রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তৃতা ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ
খুতবার সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ দুটি কখনো রক্তিমবর্ণ ধারণ করত এবং কণ্ঠস্বর উচ্চ হতো ক্রমান্বয়ে, ঠিক যেন সকাল বা সন্ধ্যায় আক্রমণে উদ্যত এমন শত্রুসৈন্যদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিচ্ছেন শ্রোতাদের।[1]
কখনো কখনো তিনি লাঠির উপর হাত রেখে খুতবা দিতেন। অনাড়ম্বর বাকপটুতার দুর্লভ গুণে দুঃখ ও ক্লান্তিকর দিনে তাঁর মুখাবয়বের অভিব্যক্তি আকর্ষণীয় হয়ে উঠত। সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার আবেগে তিনি যুগপৎভাবে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ সাপের ন্যায় সম্মোহিত করে রাখতেন। তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক গুণাবলি, বিশেষত প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, শানিত চেতনা, প্রখর স্মৃতি, প্রাণবন্ত কল্পনাশক্তি ও উদ্ভাবনী প্রতিভা সন্দেহাতীতভাবে ব্যতিক্রমধর্মী। তাঁর মননশীলতা ছিল বিস্তৃত প্রশস্ত, বোধশক্তি সরল ও সামাজিক, রায় স্বচ্ছ, দ্রুত ও নিষ্পত্তিমূলক।[2]
সহজ-সরল বাক্য
খুতবায় সাধারণত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহজ-সরল বাক্য ব্যবহার করতেন। যদি তিনি কখনো কোনো বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করতে চাইতেন, তখন প্রশ্ন ও উত্তর দু থেকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে এই নিয়মই প্রকাশ ঘটেছে।
কখন কখন খুতবা দিতেন
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ২৩ বছরের নবুওয়াতি জীবনে শুক্রবার এবং ঈদের ভাষণ ছাড়া অসংখ্য ভাষণ দিয়েছেন। তাঁর প্রতিটি খুতবা চমৎকার ভাষা দক্ষতার নজিরবিহীন দলিল। একমাত্র এই ভাষণ-দক্ষতাই আরবের মাটি থেকে রক্ত প্রতিশোধ প্রথা বিলুপ্ত করে দেয়। মূলোৎপাটন করে দেয় আওস-খাজরাজ গোত্রদ্বয়ের যুগান্তরের আন্ত-গোত্রীয় বিবাদ। বর্বর ও পৌত্তলিক সমাজকে তিনি সুসভ্য ও তাওহিদবাদী সমাজে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষণ-ক্ষমতাই শতধা বিভক্ত আরব উপদ্বীপের বাসিন্দাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে জমায়েত করে জন্ম দেয় এক শক্তিশালী মুসলিম জাতি রূপে। যার দ্বারা এক শতাব্দীর মধ্যে ইসলামি হুকুমতের সীমানা আটলান্টিক ও ফ্রান্স থেকে ভারত ও চীনের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেল।
তথ্যসূত্র
[1] আত-তাবাকাতুল-কুবরা : ১/৪৪০-৪৪২
[2] আত-তাবাকাতুল-কুবরা : ১/৪৪৩
আরো পড়ুন: কেয়ামত দিবসে আমলের হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষণ
আরো পড়ুন: কুবা থেকে মদীনা যাওয়ার পথে সুলায়ম গোত্রের মসজিদে প্রদত্ত ভাষণ