কিতাবের নাম: আল-মাবসূত
লেখক: ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.)
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
নাম ও বংশ পরিচিতি:
নাম মুহাম্মাদ, পিতার নাম হাসান, দাদার নাম ফারকাদ, কুনিয়াত আবু আব্দুল্লাহ, নিসবতি নাম শাইবানী, বনু শাইবান গোত্রের দিকে নিসবত করে শাইবানী বলা হয়।
পরিচিতি: ফিকহ ও উসূলে ফিকহের ইমাম ছিলেন। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর ইলম তাঁর মাধ্যমে সর্বাধিক প্রচার প্রসার লাভ করেছে। তিনি ফিকহ ও উসূলে ফিকহ সম্পর্কে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।
জন্ম: তিনি ১৩১ হিজরী মুতাবিক ৭৪৮ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
মৃত্যু: তিনি ১৮৯ হিজরী মুতাবিক ৮০৪ খৃষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন। [আল বিদায় ওয়ান নিহায়া, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ২০২, আল ফাওয়াইদুল বাহিস্য্যহ, পৃষ্ঠা : ১৬৩, আল জাওয়াহিরুল মুযিয়্যাহ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৪২, লিসানুল মিযান, খণ্ড : ৫, পৃষ্ঠা : ১২১।]
আরো পড়ুন:

কিতাব পরিচিতি
আল-মাবসূত : রিওয়ায়াতের প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবের প্রথম কিতাব ৷ লেখক এতে প্রায় দশ হাজার মাসায়িল সন্নেবেশিত করেছেন। [বুলুগুল আমানী লিল কাওছারী, পৃষ্ঠা : ৬১।]
আল-মাবসূত ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.)-এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ব শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ্য বরং একে ফিকহে হানাফীর বিশ্বকোষ বলা যায়। এই কিতাব মুতালা’আ করার দ্বারা তিনি এই কিতাবের প্রত্যেকটি বাবকে পৃথক পৃথক তাসনীফ করেছেন এবং স্বতন্ত্র নাম দিয়েছেন। যেমন কিতাবুস সালাত, কিতাবুয যাকাত, কিতাবুল বুয়ূ ইত্যাদি। অতপর সবগুলোকে একত্র করে কিতাবুল আসল নামে নামকরণ করেছেন। আর একে আল-মাবসূতও বলা হয়।
এর ব্যাপারে একটি ঘটনাও প্রসিদ্ধ আছে যে, এক খৃষ্টান এই আল-মাবসূত কিতাব অধ্যয়ন করে মুসলমান হয়ে এভাবে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছে যে, তোমাদের ছোট মুহাম্মাদের কিতাব যদি এমন হয়, তাহলে তোমাদের বড় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিতাব কেমন হবে?’ [মুকাদ্দামা মাবসূত, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪ ৷]
আল-মাবসূত-এর কয়েকেটি নুসখা রয়েছে। তন্মধ্যে আবু সুলাইমান জুযাজানীর নুসখাটি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। অনেকেই আল-মাবসূত-এর শরাহ লিখেছেন। তন্মধ্যে শায়খুল ইসলাম বকর খুওয়াহারযাদাহ, তার শরাহকে ‘বড় আল-মাবসূত’ বলা হয়। শামসুল আইম্মা হুলওয়ানী (রহ.)ও আল-মাবসূত-এর শরাহ লিখেছেন। [আপ ফতওয়া কেইসে দে, পৃষ্ঠা : ৪০ ৷]
আরো পড়ুন:
ইখতিলাফ ও প্রমাণ উপস্থাপন পদ্ধতি
এ প্রসঙ্গে ইমাম মুহাম্মাদ নিজেই আল-মাবসূত কিতাবের মুকাদ্দামায় লিখেন, এ কিতাবে তিনি ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও নিজের অভিমতকে ব্যক্ত করেছেন। অন্যান্য মাযহাবের ইমামদের অভিমত অধিকাংশ জায়গাই উল্লেখ করেননি। আর যেসব মাসআলায় কোনো ইখতিলাফ বর্ণনা করেননি, তার অর্থ হচ্ছে সে ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ একমত পোষণ করেন। [আল মাবসূত, খণ্ড: ১ পৃষ্ঠা : ২৭।]
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলীল প্রমাণ পেশ করেননি, তবে মাঝে মধ্যে দু’একটি দলীল পেশ করেছেন। এ ব্যাপারে আল্লামা যাহিদ কাওছারী (রহ.) বলেন:
‘যেসব মাসআলায় ফুকাহায়ে কিরাম হাদীসের আলোকে দলীল প্রমাণ পেশ করেছেন, সেসব মাসআলায় তিনি দলীল প্রমাণ পেশ করেননি। আর যেসব মাসআলায় ফুকাহায়ে কিরাম দলীল প্রমাণ পেশ করেননি সেসব মাসআলায় তিনি দলীল প্রমাণ পেশ করেছেন ।’ [বুলুগুল আমানী লিল কাওছারী, পৃষ্ঠা : ৬১।]
আরো পড়ুন:
হানাফী মাযহাবে এর গুরুত্ব
আল-মাবসূত কিতাবের গুরুত্ব অপরিসীম। আহলে ইলমদের জন্য মাসআলা মুখস্ত করা, বর্ণনা করা এবং অধ্যয়নের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত একটি চমৎকার কিতাব। [মুকাদ্দামা তাহকীকুহু লিআবিল ওয়াফা, পৃষ্ঠা : ১২।] আল্লামা সারাখসী (রহ.) বলেন: ‘মুজতাহিদ ফিল মাযহাবের জন্য আল-মাবসূত কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ পরিপূর্ণরূপে মুখস্ত করা অপরিহার্য’। [শরহু আদাবিল কাষী লি সদরিশ শহীদ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৮৯-১৯০। ]
আরো পড়ুন:
আল-মাবসূত কিতাবটি ৫ খণ্ডে আবুল ওয়াফা আফগানীর তাহকীকসহ প্রথমে লাজনাতু ইহইয়া থেকে প্রকাশিত হয়েছে, পরবর্তীতে কপি করে ইদারাতুল কুরআন করাচি প্রকাশ করেছে। ১৪১০ হি. ১৯৯০ ঈসাব্দে আলামুল কুতুব থেকেও প্রকাশিত হয়েছে।