০৩. মানবজীবনের বিরুদ্ধে অপরাধ
ধারা-৩৩ কতল (হত্যা)-এর সংজ্ঞা
যে কাজের দ্বারা মানবদেহ থেকে প্রাণের সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায় তাকে কতল বলে।
বিশ্লেষণ
কতল শব্দের অর্থ হত্যা বা হত্যা করা। এখানে শব্দটি মানবহত্যার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। লিসানুল আরাব নামক আরবী ভাষার বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, কোন কিছুর আঘাতে, অস্ত্রের সাহায্যে, পাথর নিক্ষেপে, বিষ প্রয়োগে বা অন্য কোন উপায়ে মানুষের প্রাণনাশকে কতল (হত্যা) বলে।[1] মুজামু লুগাতিল ফুকাহা গ্রন্থে বলা হয়েছে, দেহ থেকে প্রাণের সম্পর্ককে ছিন্ন করে দেওয়ার কাজকে কতল (হত্যা) বলে।[2] শিরকের অমার্জনীয় অপরাধের পর ইসলামে মানবহত্যাই সর্বাধিক মারাত্মক অপরাধ। একজন মানুষের জীবন বাঁচানো যেমন গোটা মানবজাতির জীবন বাঁচানোর সমতুল্য, তদ্রূপ একজন মানুষের জীবনসংহার গোটা মানবজাতির জীবনসংহারের সমতুল্য।[3]

ধারা-৩৪ কতল-এর শ্রেণীবিভাগ
ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী কতল নিম্নোক্ত পাঁচ শ্রেণীতে বিভক্ত–
(ক) কতলে আম্দ, (খ) কলে শিব্হে আম্দ, (গ) কতলে খাতা, (ঘ) কতলে জারী মাজরীল খাতা ও (৬) কতল বিত-তাসাব্বুব।[4]
ধারা-৩৫ কতলে আম্দ (ইচ্ছাকৃত হত্যা)
কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে যখন এমন কার্য করে যার দ্বারা অন্য ব্যক্তির প্রাণনাশ হয় তখন তার সেই কার্যকে ‘কতলে আম্দ’ বলে এবং এর জন্য কিসাস বাধ্যতামূলক হয়।
বিশ্লেষণ
ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে অস্ত্র বা অনুরূপ কিছুর সাহায্যে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে হত্যাকাণ্ড ঘটাইলে কেবল তাকেই কতলে আম্দ (Ineniona Murder) বলা যাবে এবং কিসাস (মৃত্যুদণ্ড) বাধ্যতামূলক হবে। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে কতলে আম্দ সাব্যস্ত করার জন্য অস্ত্রের ব্যবহার শর্ত নয়। তাঁদের মতে অস্ত্রের সাহায্য ছাড়াও কতলে আম্দ সংঘটিত হতে পারে। যেমন পানিতে ডুবিয়ে, শ্বাসরুদ্ধ করে, বিষ পান করিয়ে বা উচ্চ স্থান থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হলে তাও কতলে আম্দ হিসাবে গণ্য হবে এবং কিসাস বাধ্যতামূলক হবে।[5]
ধারা-৩৬ কিসাস বাধ্যতামূলক হওয়ার শর্তাবলী
নিম্নোক্ত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকলে কিসাস বাধ্যতামূলক হয়, এর কোন একটির অবর্তমানে কিসাল রহিত হয়ে যায়–
(ক) হত্যাকারী বালেগ ও বুদ্ধিজ্ঞানসম্পন্ন হলে এবং স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে ও সরাসরি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
(খ) নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর অংশ নয়; জুয বা অংশ বলতে পিতা, মাতা ও তাদের ঊর্ধ্বতনগণকে বুঝায় এবং নিহত ব্যক্তি মাসূমুদ-দাম; মাসূমুদ-দাম বলতে সে যে রাষ্টে নিহত হয়েছে সে রাষ্ট্রের নাগরিক অথবা নিরাপত্তা লাভকারী।
(গ) নিহতের ওয়ারিসগণকে কিসাসের দাবিদার হতে হবে।
বিশ্লেষণ
হত্যাকারী বালেগ ও বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হলেই তার উপর কিসাস কার্যকর করা যাবে। সে নাবালেগ বা মস্তিষ্ক বিকৃত হলে তার উপর কিসাস কার্যকর করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, সে স্বেচ্ছায় ও সরাসরি হত্যা করেছে এবং যাকে হত্যা করা লক্ষ্য ছিল তাহাকেই হত্যা করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘ইচ্ছাকৃত হত্যা অবশ্যই প্রতিশোধ গ্রহণযোগ্য। তবে নিহতের ওলী মাফ করে দিলে ভিন্ন কথা।’[6]
তৃতীয়ত, নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীর অংশ অর্থাৎ পুত্র বা কন্যা নয়। কারণ পুত্র বা কন্যার হত্যা পিতা বা মাতা হলে কিসাস রহিত হয়ে যাবে কিন্তু তাযীরের আওতায় হত্যাকারী শাস্তিযোগ্য হবে, তা ছাড়া নিহত ব্যক্তির রক্ত নিষ্পাপ হতে হবে অর্থাৎ সে যেই রাষ্ট্রে নিহত হয়েছে তাকে সেই রাষ্ট্রের অধিবাসী অথবা নিরাপত্তা লাভকারী হতে হবে। অনন্তর নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ কিসাসের দাবি না করলে কিসাস রহিত হয়ে যাবে।[7]
ধারা-৩৭ কতলে শিব্হে আম্দ
যেরূপ বস্তু দ্বারা সাধারণত হত্যা সংঘটিত হয় না সেরূপ কোন বস্তু যারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হলে সেই হত্যাকে ‘কতলে শিব্হে আম্দ’ বলে[8] এবং এক্ষেত্রে দিয়ে বাধ্যতামূলক হয়।
বিশ্লেষণ
ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে, দেহ কাটে না বা দেহে বিদ্ধ হয় না এরূপ বস্তু দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা সংঘটিত হলে তাকে কতলে শিব্হে আম্দ বলে। আর ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে, যেসব বস্তু দ্বারা সাধারণত হত্যা করা যায় না এরূপ বস্তু, যেমন ক্ষুদ্র পাথর, ক্ষুদ্র লাঠি, চাবুক, কলম ইত্যাদি দ্বারা হত্যা সংঘটিত হলে তাকে কতলে শিব্হে আম্দ বলে।[9] এক্ষেত্রে কিসাস বাধ্যতামূলক হওয়া সন্দেহপূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে কঠোর দিয়াত বাধ্যতামূলক হবে। এক্ষেত্রে দিয়াত বাধ্যতামূলক হওয়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কতলে শিব্হে আম্দ-এর ক্ষেত্রে হত্যাকারীর হত্যা করার ইচ্ছা ছিল কি না এই ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ থাকায় একে কতলে শিব্হে আম্দ (ইচ্ছাকৃত হত্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বা সংশয়পূর্ণ)-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ হত্যাকারী এমন বস্তু সাহায্যে হত্যা করেছে যা দ্বারা সাধারণত হত্যা করার ইচ্ছা থাকে না।[10] এক্ষেত্রে কাফফারাও বাধ্যতামূলক হবে কি না তাতে মতভেদ আছে।[11]
ধারা-৩৮ কতলে খাতা
কোন ব্যক্তির অনিষিদ্ধ কাজের পরিণতিতে ভুলে বা অসাবধানতাবশত যে হত্যা সংঘটিত হয় তাকে ‘কতলে খাতা’ বলে। এক্ষেত্রে দিয়াত ও কাফফারা বাধ্যতামূলক হয়।[12]
বিশ্লেষণ
‘কতলে খাতা’ অর্থ ভূলবশত হত্যা। এক্ষেত্রে অনিষিদ্ধ কাজ করাকালে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন না করার কারণে ভুলবশত হত্যা সংঘটিত হয় এবং হত্যাকারীকে তার অসতর্কতার জন্য দায়ী করা হয়। কারণ কোন অনিষিদ্ধ কাজ অবশ্যই কারো ক্ষতি সাধন না করার শর্তে করা যেতে পারে। কেননা কর্তা সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়া যেতো।[13]
এই ভুল কর্তার ধারণার মধ্যেও হতে পারে, কাজের মধ্যেও হতে পারে এবং ধারণা ও কাজ উভয়ের মধ্যেও হতে পারে। যেমন কোন ব্যক্তিকে শিকারের পশু ধারণা করে শিকারী তার প্রতি তীর বা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি নিক্ষেপ করল। এক্ষেত্রে অপরাধীর কাজের মধ্যে ভুল হয় নি, কারণ সে যা মারতে চেয়েছে। তা-ই মেরেছে, বরং ভুল হয়েছে তার ধারণা বা অনুমানের মধ্যে।[14]
কর্তার কাজের মধ্যেও ভুল হতে পারে। যেমন এক শিকারী একটি হরিণের প্রতি গুলি নিক্ষেপ করল, কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তা ঝোপের মধ্যে উপবিষ্ট কোন মানুষের দেহে বিদ্ধ হলো, এবং ফলে সে মারা গেল।[15]
তৃতীয়ত, ধারণা-অনুমান ও কাজ উভয়ের মধ্যে ভুল হতে পারে। যেমন শিকারী কোন মানুষকে শিকারের পশু ধারণা করে তার প্রতি গুলি ছুঁড়ল এবং তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আরেক ব্যক্তির দেহে বিদ্ধ হল, ফলে সে মারা গেল। এক্ষেত্রে সে মানুষকে শিকারের পশু মনে করে নিজের অনুমানে ভুল করেছে এবং যার প্রতি গুলি নিক্ষেপ করেছে তা তার পরিবর্তে অন্য ব্যক্তির গায়ে লাগেছে। মানুষ যুগপৎভাবে মস্তিষ্ক ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উভয়ের সাহায্যে কর্ম সম্পাদন করে। তাই কখনও তার মস্তিষ্কও ভুল করতে পারে, কখনও তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ভুল করতে পারে এবং কখনও উভয়টিই ভুল করতে পারে।[16]
ধারা-৩৯ কতলে শিব্হে খাতা
ভুল বা অসাবধানতা ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তির যে কাজের দ্বারা হত্যা সংঘটিত হয় তাকে ‘কতলে শিব্হে খাতা’ বলে এবং এই ক্ষেত্রেও দিয়াত ও কাফফারা বাধ্যতামূলক হয়।[17]
বিশ্লেষণ
কতলে খাতার ক্ষেত্রে অপরাধীর একটি নির্দিষ্ট কর্মের সংকল্পও থাকে এবং সে কর্ম সম্পাদনও করে। কিন্তু এক্ষেত্রে অপরাধীর সংকল্প ব্যতীতই অপরাধকর্ম সংঘটিত হয়, তবে তার কর্ম ও সংঘটিত অপরাধের মধ্যে কারণ-এর সংযোগ (Reaion o cause and eec) বিদ্যমান থাকে। যেমন ঘুমন্ত ব্যক্তি পার্শ্ব বদল করাকালে অপর ব্যক্তির উপর পতিত হলো, এবং ফলে সে নিহত হল। অথবা কোন ব্যক্তি ঘটনাক্রমে কোন উচ্চ স্থান থেকে পতিত হয়ে অন্য ব্যক্তির উপর পড়ল এবং ফলে শেষোক্ত ব্যক্তি নিহত হল। উদাহরণ দুটি বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, অপরাধীর কর্ম ও নিহত ব্যক্তির মৃত্যুর মধ্যে ‘কারণ’-এর সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান।
অনিচ্ছা ও অসতর্কতাবশত হত্যা সংঘটিত হওয়ায় তা কতলে পাতার অন্তর্ভুক্ত এবং এজন্য দিয়াত প্রদান বাধ্যতামূলক। আর অপরাধীর কর্ম ও হত্যার মধ্যে সরাসরি ‘কারণ’-এর সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় কাফফারা আদায় করা অপরিহার্য।[18]
ধারা-৪০ কতল বিত-তাসাব্বুব
কোন ব্যক্তির প্রয়োজনীয় সতর্কতার অভাবজনিত কাজের ফলে অন্য ব্যক্তির প্রাণনাশ হলে তাকে ‘কতল বিত-তাতাব্বুব’ বলে।
বিশ্লেষণ
এক্ষেত্রে অপরাধী সরাসরি হত্যা করে না, বরং তার সরবরাহকৃত উপকরণই হত্যার কারণ হয়। অপরাধী যে কাজটি করে তা তার জন্য বৈধ, কিন্তু সে কর্ম সম্পাদনে বৈধ সীমা লঙ্ঘন করে। এখানে অপরাধীর কর্মে ও হত্যার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবে কর্মটি হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন কোন ব্যক্তি যাতায়াতের রাস্তার পাশে গর্ত খনন করল এবং তাতে পতিত হয়ে অপর ব্যক্তি নিহত হল। অথবা কেউ পথিপার্শ্বে একটি প্রকাণ্ড পাথর রাখল এবং পথিক তার সাথে ধাক্কা খেয়ে নিহত হল।
যদিও একদিক থেকে একে কতলে খাতার অন্তর্ভুক্ত মনে হয়, কিন্তু অন্য দিক থেকে তা কতলে খাতার আওতায় পড়ে না। যেমন অপরাধীর খননকার্যের দ্বারা কাওকেও হত্যা করার ইচ্ছা ছিল না, বরং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন না করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই তা কতলে খাতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে কতলে খাতার ক্ষেত্রে অপরাধীর কাজের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে হত্যা সংঘটিত হয়, আর এখানে তার সরবরাহকৃত ‘কারণ’ দ্বারা হত্যা সংঘটিত হয়।[19]
সারসংক্ষেপ
কতল (নরহত্যা) পাঁচ প্রকার।
(১) কতলে আম্দ–সরাসরি নরহত্যা, এতে ইচ্ছা ও কর্ম উভয়ই বিদ্যমান।
(২) কতলে শিব্হে আম্দ হলো, এমন বস্তু দ্বারা নরহত্যা যা সাধারণভাবে হত্যা সংঘটনে ব্যবহৃত হয় না। এতে অপরাধীর ইচ্ছার বিদ্যমানতা সংশয়পূর্ণ।
(৩) কতলে খাতা–তা ভুলবশত নরহত্যা। এই ভুল ইচ্ছারও হতে পারে, কর্মেরও হতে পারে অথবা উভয়েরও হতে পারে।
(৪) কতলে শিব্হে খাতা–তা অনিচ্ছাকৃত ও ভুলবশত নরহত্যা।
(৫) কতল বিত-তাসাব্বুব–তা সেই প্রকারের নরহত্যা, যা প্রয়োজনীয় সতর্কতার অভাবের ফল।
ধারা-৪১ কতলে আম্দ-এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
কতলে আম্দ হলে তার শাস্তিস্বরূপ হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
বিশ্লেষণ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالْأُنْثَى بِالْأُنْثَى
‘হে মুমিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে (সেই) স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে (সেই) ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে (সেই) নারী’ (সূরা বাকারা: ০২ : ১৭৮) ।
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ
‘তাদের জন্য তাতে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ’ (সূরা মাইদা: ০৫ : ৪৫) ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’[20]
ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমাদের পূর্ববর্তী নবীগণের শরীআতের কোন বিধান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ জবানে রহিত ঘোষণা না করে থাকলে তা অবশ্যই আমাদের উপর প্রযোজ্য হবে।[21] অতএব স্বাধীন ব্যক্তিকে বা দাসকে অথবা দাস স্বাধীন ব্যক্তিকে বা দাসকে হত্যা করলে, নারী পুরুষকে বা পুরুষ নারীকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
ধারা-৪২ কিসের অধিকারী কারা
নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশগণই কিসাসের অধিকারী, অন্য কেউ নয়, তার কিসাস দাবি করলে তা কার্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণই কিসাসের দাবিদার। তা তাদের একটি স্বীকৃত অধিকার।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِفْ فِي الْقَتْلِ إِنَّهُ كَانَ مَنْصُورًا
‘কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি তার প্রতিকারের অধিকার দিয়াছি। কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে, সে তো সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে’ (বনী ইসরাঈল: 17 : ৩৩) ।
ধারা-৪৩ কিসের অধিকারীগণ নাবালেগ হলে
(ক) কিসাসের অধিকারীগণের মধ্যে কেউ মালেগ হলে তাদের মধ্যকার বানেগণ তাদের অভিভাবক গণ্য হবে।
(খ) কিসাসের অধিকারীগণের সকলে নাবালেগ হলে সরকার কিসাসের দাবিদার (অধিকারী) হবে।[22]
ধারা-৪৪ কিসাস অনিবার্য হওয়ার পর রহিত হওয়া
হত্যাকারীর মৃত্যু হলে, নিহতের ওয়ারিসগণ হত্যাকারীকে ক্ষমা করলে অথবা অর্থের বিনিময়ে তার সাথে সন্ধি করলে কিসাস রহিত হয়ে যায়।
বিশ্লেষণ
হত্যাকারী মারা গেলে বা নিহত হলে স্বাভাবিকভাবেই কিসাস রহিত হয়ে যাবে। কারণ যেই পাত্রে কিসাস কার্যকর হবে সেই পাত্রই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে দিয়াতও আরোপিত হবে না। নিহতের ওয়ারিস হত্যকারীকে ক্ষমা করলেও কিসাস রহিত হয়ে যায়। যেমন সে বলল, আমি হত্যকারীকে ক্ষমা করে দিলাম, আমি কিসাসের দাবি ত্যাগ করলাম, আমি তাকে দায়মুক্ত করলাম ইত্যাদি। ক্ষমা প্রদানের পর দিয়াত আরোপিত হবে না।[23] নিহতের ওয়ারিস হত্যাকারীর সাথে মাল প্রদানের শর্তে সন্ধি করলেও কিসাস রহিত হয়ে যায়, মালের পরিমাণ কম-বেশি যাহাই হোক।[24]
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ
‘তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে ন্যায়নীতির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার দেয় আদায় করা বিধেয়’ (সূরা বাকারা: ০২ : ১৭৮) ।
ধারা-৪৫ ক্ষমাকারী ওয়ারিসের যোগ্যতা
ক্ষমাকারী ওয়ারিসকে অবশ্যই বালেগ ও বুদ্ধিমান হতে হবে; নাবালেগ বা পাগলের ক্ষমা কার্যকর হবে না।
বিশ্লেষণ
ক্ষমাকারীকে কিসাসের অধিকারী অর্থাৎ নিহতের ওয়ারিস হতে হবে। কারণ হত্যার বিচার পাওয়া তার অধিকার। সে ইচ্ছা করলে তার এই অধিকার ত্যাগও করতে পারে এবং নাও করতে পারে। বিচারক বা অন্য কেউ ক্ষমা করলে তা কার্যকর হবে না। কারণ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ তার জন্য বৈধ নয়। অনন্তর আল্লাহ তায়ালা হত্যাকে ক্ষমার অধিকার কেবল নিহতের ওয়ারিসকেই দান করেছেন (দ্র. ০২: ১৭৭ আয়াত) । তা ছাড়া ক্ষমাকারীকে বালেগ ও বুদ্ধিমান হতে হবে, নাবালেগ ও পাগলের ক্ষমা ধর্তব্য নয়।[25] তাদের অভিভাবক তাদের প্রতিনিধি গণ্য হবে এবং সে তাদের অধিকার প্রয়োগ বা ত্যাগ করতে পারবে।[26]
ধারা-৪৬ নিহতের সকল ওয়ারিশ হত্যাকারীকে ক্ষমা করলে
নিহতের সকল ওয়ারিস বা তাদেরকে হত্যাকারীকে ক্ষমা করলে কিসাস রহিত হয়ে যাবে।
তবে শর্ত থাকে যে, যে বা যারা ক্ষমা করেনি সে বা তারা তাদের স্বীয় অংশ অনুপাতে দিয়াতের অধিকারী হবে।
বিশ্লেষণ
কিসাস বা মৃত্যুদণ্ড বিভাজনের অযোগ্য বিষয়। তাই কোন ওয়ারিস হত্যাকারীকে ক্ষমা করলে তার মৃত্যুদণ্ড রহিত হয়ে যাবে। কারণ মৃত্যুদণ্ড আংশিক কার্যকর করা সম্ভব নয়। এজন্য যারা ক্ষমা করেনি তারা স্বীয় অংশমত দিয়াত (রক্তপণ) প্রাপ্ত হবে। এক্ষেত্রে সাহাবাগণের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উমর ইবনুল খাত্তাব, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদবু ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, একজন ওয়ারিসের ক্ষমা করার ক্ষেত্রে তাঁর অন্যান্য ওয়ারিসের জন্য, যারা ক্ষমা করেনি, দিয়াত ধার্য করেছেন। উপরন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষমা করা হলে…’ আয়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা এমন হত্যাকারীর বিষয়ে নাযিল হয়েছে যাকে নিহতের কোন ওয়ারিস ক্ষমা করেছে এবং কোন ওয়ারিস ক্ষমা করেনি। সুতরাং এক্ষেত্রে হত্যাকারীর উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যতামূলক হবে।’[27]
ধারা-৪৭ দুই হত্যাকারীর একজনকে ক্ষমা করা হলে
হত্যাকারী একাধিক বলে এবং তাদের একমকে ক্ষমা করা হলে কেবল ক্ষমাকারী হত্যাকারীর কিসাস রহিত হবে এবং অন্যদের কিসাস বহাল থাকবে।
বিশ্লেষণ
যেমন দুই বা ততোধিক অপরাধী সম্মিলিতভাবে এক ব্যক্তিকে হত্যা করল। নিহতের ওয়ারিস তাদের মধ্যে এক বা দুইজনকে ক্ষমা করে দিল। এই অবস্থায় যাকে ক্ষমা করা হয়েছে কেবল সে-ই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে, অন্যরা নয়।[28]
ধারা-৪৮ ক্ষমা করার পর ক্ষমাকারী হত্যাকারীকে হত্যা করলে
হত্যাকারীকে ক্ষমা করার পর ক্ষমাকারী যদি তাকে হত্যা করে তবে কিসম্বরূপ ক্ষমাকারীকে হত্যা করা হবে।
বিশ্লেষণ
কোন ব্যক্তি ক্ষমা করে দেওয়ার পর হত্যাকারীকে হত্যা করল। এক্ষেত্রে কিসাস বাধ্যতামূলক হবে। কারণ ক্ষমার পর ক্ষমাকারী ও হত্যাকারী উভয়ের জীবন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমান হয়ে যায়।[29]
ধারা-৪৯ যে ক্ষমা করেনি সে হত্যা করলে
(ক) নিহতের ওয়ারিসের মধ্যে কেউ হত্যাকারীকে ক্ষমা করল এবং কেউ তার ক্ষমার কথা অবহিত হওয়ার পূর্বেই তাকে হত্যা করে ফেলল, এক্ষেত্রে ক্ষমাকারীদের অংশের সমপরিমাণ দিয়াত প্রদান হত্যাকারী ওয়ারিসের উপর বাধ্যতামূলক হবে।
(খ) ক্ষমার কথা জ্ঞাত হয়ে এবং ক্ষমা করার পর হত্যা করা নিষিদ্ধ জেনেও কোন ওয়ারিস হত্যাকারীকে হত্যা করলে কিসাস বাধ্যতামূলক হবে।
বিশ্লেষণ
নিহতের দুইজন ওয়ারিসের মধ্যে একজন হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিল এবং অপরজন তাকে হত্যা করল। এক্ষেত্রে লক্ষ্য করতে হবে যে, অপরাধীকে হত্যা করার সময় ক্ষমাকারী ওয়ারিসের ক্ষমার কথা হয় সে অবহিত ছিল না, যেমন নিহতের চারজন ওয়ারিসের মধ্যে তিনজন হত্যাকারীকে ক্ষমা করল এবং অপরজন হত্যাকারীকে হত্যা করল। বিচারক মোট চার লক্ষ টাকা দিয়াত ধার্য করলেন। এক্ষেত্রে শেষোক্ত হত্যাকারী প্রথমোক্ত হত্যাকারীর ওয়ারিসগণকে তিন লক্ষ টাকা দিয়াত প্রদান করবে।
অথবা সে ক্ষমা করার কথা অবহিত ছিল, কিন্তু ক্ষমা করে দেওয়ার পর যে তাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ তা জানতো না। এক্ষেত্রে শেষোক্ত হত্যাকারী প্রথমোত্ত হত্যাকারীর ওয়ারিসগণকে ক্ষমাকারীদের অংশের সমপরিমাণ দিয়াত প্রদান করবে। আর ক্ষমার কথা জ্ঞাত হয়ে বা ক্ষমা করার পর হত্যা করা নিষিদ্ধ জেনেও অপরাধীকে হত্যা করলে কিসাস অপরিহার্য হবে।[30]
ধারা-৫০ আহত ব্যক্তি অপরাধীকে ক্ষমা করলে
আহত ব্যক্তি আহতকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার পর মারা গেলে ক্ষমা কার্যকর হবে না এবং কিসাস অপরিহার্য হবে।
বিশ্লেষণ
কিসাস গ্রহণ ওয়ারিসগণের অধিকার। অতএব আহত ব্যক্তির ক্ষমা প্রদান তাদের অধিকার রহিত হবে না।[31]
ধারা-৫১ আহতের ওয়ারিশ ক্ষমা করলে
আহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ আহতকারীকে ক্ষমা করার পর আহতের মৃত্যু হলে এই ক্ষমা শুদ্ধ ও কার্যকর হবে।[32]
ধারা-৫২ ওয়ারিসের উপস্থিতি
কিসাস কার্যকর করার সময় সকল ওয়ারিসের উপস্থিতি প্রয়োজন কোন ওয়ারিসের অনুপস্থিতিতে কিসাস কার্যকর করা যাবে না।
বিশ্লেষণ
কিসাস কার্যকর করার জন্য সকল ওয়ারিসের উপস্থিত থাকা জরুরী। কোন ওয়ারিস অনুপস্থিত থাকলে নিশ্চিতভাবে তার মতামত না জানা পর্যন্ত কিসাস কার্যকর করা বৈধ নয়। কারণ অনুপস্থিত ওয়ারিস হত্যাকারীকে হয়ত বা ক্ষমা করে দিতে পারে অথবা অর্থের বিনিময়ে হত্যাকারীর সাথে সন্ধি করতে পারে। এই অবস্থায় কিসাস কার্যকর করা হলে তা অনুপস্থিত ওয়ারিসের অধিকারে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ গণ্য হবে।[33]
ধারা-৫৩ বিভিন্ন পন্থায় হত্যা
শ্বাসরুদ্ধ করে, আগুনে ফেলে, পানিতে নিক্ষেপ করে, উচ্চ স্থান থেকে ফেলে দিয়ে, বিষাক্ত পদার্থ পান করিয়ে, মাটিতে পুঁতে অথবা অভুক্ত রেখে কাওকেও হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
বিশ্লেষণ
অপরাধী কাওকেও শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করলে ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে কিসাস এবং আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে দিয়াত অপরিহার্য হবে।[34]
ইমাম মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘আল-জামিউস-সাগীর’ গ্রন্থে বলেন যে, কেউ কোন ব্যক্তিকে আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যা করলে, যা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব নয়, নিক্ষেপকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।[35] তাকে আগুন থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর বিছানাগত-থেকে মারা গেলেও নিক্ষেপকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে। কোন ব্যক্তিকে উত্তপ্ত গরম পানিতে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হলেও হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।[36] কোন ব্যক্তিকে হাত-পা বেঁধে পুকুর, নদী বা সমুদ্রের গভীর পানিতে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি ডুবিয়ে মেরেছে আমরাও তাকে ডুবিয়ে মারবো’।[37]
যে পরিমাণ পানিতে পতিত হলে সাধারণত মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে না এবং সাঁতার কেটে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব (যদি সাঁতার জানে) সেই পরিমাণ পানিতে কোন ব্যক্তিকে নিক্ষেপ করা হলে এবং তার মৃত্যু ঘটলে নিক্ষেপকারীর উপর দিয়াত অপরিহার্য হবে।[38]
উচ্চ স্থান থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করলে নিক্ষেপকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।[39] বিষাক্ত পদার্থ পান করিয়ে হত্যা করলেও হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে। খায়বার অভিযানকালে এক ইহুদী নারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বিষমিশ্রিত বকরী আহার করতে দেয়। বিষক্রিয়া হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্ষা পেলেও তাঁর সাহাবী বিশর ইবনুল বারাআ রাযিয়াল্লাহু আনহু নিহত হন। হত্যার অপরাধে উক্ত নারীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।[40] জীবন্ত মাটিতে পুঁতে হত্যা করা হলে হত্যাকারীর মৃত্যদণ্ড হবে।[41] কোন ব্যক্তিকে বন্দী করে অনাহারী রাখা হলো, অথবা প্রচণ্ড শীত বা উত্তাপের মধ্যে ফেলে রাখা হল, ফলে অনাহারে বা প্রচণ্ড শীতে বা উত্তাপে তার মৃত্যু হল। এক্ষেত্রে ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে অপরাধীর উপর দিয়ে বাধ্যতামূলক হবে এবং ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে তার মৃত্যুদণ্ড হবে। শাফিঈ ও হাম্বালী মাযহাব মতে যে পরিমাণ সময় অভুক্ত রাখলে, বিবস্ত্র অবস্থায় শীত বা সূর্যের উত্তাপের মধ্যে ফেলে রাখলে সাধারণত মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে সেই পরিমাণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মারা গেলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হবে।[42]
ধারা-৫৪ নারী, পুরুষ, শিশু পঙ্গু ও পাগলকে হত্যা করলে
পুরুষ নারীকে, নারী পুরুষকে এবং বালেগ নাবালেগ, অন্ধ, খঞ্জ ও পাগলকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
বিশ্লেষণ
কুরআন মজীদের কিসাসের বিধান সম্পর্কিত আয়াত সাধারণ অর্থ জ্ঞাপক। তাতে কারো রক্তের বা মর্যাদার পার্থক্য করা হয় নি। তাই হত্যাকারী যেই হোক ‘কতলে আম্দ’ প্রমাণিত হলেই তার মৃত্যুদণ্ড হবে। মর্যাদার পার্থক্য করা হলে কিসাসই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং পারস্পরিক শত্রুতা আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে।[43]
ধারা-৫৫ মুমূর্ষ ব্যক্তিকে হত্যা করলে
মুমূর্ষ ব্যক্তির আর বাঁচার আশা নেই জেনেও তাকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
বিশ্লেষণ
কোন ব্যক্তি মৃত্যুশয্যাগত, তার বাঁচার আশা নেই বা কোন লক্ষণ নেই, এই অবস্থায় সে নিহত হলে হত্যাকারীকে কিসাসস্বরূপ হত্যা করা হবে।[44]
ধারা-৫৬ মুসলিম অমুসলিমকে এবং অমুসলিম মুসলিমকে হত্যা করলে
মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম ব্যক্তিকে এবং অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
বিশ্লেষণ
কিসাসের বিধান সম্পর্কিত আয়াতের ভিত্তিতে সাধারণভাবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবন নিরাপদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক অমুসলিমকে হত্যার অপরাধে হত্যাকারী মুসলিমকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।[45]
ধারা-৫৭ অমুসলিম অমুসলিমকে হত্যা করলে
এক অমুসলিম ব্যক্তি অপর অমুসলিম কর্তৃক নিহত হলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।’[46]
ধারা-৫৮ বিদেশী বিদেশীকে হত্যা করলে
মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থানরত অমুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকগণের একজন অপরজনকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।[47]
ধারা-৫৯ নাবালেগ নাবালেগকে হত্যা করলে
নাবালেগ নাবালেগকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে না; তার মাল থেকে দিয়াত প্রদান বাধ্যতামূলক হবে।
বিশ্লেষণ
নাবালেগের ‘কতলে আম্দ’ ও ‘কতলে খাতা’ উভয়ই সমান। নাবালেগ একে অপরকে হত্যা করলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে না। তার মাল থেকে দিয়াত পরিশোধ করতে হবে, কতলে আম্দ হলেও এবং কতলে খাতা হলেও। সে মীরাস হতেও বঞ্চিত হবে না।[48]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তিন ব্যক্তির উপর হতে দণ্ড তুলে নেওয়া হয়েছে, বালেগ বালেগ না হওয়া পর্যন্ত. … ’।[49]
ধারা-৬০ পাগলে হত্যা করলে
পাগল কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তাহায় মৃত্যুদণ্ড হবে না; তার মাল থেকে দিয়াত প্রান বাধ্যতামূলক হবে।
বিশ্লেষণ
বদ্ধ পাগল কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তার মৃত্যুদণ্ড হবে না; ফাতওয়া আলমগিরীতে ‘বাহরুল মুহীত’ গ্রন্থের বরাতে বলা হয়েছে যে, পাগলের বিষয়টি নাবালেগের বিষয়ের অনুরূপ।[50]
ধারা-৬১ পাগল ও নাবালেগ অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করলে
পাগল অথবা নাবালেগ ব্যক্তির সশন্ত্র আক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তি পাগল বা নাবালেগকে হত্যা করলে অথবা তারা প্রতিহত হয়ে নিহত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির উপর দিয়াত বাধ্যতামূলক হবে।
বিশ্লেষণ
ইমাম আবু ইউসুফ ও শাফিঈ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে দিয়াতও বাধ্যতামূলক হবে না। ইমাম শাফিঈ যুক্তি প্রদান করেছেন যে, আক্রান্ত ব্যক্তি তার জীবনের নিরাপত্তার খাতিরে আক্রমণ প্রতিহত করতে যেয়ে তার দ্বারা নিহত হয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তিরই স্বীয় জানমালের নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে।[51]
ধারা-৬২ বালেগ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করলে
বালেগ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি কোন ব্যক্তির উপর অস্রসহ ঝাপিয়ে পড়লে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা প্রতিহত হয়ে নিহত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড হবে না।
বিশ্লেষণ
আক্রমণকারী অন্যায়ভাবে অপরের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে নিজেই নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের অধিকারে অস্ত্র ধারণ করেছে। তাই আক্রমণকারী তার হাতে নিহত হওয়ায় সে দোষী নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘তোমার জীবনের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রধারণ কর।’[52]
ধারা-৬৩ চোরকে হত্যা করলে
কোন ব্যক্তির গৃহে চোর ঢুকে তার মালপত্র নিয়ে পলায়নকালে গৃহকর্তা তার পিছু ধাওয়া করে তাকে হত্যা করলে গৃহকর্তার কোন শাস্তি হবে না।
বিশ্লেষণ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘তোমার সম্পদ রক্ষার জন্য অস্ত্রধারণ কর।’[53]
‘যে ব্যক্তি নিজের মাল রক্ষা করতে যেয়ে নিহত হলো, সে শহীদ।’[54]
ধারা-৬৪ আঘাতকারীর আঘাতে মারা গেলে
কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ইকৃতভাবে আহত করলে এবং আহত অবস্থায় শয্যাশায়ী থেকে অবশেষে সে মারা গেলে আহতকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
বিশ্লেষণ
আহত ব্যক্তি আহত হওয়ার কারণেই মারা গেছে, অন্য কোন কারণে মারা যায় নি। তাই কিসাসের কারণ বিদ্যমান থাকায় আহতকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত।[55]
ধারা-৬৫ পিতামাতা ও দাদাকে হত্যা করলে
(ক) কোন ব্যক্তি স্বীয় পিতামাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী (যত ঊর্ধ্বগামী হোক) কাওকেও হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
(খ) পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ও নানা-নানী পর্যায়ক্রমে পুত্রকে বা নাতিকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে না, কিন্তু দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
কিসাস সম্পর্কিত আয়াতের নির্দেশ সাধারণভাবে যে কোন হত্যাকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই কেউ নিজ পিতা বা মাতা, দাদা বা দাদী এবং নানা বা নানীকে (যত ঊর্ধ্বগামী হোক) হত্যা করলে হত্যাকারী পুত্র, পৌত্র বা দৌহিত্রের মৃত্যুদণ্ড হবে।[56]
কিন্তু পিতা বা মাতা পুত্রকে, দাদা বা দাদী পৌত্রকে এবং নানা বা নানী দৌহিত্রকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরোক্ত ব্যক্তিগণকে কিসাসের সাধারণ নির্দেশ-বহির্ভূত রেখেছেন।
‘সুরাকা ইবনে মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার উপস্থিতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিতৃহত্যার অপরাধে পুত্রের উপর কিসাস কার্যকর করেছেন এবং পুত্রহত্যার অপরাধে পিতার উপর কিসাস কার্যকর করেন নি।’[57]
‘উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। পুত্র হত্যার অপরাধে পিতার উপর কিসাস কার্যকর হবে না।’[58]
‘ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পুত্রহত্যার অপরাধে পিতার মৃত্যুদণ্ড হবে না।’[59]
এক্ষেত্রে দিয়াত প্রদান বাধ্যতামূলক হবে।[60] পুত্র, পৌত্র ও দৌহিত্রগণও (যত নিম্নগামী হোক) পুত্রের অন্তর্ভুক্ত এবং দাদা-দাদী ও নানা-নানী (যত ঊর্ধ্বগামী হোক) পিতা-মাতার অন্তর্ভুক্ত।[61]
ধারা-৬৬ কিসাস বহির্ভূত ও কিসাস অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি একত্রে হত্যা করলে
কিসাস বহির্ভূত ব্যক্তি কিসাস অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তির সাথে মিলিত হয়ে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে উভয়ের জন্য দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
যদি এমন দুই ব্যক্তি মিলিতভাবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে যাদের একজন একা হত্যা করলে কিসাস বাধ্যতামূলক হয় না কিন্তু অপরজন একা হত্যা করলে কিসাস বাধ্যতামূলক হয়, তবে এক্ষেত্রে দুইজনের কারো কিসাস (মৃত্যুদণ্ড) হবে না। যেমন নাবালেগ ও বালেগ একত্রে, সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি ও পাগল একত্রে, অথবা পিতা ও অন্য ব্যক্তি একত্রে, অথবা একজন ইচ্ছাকৃতভাবে এবং অন্যজন ভুলবশত কোন ব্যক্তিকে হত্যা করল। এক্ষেত্রে কিসাস অপরিহার্য হবে না, দিয়াত প্রদান বাধ্যতামূলক হবে। কিন্তু ইমাম শাফিঈর মতে বালেগ, সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি ও পিতার সাথে অংশীদার ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড হবে, কিন্তু ইচ্ছাকৃত হত্যাকারীর উপর দিয়াত প্রদান বাধ্যতামূলক হবে।[62]
ধারা-৬৭ এক ব্যক্তি একদল লোককে হত্যা করলে
এক ব্যক্তি একাই একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।
বিশ্লেষণ
কিসাস বাধ্যতামূলক হওয়ার জন্য এক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তিগণের প্রত্যেকের ওয়ারিসগণের সম্মিলিতভাবে কিসাস দাবি করার প্রয়োজন নেই। যে কোন একজন নিহতের ওয়ারিসগণ কিসাস দাবি করলেই তা কার্যকর হবে। অবশিষ্ট নিহতগণের ওয়ারিসগণের অনুপস্থিতি কিসাস কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না।[63]
ধারা-৬৮ একদল এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে
একদল লোক সম্মিলিতভাবে এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে উক্ত দলের সকলের উপর কিসাস কার্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
প্রাণ হত্যার অপরাধে কিসাস কার্যকর করার জন্য হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সংখ্যার সমতা বিদ্যমান থাকা শর্ত নয়। অতএব কয়েক ব্যক্তি একত্র হয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে কিসাসম্বরূপ হত্যাকারী দলের সকলের মৃত্যুদণ্ড হবে। ফকীহগণ এই বিষয়ে একমত।
‘সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে হত্যার অপরাধে পাঁচ অথবা সাত ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। তারা লোকটিকে ধোঁকা দিয়ে হত্যা করেছিল। উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু আরও বললেন, সানআবাসী সকলে মিলে তাকে হত্যা করলে তার প্রতিশোধস্বরূপ আমি অবশ্যই তাদের সকলকে হত্যা করতাম।’[64]
ধারা-৬৯ হত্যা করার পর হত্যাকারী ইসলাম গ্রহণ করলে
কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে হত্যা করার পর ইসলাম গ্রহণ করলেও হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে।[65]
ধারা-৭০ অপরের নির্দেশে হত্যা করা
আদেশদাতার আদেশক্রমে আদিষ্ট ব্যক্তি জানলো যে, ঐ আদেশ তার উপর বাধ্যকর নয়, আদেশদাতাকে অথবা কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলে হত্যাকারীর উপর দিয়াত বাধ্যতামূলক হবে এবং আদেশ তাযীরের অধীনে দণ্ডযোগ্য হবে।
বিশ্লেষণ
এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল, তুমি আমাকে অথবা অমুক ব্যক্তিকে হত্যা কর এবং তার উপর ঐ আদেশ বাধ্য নয় জেনেও সে আদেশদাতাকে বা অপর ব্যক্তিকে হত্যা করল। এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে হত্যাকারীর উপর দিয়াত বাধ্যতামূলক হবে। পক্ষান্তরে ইমাম যুফার, মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে এবং আদেশদাতা তাযীরের আওতায় দণ্ড প্রাপ্ত হবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘সৃষ্টি স্রষ্টার নাফরমানী করতে নির্দেশ দিলে তার আনুগত্য করা যাবে না। (মুসনাদে আহমাদ, হাকেম) ।
ধারা-৭১ বলপ্রয়োগে হত্যা করালে
কোন ব্যক্তি বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়ে অপর ব্যক্তিকে হত্যা করলে বলপ্রয়োগ কারীর মৃত্যুদণ্ড হবে এবং হত্যাকারী তাযীরের আওতায় দণ্ডযোগ্য হবে।
বিশ্লেষণ
ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মদ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে বলপ্রয়োগকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে এবং যার উপর বলপ্রয়োগ করা হয়েছে তার উপর দিয়াত বাধ্যতামূলক হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘আল্লাহু তা’আলা আমার উম্মতের ভুলভ্রান্তি, ভুলে যাওয়া এবং যার উপর বলপ্রয়োগ করা হয়েছে তার অপরাধ উপেক্ষা করেছেন।’[66]
ধারা-৭২ মুরতাদকে হত্যা করলে
কোন ব্যক্তি মুরতাদকে হত্যা করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড হবে না, তবে সে তাযীরের আওতায় দণ্ডযোগ্য হবে।
ব্যাখ্যা: কোন মুসলিম ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে তাকে ‘মুরতাদ’ (ধর্মত্যাগী) বলে।
বিশ্লেষণ
যে কোন ধরনের অপরাধীর উপর শাস্তি কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের। কোন ব্যক্তিকে বিচারের সম্মুখীন না করে শাস্তি দেওয়া বৈধ নয়। মুরতাদ যদিও ইসলাম ত্যাগ করে মৃত্যুদণ্ডের অপরাধী হয়েছে এবং নিজের জীবনের নিরাপত্তা হারিয়ে ফেলেছে, তবুও বিনা বিচারে তাকে হত্যা করা যাবে না। অতএব যে ব্যক্তি মুরতাদকে হত্যা করল সে সরকারের কর্তৃত্বের অবমাননা করল। এজন্য সে তাযীরের আওতায় দণ্ডযোগ্য হবে। এই বিষয়ে ফকীহগণ একমত।[67]
ধারা-৭৩ কোন ব্যক্তিকে একের পর এক আহত করলে
একাধিক ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে একের পর এক আঘাত করার ফলে সে মারা গেলে–যার আঘাতে সে নিহত হয়েছে তার মৃত্যুদণ্ড হবে এবং তার সহযোগীদের উপর দিয়াত বাধ্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
যেমন সহযোগীদের কেউ এক ব্যক্তির পায়ে আঘাত করল, কেউ পেটে আঘাত করল এবং কেউ কণ্ঠনালীতে আঘাত করল ও কে ঘাড়ে আঘাত করল এবং ফলে আহত ব্যক্তি মারা গেল। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হবে কার আঘাতে সে মারা গেছে? যার বা যাদের আঘাতে সে নিহত হয়েছে বলে সাব্যস্ত হবে তার বা তাদের মৃত্যুদণ্ড হবে এবং অন্যদের উপর দিয়াত আরোপিত হবে।[68]
ধারা-৭৪ লাওয়ারিস ব্যক্তি নিহত হলে
লাওয়ারিস ব্যক্তি নিহত হলে তার কিসাসের দাবিদার হবে সরকার এবং ইচ্ছা করলে হত্যাকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে অথবা ক্ষমাও করতে পারে।
বিশ্লেষণ
যার সুনির্দিষ্ট কোন অভিভাবক নেই এমন ব্যক্তি নিহত হলে তার অভিভাবক হবে সরকার।[69]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘যার অভিভাবক নেই আমিই তার অভিভাবক।’[70]
‘আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যার অভিভাবক নেই শাসক তার অভিভাবক।’[71]
ধারা-৭৫ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অস্ত্র
তরবারি বা অন্যান্য শরীআত সম্মত পদ্ধতিতে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।
বিশ্লেষণ
তরবারি দ্বারাই হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। এই বিষয়ে হানাফী ফকীহগণ একমত। অন্য কিছুর সাহায্যে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বৈধ নয়। হত্যাকারী কোন ব্যক্তিকে নির্যাতন করে হত্যা করলেও তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘তরবারি দ্বারাই কিসাস কার্যকর করতে হবে।’
ধারা-৭৬ কতলে আম্দ-এর দিয়াত
(ক) ‘কতলে আম্দ’-এ দিয়াত প্রদানের শর্তে সন্ধি হলে তার পরিমাণ হবে ত্রিশটি চার বছর বয়সের, ত্রিশটি তিন বছর বয়সের এবং গর্ভবতী চল্লিশটি উট বা তার সমমূল্য।
(খ) আদালত তার সুবিবেচনা অনুযায়ী দিয়াতের সাথে কারাদণ্ডের শাস্তিও যোগ করতে পারে।
(গ) ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ইচ্ছা করলে তাদের (ধারা–ক) কম সংখ্যক শর্তেও সন্ধি করতে পারে, কিন্তু এর অধিক দাবি করতে পারবে না।
(ঘ) দিয়াত প্রদানে হত্যাকারী স্বেচ্ছায় সম্মত না হলে তা তার নিকট থেকে জোরপূর্বক আদায় করা যাবে না।
বিশ্লেষণ
দিয়াত প্রদানের শর্তে হত্যাকারী ও নিহত পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সন্ধি স্থাপিত হলে দিয়াতের পরিমাণ হবে একশো উষ্ট্রী বা তার সমমূল্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেছে তাকে নিহত ব্যক্তির অভিভাবকদের নিকট অর্পণ করা হবে। তারা ইচ্ছা করলে তাকে হত্যা করবে, অথবা ইচ্ছা করলে দিয়াত গ্রহণ করবে। তা হলো, ৩০টি তিন বছর বয়সের, ৩০টি চার বছর বয়সের এবং ৪০টি গর্ভবতী উষ্ট্রী। আর যদি তারা সন্ধি করে তবে যত সংখ্যকের বিনিময়ে সন্ধি হয়েছে ততটি পাবে। তা দিয়াত কঠোর করার জন্য।’
নিহতের অভিভাবকের জন্য সন্ধির ক্ষেত্রে উক্ত পরিমাণের অধিক দাবি করা বৈধ নয়। অবশ্য তার কম সংখ্যকেও সন্ধি করা তাদের জন্য বৈধ।
দিয়াত বস্তুসামগ্রীর দ্বারাও পরিশোধ করা যায় এবং নগদ অর্থেও পরিশোধ করা যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে নগদ অর্থে দিয়াতের পরিমাণ ছিল বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী আট হাজার, দশ হাজার ও বার হাজার দিরহাম। আমর ইবনে শুআয়ব রাহিমাহুল্লাহ থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা আবদুল্লাহ ইবনে আমর) বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম উটের সমসাময়িক বাজারদরে চারশো দীনার অথবা তার সমপরিমাণ দিরহাম গ্রামবাসীদের দিয়াত নির্ধারণ করতেন। উটের বাজারদর বেড়ে গেলে দিয়াতের পরিমাণও বেড়ে যেতো, তার বাজারদর কমে গেলে দিয়াতের পরিমাণও কমে যেতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে উটের মূল্য চারশো দীনার হতে আটশো দীনার পর্যন্ত উন্নীত হয়। যাদের গরু আছে তাদের বেলায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দেন যে, তাদের নিকট থেকে দিয়াত বাবদ দুই শত গরু নেওয়া হবে এবং যাদের বকরী আছে তাদের নিকট থেকে দিয়াত। বাবদ দুই হাজার বকরী নেওয়া হবে।
‘আমর ইবনে শুআয়ব রাহিমাহুল্লাহ থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে দিয়াতের (উটের) মূল্য ছিল আটশো দীনার অথবা আট হাজার দিরহাম…। অতঃপর এভাবে দিয়াতের বিধান অব্যাহত রইলো। অতঃপর উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু খলীফা হওয়ার পর ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বলেন, উটের দাম বেড়ে গেছে। রাবী বলেন, অতএব তিনি স্বর্ণে প্রদানকারীদের দিয়াত এক হাজার দীনার এবং রৌপ্যে প্রদানকারীদের দিয়াত বার হাজার দিরহাম নির্ধারণ করেন।’
ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, দিয়াতের ক্ষেত্রে উট নির্ধারণ করা হয়েছে নস্-এর ভিত্তিতে এবং স্বর্ণ বা রৌপ্যে তার মূল্য নির্ধারণ করা হয় উটের (মূল্যের) ভিত্তিতে। ইমাম শাফিঈ রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে, উট ব্যতীত অন্যান্য বন্ধুর মাধ্যমে যে দিয়াত নির্ধারণ করা হয়েছে তা সমঝোতা বা সার্বিক সুবিধার ভিত্তিতে।
দিয়াত প্রদানে হত্যাকারীর সম্মত হওয়া আবশ্যক। তার অসম্মতিতে তার নিকট থেকে তা আদায় করা বৈধ নয়। হত্যার অপরাধে তার জীবন সংহার বৈধ হলেও তার সম্পদ দখল করা বৈধ নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ
‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না’ (সূরা বাকারা: ০২ : ১৮৮; সূরা নিসা: ০৪ : ২৯) ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘কোন মুসলিম ব্যক্তির সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ব্যতীত অন্যের জন্য বৈধ নয়।’
ধারা-৭৭ কতলে শিব্হে আম্দ-এর দিয়াত
কতলে শিব্হে আম্দ-এর ক্ষেত্রে হত্যাকারীর পরিবারের উপর দিয়াত বাবদ তিন বছর বয়সের ত্রিশটি, চার বছর বয়সের ত্রিশটি এবং গর্ভবতী চল্লিশটি উষ্ট্রী বা তাদের সমমূল্য প্রদান বাধ্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
কতলে শিব্হে আম্দ-এর ক্ষেত্রেও কতলে আম্দ-এর মত কঠোর দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হবে এবং তা হত্যাকারীর বংশের লোকেরা পরিশোধ করবে।
ধারা-৭৮ কতলে তার দিয়াত
কতলে খাতার ক্ষেত্রে হত্যাকারীর পরিবারের উপর দিয়াত বাবদ এক বছর বয়সের বিশটি উট ও বিশটি উষ্ট্রী, দুই বছর বয়সের বিশটি উষ্ট্রী, তিন বছর বয়সের বিশটি উষ্ট্রী এবং চার বছর বয়সের বিশটি উষ্ট্রী বা তাদের সমমূল্য প্রদান বাধ্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
ইবনে মাসউদবু রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘ভুলবশত হত্যার দিয়াত পাঁচ ভাগে বিভক্ত: এক বছর বয়সের বিশটি উষ্ট্রী, এক বছর বয়সের বিশটি উট, দুই বছর বয়সের বিশটি উষ্ট্ৰী, তিন বছর বয়সের বিশটি উষ্ট্রী এবং চার বছর বয়সের বিশটি উষ্ট্রী। এইভাবে পাঁচটি অংশ পূর্ণ হল।’
কুরআন মজীদে বলা হয়েছে,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلَّا خَطَأً وَمَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ إِلَّا أَنْ يَصَّدَّقُوا فَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ عَدُوٍّ لَكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِنَ اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
‘এবং কেউ মুমিন ব্যক্তিকে ভুলবশত হত্যা করলে একজন মুমিন দাস বা দাসী মুক্ত করা এবং নিহতের পরিবারবর্গকে দিয়াত প্রদান করা বিধেয়, যদি না তারা ক্ষমা করে। যদি সে তোমাদের শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং মুমিন হয় তবে এক মুমিন দাস মুক্ত করা বিধেয়। নিহত ব্যক্তি যদি তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ (অমুসলিম) সম্প্রদায়ের লোক হয় তবে তার পরিবারবর্গকে দিয়াত প্রদান এবং এক মুমিন দাস মুক্ত করা বিধেয়। যে তা পাবে না তাকে একাদিক্রমে দুই মাস রোযা রাখিতে হবে। তওবার জন্য তা আল্লাহর ব্যবস্থা এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা নিসা: ০৪ : ৯২) ।
উপরোক্ত আয়াতে নিহতের পরিবারকে দিয়াত প্রদানের জন্য হত্যাকারীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং উপরন্তু একজন মুমিন দাস বা দাসীকে মুক্ত করতে বলা হয়েছে, দাস-দাসী না পাওয়া গেলে একাধারে দুই মাস রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে অমুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করলে তার জন্যও একই বিধান প্রদান করা হয়েছে অর্থাৎ মুসলিম-অমুসলিম উভয়ের দিয়াত সমান।
ধারা-৭৯ কতলে শিব্হে খাতা ও কতল বিত-তাসাব্বুব-এর দিয়াত
‘কতলে শিব্হে খাতা’ ও ‘কতল বিত-তাসাব্বুব’-এর দিয়াতের বিধান করলে তার অনুরূপ।’
বিশ্লেষণ
কতল বিত-তাসাব্বুব-এ অপরাধীর কাজ হত্যাকাণ্ডের ‘কারণ’ হওয়ায় এবং নিজের কাজে বৈধ সীমা অতিক্রম করায় দিয়াত প্রদান বাধ্যকর হয়।
ধারা-৮০ কিসাস ও দিয়াত রহিত হলে বিকল্প শাস্তি
ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষে ক্ষমা যারা অথবা অন্য কোন কারণে হত্যাকারী কিসাস ও দিয়াতের দণ্ড হতে রক্ষা পেলেও আদালত তাযীরের আওতায় তাকে দণ্ডিত করতে পারবে।
বিশ্লেষণ
হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে হত্যাকারী কেবল একটি জীবনেরই ক্ষতি করে না, বরং সে সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। তাই যদি কোন কারণে কিসাস বা দিয়াত রহিত হয়ে যায় তবুও তার কিছু শাস্তি হওয়া উচিত। ইমাম মালিক ও লাইস রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে কিসাস মাফ করার ক্ষেত্রে হত্যাকারী একশো বেতদণ্ড ও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবে। হযরত উমর ফারুক রাযিয়াল্লাহু আনহু-এরও অনুরূপ একটি মত পাওয়া যায়। ইমাম আবু হানীফা, শাফিঈ, আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইসহাক ও আবু সাওর রাহিমাহুল্লাহ-এর মতে হত্যাকারী পেশাদার দুষ্কৃতিকারী হলে রাষ্ট্র তাকে তাযীরের আওতায় যে কোন ধরনের শাস্তি দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ পিতা পুত্রকে হত্যা করলে তার উপর কিসাস কার্যকর না হলেও সে তাযীরের আওতায় দণ্ড ভোগ করবে।
ধারা-৮১ হত্যাকারিণী গর্ভবতী হলে
হত্যাকারিণী গর্ভবতী হলে তার গর্ত খালাস এবং সন্তানের দুধপানকাল সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কিসাস স্থগিত থাকবে; অতঃপর উক্ত মেয়াদ শেষ হলে কিসাস কার্যকর হবে।
বিশ্লেষণ
কোন গর্ভবতী নারী অপর ব্যক্তিকে হত্যা করলে আদালতের রায় ঘোষণার পরপরই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না। বরং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এবং তার দুধপানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই কিসাস কার্যকর হবে। ‘জুহায়না কবীলার উপগোত্র গামিদ-এর এক নারী যিনার দ্বারা গর্ভবতী হয়। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নিজের অপরাধের স্বীকারোক্তি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আসতে বলেন। অতঃপর সন্তানসহ সে উপস্থিত হলে তিনি তাকে সন্তানের দুধপানকাল শেষ হওয়ার পর আসতে বলেন। অতঃপর সে উপস্থিত হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উপর শাস্তি কার্যকর করার নির্দেশ দেন।’
আরো পড়ুন: আইন ও ইসলামি আইন
তথ্যনির্দেশিকা
[1] লিসানুল আরাব খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩২৮
[2] মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃষ্ঠা : ৩৫৭; কাওয়াইদুল ফিক্হ, পৃষ্ঠা : ৪২৩; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২১৭
[3] সূরা আল-মাইদা, ৩২ নং আয়াত ।
[4] আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২১১
[5] কাওয়াইদুল ফিকহ্, পৃষ্ঠা : ৪২৩-৪২৪; আল-ফিকহুল ইসলামী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২২১; কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃষ্ঠা : ৪২৩ এবং ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৩ তাবঈনুল হাকাইক শারহি কানযিদ দাকাইক, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৯৭-৮।
[6] আবূ বাকর আল-জাসসাস, আহ্কামুল কুরআন, বাংলা অনু., খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা :
[7] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৩ ; আবদুর আযীয আল-আমের, আত-তাযীর ফিশ শারীআতিল ইসলামিয়া, দ্র শিরো, কতলে আম্দ।
[8] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৩, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২২১
[9] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৩
[10] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৫১; তাবঈনুল হাকাইক, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১০১
[11] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৫১; তাবঈনুল হাকাইক, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১০৩
[12] আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড : পৃষ্ঠা : ১০৪
[13] তাবঈনুল হাকাইক , খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১০১; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৫২
[14] তাবঈনুল হাকাইক, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১০১
[15] তাবঈনুল হাকাইক, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১০১
[16] তাবঈনুল হাকাইক, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১০৩
[17] আবুল লাইস সামারকাল্দী, খিযানাতুল ফিকহ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৫৪-৩৫৫ (মাজমুআহ কাওয়ানীন ইসলামী থেকে উদ্ধৃত, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ১৯০০-১৯০১
[18] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৭১।
[19] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৭১ ।
[20] দারু কুতনী, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৯৫, হাদীস নং ৪৯ ; আরও দ্র হাদীস নং ৯৪ ।
[21] আবু বাকর আল-জাসসাস, আহ্কামুল কুরআন, (বাংলা অনু.), খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২৯৫
[22] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৩ : আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৭৯ ।
[23] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৬।
[24] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৬-২৪৭
[25] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৬-২৪৭
[26] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৭
[27] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৩ ; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৭৯; আল-হিদায়া খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৪৯; ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৮
[28] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৭
[29] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৮
[30] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৭
[31] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৮
[32] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৮-২৪৯
[33] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৮
[34] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৩
[35] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৪; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৫৪-২৫৫
[36] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৫
[37] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৫
[38] নাতাইজুল আফকার (তাকমিলা ফাতহুল কাদীর), খণ্ড : ৮, পৃষ্ঠা : ২৬৭; আদ-দুররুল মুখতার, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ৩৮৫ (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৫৩ থেকে গৃহীত) ৷
[39] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৫
[40] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৬
[41] ফাতহুল বারী, ২য় সংস্করণ, বৈরূত ১৪০২ হি., খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৪০০-৪০১
[42] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৬
[43] আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৫৫-৬; ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৬
[44] আল-হিদায়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৪৭, ৫৫২; ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩, ৪
[45] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩
[46] আল-হিদায়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৪৬, (দারু কুতনীর বরাতে)। আরও দ্র. ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩ (আল-কফী গ্রন্থের বরাতে) ।
[47] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩
[48] আল-হিদায়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৪৭ ; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৬
[49] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৩-৪
[50] সহিহ বুখারি (হুদূদ, তালাক) : সুনানে আবূ দাউদ (হুদুদ) ; সুনানুত তিরমিযী (হুদুদ) ; সুনানে ইবনে মাজাহ (তালাক), সুনানে দারিমী (হুদুদ), মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১০০, ১০১, ১৪৪
[51] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৪
[52] আল হিদায়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৫২; শারহু ফাতহিল কাদীর, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ১৬৭
[53] আল হিদায়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৫২; শারহু ফাতহিল কাদীর, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ১৬৭
[54] বুখারীর আত-তারীখুল কাবীর (আল-হিদায়ার টীকা থেকে উদ্ধৃত, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৫২) ।
[55] সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম (আল-হিদায়ার টীকা থেকে উদ্ধৃত, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৫২)।
[56] আল-হিদায়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৫০ ; ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৫
[57] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৫: আল-হিদায়া, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৪৭: ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৪
[58] সুনানুত তিরমিযী, দিয়াত, বাব ৯, হাদীস নং ১৩৯৯
[59] সুনানুত তিরমিযী, দিয়াত, বাব ৯, হাদীস নং ১৪০০: সুনানে দারিমী, দিয়াত, বাব ৭; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৬।
[60] সুনানুত তিরমিযী, দিয়াত, হাদীস নং ১৪০১
[61] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৫
[62] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৫; তাবঈনুল হাকাইক, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ১০৫ ; আল-হিদাযা, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৫৪৭; ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৪
[63] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৫-২৩৬, ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ৪
[64] ফতোয়ায়ে আলমগিরী, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা :৪-৫ ; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে,খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৯
[65] মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (বাংলা অনুবাদ), হাদীস নং ৬৭২, পৃষ্ঠা : ৪০৬-৪০৭
[66] আবুল আযীয় আল-আমের, আত-তাযীর ফিশ শারীআতিল ইসলামিয়্যা (উর্দু অনু.), পৃষ্ঠা : ১২৯; আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খণ্ড : ৬, পৃষ্ঠা : ২৪১
[67] ইবন মাজাহ, তালাক, হাদীস নং ২০৪৩, ২০৪৪, ২০৪৫ ; মুসতাদরাকে হাকেম, মুজামুল কবীর তাবারানী ।
[68] আত-তাশরীউল জিনাইল ইসলামী, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৮-১৯ ; আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৬ আল-বাহরুর রাইক, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ১২৫, আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৩৮; আত-তাশরীউল জিনায়িল ইসলামী, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৪৩
[69] আল-কাসানী, বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ২৪৩, ২৪৫
[70] মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ১৩৩
[71] সুনানে আবূ দাউদ, নিকাহ্, বাব ১৯; সুনানে তিরমিযী, নিকাহ, বাব ১৪; ইবনে মাজাহ, বাব ১৫; সুনানে দারিমী, নিকাহ, বাব ১১; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড : ১ পৃষ্ঠা : ২৫০