রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সর্বপ্রথম ভাষণ
নবুওয়াতের পর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম ভাষণে নিকটাত্মীয়দের সাবধান করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা রাসূলকে নিজ আত্মীয়দের সতর্ক করতে বলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ
‘হে নবী! আপনার নিকটাত্মীয়দের সাবধান করে দিন।’ (সূরা শুআরা, ২৬ : ২১৪)
এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিলেন, ‘হে অমুকের বংশধর! হে অমুকের বংশধর! হে আবদ মানাফ! হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর!’ অল্পসময়ে তারা সকলে সমবেত হলো। এরপর রাসূল নিচের ভাষণ প্রদান করেন,
‘বলো, আমি যদি এখন তোমাদের বলি, এই পাহাড়ের উপত্যকায় একটি অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনী তোমাদের উপর অতর্কিত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? উপস্থিত সবাই বলল, হ্যাঁ, কারণ আমরা আপনাকে সবমসয় সত্যবাদীই পেয়েছি। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের ভবিষ্যতের একটি কঠিন আজাব সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত হলো সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে শত্রুসৈন্যকে দেখে আপন কওমকে বাঁচানোর জন্য চলল। অতঃপর আশঙ্কা করল, দুশমন তাদের উপর আগে এসে আক্রমণ করে বসতে পারে। তাই সে উচ্চৈঃস্বরে ‘ইয়া সাবাহাহ’ বলে সতর্ক করতে লাগল। (‘ইয়া সাবাহাহ’-এর অর্থ হলো, হে আমার কওম! শত্রুর প্রাতঃকালীন আক্রমণ থেকে বাঁচো। এ লোকদের একত্র করে শত্রুর আক্রমণ থেকে সাবধান করার জন্য তৎকালীন আরব সমাজে প্রচলিত একটি সংকেত ধ্বনি।) ও (সহীহ মুসলিম : ২০৬; সহীহ সিরাতিন নাবাবিয়্যা : ১/১৩৬)
একাধিক দৃষ্টান্ত ও উপমা দিয়ে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বংশকে সতর্ক করেন। তাদেরকে হৃদয় নিংড়ানো বাক্য উচ্চারণ করে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এরপর রাসূল ধারাবাহিকভাবে কুরাইশদের, তারপর আপন ফুফিকে এবং সবশেষে নিজ কন্য ফাতেমাকে জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য নসিহত করেন। তিনি বলেন,
‘হে কুরাইশ সম্প্রদায়! (আমার উপর ঈমান এনে) তোমাদের জীবনকে ক্রয় করে নাও (অর্থাৎ দোজখের আগুন থেকে আত্মরক্ষা করো)। আমি তোমাদের উপর থেকে আল্লাহর আজাব কিছুই দূর করতে পারব না। হে আমার ফুফি সাফিয়্যা! আমি তোমাকে আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচাতে পারব না। হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! আমার নিকট দুনিয়াবি ধন-সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা তা চেয়ে পার, কিন্তু আমি তোমাকে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করতে পারব না।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ৫৩৭১)
আরো পড়ুন: গনীমত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষণ
আরো পড়ুন: খালিদ ইবন সাঈদের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষণ