রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষণরীতি
সংক্ষিপ্ত ও যুক্তিপূর্ণ
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষণরীতি ছিল সহজ, জটিল শব্দালংকার বর্জিত ও কষ্টকল্পিত উপমাবিহীন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষণে দীর্ঘ ভূমিকা থাকত। বাক্যগুলো সংক্ষিপ্ত অথচ দ্ব্যর্থহীন। তিনি ঐতিহাসিক ঘটনা এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের প্রতি শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন, যাতে এসব তাদের মনে চিরসজীব থাকে। কারণ সর্বোৎকৃষ্ট বাকরীতি তাই যা সংক্ষিপ্ত ও যুক্তিপূর্ণ। (Ubaidul Akbar, The Orations of Mohammad, পৃষ্ঠা : 1-18)
মূল বিষয়ের প্রতি শ্রোতাদের কৌতুহল উদ্রেকে তাঁর পদ্ধতি ছিল প্রত্যক্ষ। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষা ছিল সরল ও সাবলীল, দ্ব্যর্থহীন ও কৃত্রিমতা বিবর্জিত, যা শ্রেষ্ঠ ভাষণের আরবিয় নমুনা।
ভাষণের শুরু
ভাষণের শুরুতে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রোতাদের অভিবাদন জানাতেন এবং আল্লাহর প্রশংসাবাক্য উচ্চারণ করে বক্তৃতা শুরু করতেন, আর শেষ করতেন শ্রোতাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও কল্যাণ কামনা করে। (আল-বায়ান ওয়াত-তাবয়িন : ৪/২৯)
আরো পড়ুন: কুবা থেকে মদীনা যাওয়ার পথে সুলায়ম গোত্রের মসজিদে প্রদত্ত ভাষণ
আরো পড়ুন: কাবা ঘর তাওয়াফকালে কতিপয় কুরায়শ কাফিরের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষণ
আকর্ষণীয় ও জোরালো উপস্থাপন
ইসলামের ইতিহাসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বক্তা হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর উপস্থাপনা আকর্ষণীয় ও জোরালো। তাঁর বাক্যগুচ্ছ গভীর অনুভূতিপ্রবণ ও আবেগময়। শব্দচয়ন ও বাক্য নির্মাণে তার অনুপম কমনীয়তার ছোঁয়া স্পষ্ট এবং প্রকাশভঙ্গির ধরন উল্লেখযোগ্য। তাঁর চিন্তা ও ভাষা দুই-ই লৌকিকতাবর্জিত। অনুভূতির সততায় তাঁর ভাষণ প্রাণবন্ত ও তেজোময়।
তাড়াহুড়া করতেন না
আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাড়াহুড়া ও এলোমেলোভাবে ভাষণ দিতেন না, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে স্বল্প বিরতি সহকারে বক্তব্য দিতেন, যাতে শ্রোতাদের হৃদয়ঙ্গম করতে সুবিধা হয়।
চিৎকার ও সুর দিয়ে ভাষণ দিতেন না
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিৎকার করে কিংবা সুর দিয়ে বক্তৃতা করতেন না। ইতিহাসবিদ ইবনে সাদ-এর মতে,
‘তিনি কণ্ঠস্বরকে প্রলম্বিত করতেন। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ আবৃত্তি করার সময় তিনি বিসমিল্লাহকে দীর্ঘায়িত, আর-রহমানকে দীর্ঘায়িত ও আর-রাহিমকে দীর্ঘায়িত করতেন।
আরো পড়ুন: আকাবা উপত্যকার ভাষণ
আরো পড়ুন: হিজরতের পর মদীনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রথম ভাষণ