপরাধের ক্ষেত্রে হদ্দ বা কাফফারা নির্ধারিত নেই, সেসব ক্ষেত্রে উপরোক্ত শাস্তি প্ৰযোজ্য হতে পারে। বিছানা পৃথক করা ছাড়াও সম্পর্কত্যাগ বিভিন্নরূপে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যে তিনজন সাহাবী তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে মদীনায় থেকে যান, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর জনগণকে তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে, সামাজিক লেনদেন করতে, এমনকি তাদের স্ত্রীদেরকে তাদের সাথে একত্রে বসবাস করতে নিষেধ করেন, যাবত না আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ফয়সালা এসে যায়। উমার ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু সুবাই নামক এক ব্যক্তিকে বেত্ৰাঘাত ও নির্বাসন দণ্ড প্ৰদান করেন এবং জনগণকে তার সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেন। যে প্রদেশে তাকে নির্বাসনে প্রেরণ করা হয়েছিল সেই প্রদেশের আমেল (প্ৰশাসক) উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে অপরাধীর সংশোধন হওয়ার কথা অবহিত করার পর তিনি তার উপর হতে উক্ত দণ্ড প্রত্যাহার করেন।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, :
‘যে ব্যক্তি তার ঘরের এমন জায়গায় তার চাবুক ঝুলিয়ে রাখে যেখান থেকে তা তার পরিবারের লোকদের নজরে পড়ে, আল্লাহ্ তাআলা তাকে অনুগ্রহ করুন।’
‘তোমার পরিবার থেকে লাঠি তুলে রেখো না।’[32]
উপরোক্ত দুটি হাদীস দ্বারা শাস্তির ভয় দেখানো ও সতর্ক করার কথা বলা হয়েছে এবং শিশুদেরকে দশ বছরে পদার্পণের পর নামাযে অভ্যন্ত করার জন্য মৃদু প্রহারের কথা বলা হয়েছে। অপরাধীকে তিরষ্কারের শাস্তিও নস দ্বারা প্ৰমাণিত।
‘আবু যার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে গালি দেই এবং তার মায়ের বংশের খোটা দিয়ে তার আত্মসম্মানে আঘাত হানি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আবু যার! তুমি তার মায়ের বংশের খোটা দিয়ে তার আত্মসন্মানে আঘাত হানলে! তোমার মধ্যে এখনো জাহিলিয়াতের কালিমা রয়ে গিয়েছে।’[33]
‘একটি ক্রীতদাস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে উপস্থিত জনসমক্ষে আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। আবদুর রহমান রাযিয়াল্লাহু আনহু ক্রোধান্বিত হয়ে দাসটিকে এই বলে গালি দেন যে, হে কৃষ্ণাঙ্গ নারীর পুত্র। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত রাগান্বিত হন এবং নিজের ডান হাত উপরে উত্তোলন করে বলেন, ন্যায়সংগত সনদ ব্যতীত কৃষ্ণাঙ্গিনীর পুত্রের উপর শ্বেতাঙ্গিনীর পুত্রের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। আবদুর রহমান রাযিয়াল্লাহু আনহু অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তার গণ্ডদেশ মাটিতে রেখে ক্রীতদাসকে বলেন, তুমি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত একে পদদলিত কর।’[34]
উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ের প্রথমোক্তটিতে আবু যার রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে এবং শেষোক্তটিতে আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তিরষ্কার করেন।
কারাগারে নিক্ষেপ এবং ফাঁসির দণ্ডও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বৰ্ণিত আছে যে, তিনি এক ব্যক্তিকে যিনার অপবাদ আরোপের অভিযোগে আটক করেছিলেন এবং আবু নাব নামের এক ব্যক্তিকে পাহাড়ের উপর জীবন্ত ফাঁসি দিয়েছিলেন।’[35]
তাযীরের আওতায় মৃত্যুদণ্ড প্রদানের শাস্তিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘তোমরা এক ব্যক্তির শাসনাধীনে থাকা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি এসে তোমাদের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করতে চায়। তবে তোমরা তাকে হত্যা কর।’[36]
‘অপর বর্ণনায় আছে, অচিরেই অনিষ্ট ও বিপদাপদের প্রাদুর্ভাব হবে। কোন ব্যক্তি এই উম্মতের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করতে চাইলে তোমরা তাকে তরবারির আঘাত হান (হত্যা কর), সে যেই হোক না কেন।’[37]
অনুরূপভাবে অর্থদণ্ড, ক্ষতিপূরণ, অপরাধীকে জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করা (বিশেষত অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি, প্রতারণা ইত্যাদির ক্ষেত্রে), নির্বাসনদণ্ড ইত্যাদিও সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।
ধারা–৩২ (খ) নস ও নস–বহির্ভূত তাযীর
(ক) তাযীরের আওতাভুক্ত যেসব অপরাধ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় শাস্তি-শৃংখলার জন্য স্থায়ীভাবে ক্ষতিকারক সেসব অপরাধ নস দ্বারা চিহ্নিত;
(খ) রাষ্ট্র যেসব কাজ পরবেশ-পরিস্থিতির প্ৰেক্ষাপটে রাষ্ট্ৰীয় সংগঠন ও শৃংখলার পরিপন্থী বিবেচনা করবে তাকে অবৈধ ঘোষণা করবে এবং এজন্য যে নীতিমালা প্ৰণীত হবে তা সংশ্লিষ্ট কাজটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়ায় পক্ষে নস-এর স্থলাভিষিক্ত বিবেচিত হবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী শরীআতে তাযীরের আওতাভুক্ত অপরাধের প্রমাণে নস বিদ্যমান। ইসলামী শরীআত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে (উলিল আমর) রাষ্ট্ৰীয় সংগঠন, শৃংখলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের এবং এই নীতিমালা লংঘনকারীর শাস্তিবিধানের অধিকার প্রদান করেছে। একথা সুস্পষ্ট যে, তাযীরের অধীন কোন কোন অপরাধ প্রমাণের জন্য কুরআন-সুন্নাহ্র নস বিদ্যমান থাকলেও কোন কোন অপরাধ প্রমাণের জন্য এই জাতীয় নস বিদ্যমান নেই। যেমন শরীআতে সূদের লেনদেন হারাম তথা একটি অপরাধকর্ম হিসেবে নস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোন নস-এ এর শাস্তি বর্ণিত হয়নি। এক্ষেত্রে শাস্তির ধরন ও পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তবে শর্ত হল, সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা শরীআতের বিধান, তার প্রাণসত্তা ও তার উসূলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
ধারা-৩২ (গ) হদ্দ ও তাযীরের সমাবেশ
প্রয়োজনবোধে হদ্দের আওতাভুক্ত অপরাধীকে একই সংগে হাদ ও তাযীরের শাস্তি প্ৰদান করা যায়।
বিশ্লেষণ
ইসলামী আইনের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী হদ্দের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধীকে একইসঙ্গে তাযীরের আওতায় শাস্তি দেয়া যায় না। কিন্তু জনস্বার্থ ও শাস্তি-শৃংখলা রক্ষার প্রয়োজনে একই সঙ্গে উভয়বিধ শাস্তি প্ৰদান করা যেতে পারে। এই বিষয়ে চার মাযহাবের রায়ই বিদ্যমান আছে। ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত হদ্দ ও কিসাসের আওতাভুক্ত অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীকে একইসঙ্গে হদ্দ ও তাযীরের শাস্তি প্ৰদান করা যায়।[38]
ইমাম শাফিঈ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতেও উভয়বিধ শাস্তি একত্রে প্রদান করা যেতে পারে। যেক্ষেত্রে আইনত হত্যাকারীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যায় না, যেমন পিতাপুত্রকে হত্যা করলে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত না করে তার উপর দিয়াত প্ৰদান বাধ্যকর হয়, সেই ক্ষেত্ৰে দিয়াত আরোপের সঙ্গে সঙ্গে তাযীরের আওতায়ও শাস্তি প্ৰদান করা যায়। ইমাম শাফিঈয় মতে মদ্যপানের শাস্তি চল্লিশ বেত্ৰাঘাত, এর অতিরিক্ত বেত্ৰাঘাত করা হলে তা তাযীর হিসাবে গণ্য।[39]
ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে অবিবাহিত যিনাকারীকে নির্ধারিত শাস্তি প্রদানের অতিরিক্ত নির্বাসন দণ্ড প্ৰদান করা হলে এই শেষোক্ত দণ্ড তাযীর হিসাবে গণ্য হবে। তাঁর মতে মূল শাস্তির সাথে নির্বাসন দণ্ডও যুক্ত হতে পারে।’[40]
আরো পড়ুন: আইন ও ইসলামি আইন
তথ্যনির্দেশিকা
[1] মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃষ্ঠা : ৩১৬
[2] লিসানুল সআরাব, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৩০২৭
[3] কাওয়াইদুল ফিক্হ, পৃষ্ঠা : ৩৮৩
[4] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৩৩, আল-হিদায়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪৮৬ আরও দ্রষ্টব্য ইমাম যায়লাঈর তাবঈনুল হাকাইক (শরহে কানযিদ দাকাইক), খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৬৩; ইমাম সারাখসীর আল-মাবসূত, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ৩৬; ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৪২
[5] ড. আবদুল আযীয় আল-আমের, আত-তাযীর ফিশ-শারীআতিল ইসলামিয়্যা (উর্দু অনু.), পৃষ্ঠা : ১৭-১৮।
[6] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২০৮ ।
[7] শারহু ফাতহিল কাদীর, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩২।
[8] ইবনে মানজূর, লিসানুল আরাব, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩৬৫২, কাওয়াইদুল ফিক্হ, পৃষ্ঠা : ৪৩০, কিতাবুল ফিক্হ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ২৪৪
[9] মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃষ্ঠা : ৩৬৪ ।
[10] স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি অর্থাৎ স্বাধীন ব্যক্তির বদলে ও স্বাধীন ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হবে যে মূল হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, অন্য কোন ব্যক্তি নয়। তদ্রুপ ক্রীতদাসের বদলে সেই ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে সেই নারী মৃত্যুদণ্ডের শান্তি ভোগ করবে যে মূল অপরাধ করেছে । কোন নারী কোন নারীকে হত্যা করলে এ নারীই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হবে, অন্য কেউ নয়। আলোচ্য আয়াতের তাৎপর্য এটিই ।
[11] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, কিতাযুল জিনায়াত, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৪, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : 298, মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃষ্ঠা : ২১২
[12] মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃষ্ঠা : ৫৪, ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৪
[13] আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৯৮।
[14] আল-মুহাযযাব, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩০৬, মাওয়াহিবুল জালীল, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা : ১৯-২০; আল-মুগনী মাআ শারহিল কাবীর, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ৩৪৭; হাশিয়া ইবনে আবীদীন, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩৫১: যায়লাঈ, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২০৭ ।
[15] তাবঈনুল হাকাঈক, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২০৮
[16] আল-মুহাযযাব, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩০৬
[17] মাওয়াহিবুল জালীল, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩১৯।
[18] আল-ইকনা, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৬৮ ৷
[19] নিহায়াতুল মুহতাজ, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ১৮; আল-ইফনা, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৬৯; হাশিয়া ইবনে আবীদীন, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২৫১-25৯, তাবসিরাতুল হুক্কাম, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৬।
[20] শারহু ফাতহিল কাদীর, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১১৭
[21] ইবনে হাযম, আল-ইহকাম ফী উসূলিল আহকাম, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪৩; আল-ইকনা, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২৭০-২৭১; মাওয়াহিবুল জালীল, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩২০; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৬৩; শারহু মুসাল্লামিস সুবৃত, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১১১-১১২।
[22] আল-মুসতাসফা, খণ্ড : ১, ৭৫-৭৬; আল-ইহকাম ফী উসূলিল আহকাম (আমিদী), খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৭০; তুহফাতুল মুহতাজ, খণ্ড : ৮, ১৮; মাওয়াহিবুল জালীল, খণ্ড : ৬, ৩২০; আহকামুস্ সুলতানিয়্যা, পৃষ্ঠা : ৭১২; তাবসিরাতুল হুক্কাম, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৫৯-৬০।
[23] মাওয়াহিবুল জালীল, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩২০-এর বরাতে আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড : ১, ধারা ১১০।
[24] আল-ফিকহুল ইসলামী আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২০৫ ; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৬৩।
[25] আবু দাউদ, সালাত, বাব ২৬, হাদীস নং ৪৯৪ ; তিরমিযী, সালাত, হাদীস নং ৪০৭; মুসনাদে আহমাদ ।
[26] আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২০৮ ; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৬৩, ৬৪, ৬৫ ।
[27] আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২০২ : নিম্নোক্ত গ্রন্থাবলীর বরাতে, তাবঈনুল হাকাইক শারহি কানযিদ দাকাইক, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২০৮; ফাতহুল কাদীর, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২১২ ; হাশিয়া ইব্দ আবিদীম শামী, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৯৫, এবং অন্যান্য মাযহাবের গ্রন্থাবলী ৷
[28] রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৭৯
[29] রদ্দুল মুহতার, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৭৯ ; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২০০-২০১।
[30] নায়লুল আওতার, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ৮ বাব কাতলিল জাসস; মুসনাদে আহমাদ, সহিহ বুখারি ও সুনানে আবূ দাউদ হাদীস নং ২৬৫৪ বরাতে ।
[31] নায়লুল আওতার, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২১৩-২১৪, সুনানে আবূ দাউদ, সুনানে নাসাঈ
[32] আত-তাশরীউল জানাঈ, খণ্ড : ১ পৃষ্ঠা : ৭০৩
[33] আত-তাশরীউল জানাঈ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭০৩, ধারা ৪৮৯ ।
[34] আত-তাশরীউল জানাঈ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭০৩।
[35] আত-তাশরীউল জানাঈ, খণ্ড : ১, ধারা ৪৮২, ৪৮৬ ।
[36] আত-তাশরীউল জানাঈ, খণ্ড : ১, ধারা ৪৮০ ।
[37] আত-তাশরীউল জানাইল ইসলাম, খণ্ড : ১ পৃষ্ঠা : ৬৮৭ ধারা ৪৮০ ।
[38] মাওয়াহিবুল জালীল, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৪৭, ২৬৮; শারহুদ দুরায়দীর, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ২২৪ ।
[39] আসনাল মাতালিব, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১৬২; নিহায়াতুল মুহতাজ, খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ১৮
[40] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৩৯; ফাতহুল কাদীর, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১৩৬