সিরাত বিশ্বকোষ
সিরাত বিশ্বকোষ

১০. (৫) আসমা বিনতে মারওয়ান হত্যা  – Killing of Asma Bint Marwan

লেখক: আহমাদ রিফআত

বিষয় : বিষয়ভিত্তিক সিরাত

১০. (৫) আসমা বিনতে মারওয়ান হত্যা – Killing of Asma Bint Marwan

৫.আসমা বিনতে মারওয়ান হত্যা বা সারিয়্যা উমায়ের ইবনে আদি

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কর্তৃক প্রেরিত সারিয়্যা : ৫

তারিখ  দ্বিতীয় হিজরি, মোতাবেক মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ
অবস্থান  বনু খাতমাহ গোত্র
কারণ  ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন কোনো মন্দ কর্ম নেই, যা সে করেনি। মুসলমানদের মসজিদে নাপাক ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ করত। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার জন্যও আপ্রাণ চেষ্টা করত। কবিতার মাধ্যমে এই ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহ দিত।

 

 

ফলাফল  সফলভাবে হত্যা সম্পন্ন হয়।
দুই পক্ষ
উমায়ের ইবনে আদি রাযিয়াল্লাহু আনহু আসমা বিনতে মারওয়ান
শক্তি
১ জন ১ জন
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
মারওয়ানকে অতি সহজেই কতল করেন এবং নিরাপদে মদিনায় ফিরে আসেন; উমায়ের ছিল অন্ধ। আসমা বিনতে মারওয়ান নিহত হয়।

পরিচিতি

 

এই অভিযান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। এটি ছিল অপেক্ষাকৃত ছোট সারিয়্যা অভিযান। সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র একজন। তিনি হলেন উমায়ের ইবনে আদি রাযিয়াল্লাহু আনহু। তার নামানুসারেই উক্ত অভিযানের নামকরণ করা হয় সারিয়্যা উমায়ের ইবনে আদি। এই সারিয়্যায় প্রতিপক্ষ ছিল এক মহিলা। সে ছিল বনু খাতমাহ গোত্রের। নাম আসমা বিনতে মারওয়ান।

উমায়ের ইবনে আদি রা.-র অভিযান পথ
উমায়ের ইবনে আদি রা.-র অভিযান পথ

মানচিত্র (১১) : উমায়ের ইবনে আদি রাযিয়াল্লাহু আনহু-র অভিযান পথ

 

সারিয়্যা উমায়ের ইবনে আদি সংঘটিত হয় পঁচিশ রমজান, দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে আসমা বিনতে মারওয়ান নামক এক কুলাঙ্গার নারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে। আবদুল্লাহ ইবনুল হারেস ইবনে ফুজাইলের বর্ণনানুসারে আসমা ছিল বনু খাতমাহ গোত্রের ইয়াজিদ ইবনে জায়েদ আল-খাতমির স্ত্রী।[1]

এই আসমা বিনতে মারওয়ান ছিল বহু অপকর্মের হোতা। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এমন কোনো মন্দ কর্ম নেই, যা সে করেনি। আল্লামা জুরকানি রহ. তার অপকর্মের বর্ণনায় বলেছেন,

كانت تطرح المحابض في مسجد بنی خطمة فاهدر صلى الله عليه وسلم دمها ولم ينطيح فيها غزات.

‘সে বনু খাতামাহ গোত্রের মুসলমানদের মসজিদে নাপাক ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করত। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রক্ত মূল্যহীন বলে ঘোষণা করেন। আর বলেন, কেউ তার হত্যার প্রতিশোধ নিতে আসবে না এবং তার রক্তপণ দাবি করবে না।’[2]

আরো পড়ুন : সারিয়্যা বাশির ইবনে সাদ আনসারি – Expedition of Bashir Ibn Sa’d al-Ansari

আরো পড়ুন : সারিয়্যা বাশির ইবনে সাদ আল-আনসারি – Expedition of Bashir Ibn Sa’d al-Ansari (Fadak)

আরো পড়ুন : সারিয়্যা যুল-কাস্‌সা – Expedition of Muhammad ibn Maslamah

ইবনু সাদ, ইবনে হিশাম প্রমুখ ঐতিহাসিক বর্ণনা করেন, ‘আবু আফাক নামক ইহুদিকে হত্যার পর থেকেই আসমা মুনাফিকি করতে থাকে। সে তখন থেকেই ইসলামের নামে কুৎসা রটাচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নানাভাবে কষ্ট দিত, এমনকি তাকে হত্যার জন্যও আপ্রাণ চেষ্টা করত। কবিতার মাধ্যমে এই ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহ দিত।’[3]

ইবনে সাদ-এর বরাতে আল্লামা জুরকানি বর্ণনা করেন, তখন বদর যুদ্ধ চলছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও বদর প্রান্তরে ছিলেন। তখন আসমা বিনতে মারওয়ান ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক কুৎসাপূর্ণ কিছু কবিতা রচনা করে। তার কুৎসাপূর্ণ কবিতা শুনে উমায়ের ইবনে আদি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেন। তিনি সঙ্গে-সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেন, ‘যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বদর যুদ্ধ থেকে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করান, তবে আমি আসমাকে অবশ্যই হত্যা করব।’[4]

আসমা বিনতে মারওয়ান যেসকল কবিতার মাধ্যমে ইসলাম-মুসলমানদের কুৎসা রটাত, ইমাম সুহাইলি তা থেকে কয়েকটি শ্লোক উদ্ধৃত করেন,

بِاسْتِ بَنِي مَالِكٍ وَالنّبِيتِ … وَعَوْفٍ وَبِاسْتِ بَنِي الْخَزْرَجِ

أَطَعْتُمْ أَتَاوِيّ مِنْ غَيْرِكُمْ … فَلَا مِنْ مُرَادٍ وَلَا مَذْحِجِ

تَرْجُونَهُ بَعْدَ قَتْلِ الرّءُوس … كَمَا يُرْتَجَى مَرِقَ الْمُنْضِجِ

أَلَا أَنِفٌ يَبْتَغِي غِرّةً … فَيَقْطَعَ مِنْ أَمَلِ الْمُرْتَجِي

(১) ‘ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল বনু মালিক, বনু নাবিত ও বনু আওফ গোত্র। আরও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল বনু খাযরাজ গোত্র।

(২) ফলে তোমরা এখন তোমাদের ভিন্ন বংশোদ্ভূত অপরিচিত একজন এমন নেতার অনুসরণ করছো, যে মুরাদ গোত্রেরও নয় আর মাহিজ গোত্রেরও নয়;

(৩) সমাজের নেতৃবর্গীয় লোকজনকে হত্যার পর তোমরা এখন তাকেই কামনা করছো। অর্থাৎ এখনো তোমাদের কাম্য সেই পুরুষ, যেমন তরকারির ঝোল মানুষের কাম্য।

(৪) সাবধান! সম্প্রদায় প্রধান কিন্তু সুযোগ সন্ধান করছে। সুতরাং সুযোগ কামনাকারীর সকল কামনার মূলোৎপাটন করে দাও।’[5]

আসমা বিনতে মারওয়ান-এর কবিতার জবাবে হাসসান ইবনে সাবিত রাযিয়াল্লাহু আনহু পাল্টা কবিতা রচনা করে বিনতে মারওয়ানসহ বিধর্মীদের সকল ভর্ৎসনা, কুৎসা ও তিরস্কারের দাঁতভাঙা জবাব দেন। তার রচিত কবিতাসমূহ থেকে কয়েকটি শ্লোক তুলে ধরা হলো,

بَنُو وَائِلٍ وَبَنُو وَاقِفٍ … وَخَطْمَةَ دُونَ بَنِي الْخَزْرَجِ

مَتَى مَا دَعَتْ سَفَهًا وَيْحَهَا … بِعَوْلَتِهَا وَالْمَنَايَا تَجِي

فَهَزّتْ فَتًى مَاجِدًا عِرْقُهُ … كَرِيمَ الْمُدَاخِلِ وَالْمَخْرَجِ

فَضَرّجَهَا من نجع الدِّمَاء … بَعْدَ الْهُدُوّ فَلَمْ يَحْرَجْ

(১) ‘(ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে) বনু ওয়াইল, বনু ওয়াকিফ ও বনু খাতমাহ, বনু খাযরাজ নয়।

(২) যখন চিৎকার করে উচ্চৈঃস্বরে ধ্বংস আর নির্বুদ্ধিতাকে আহ্বান করা হয়, তখন কিন্তু কাঙ্ক্ষিত আহত বস্তু অর্থাৎ মৃত্যু আসবে।

আরো পড়ুন : সারিয়্যা জায়েদ ইবনে হারিসা (কারাদা অভিযান) – Expedition of Zayd ibn Haritha

আরো পড়ুন : সারিয়্যা জায়েদ বিন হারিসা (জামুম) – Expedition of Zayd ibn Harithah (Al-Jumum)

আরো পড়ুন : সারিয়্যা দাহহাক ইবনে সুফিয়ান – Expedition of Dahhak al-Kilabi

(৩) সুতরাং প্রস্তুত হয়ে গেল এক নওজোয়ানের ঘাম, যা ক্রমে বেড়ে চলছিল (অর্থাৎ হত্যা করার জন্য আক্ষেপ করছিল), যার প্রবেশ ও বাহির ছিল সম্মানিত (অর্থাৎ হত্যা করে সসম্মানেই ফিরে এলো)।

(৪) গাঢ় লাল রক্তে রঞ্জিত করে দিল তাকে রাতের কিয়দাংশ যেতে না যেতে। তবে তাতে তার কোনো অপরাধ হয়নি।’[6]

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কুৎসাপূর্ণ ও নিন্দাবাদের কথা শুনতে পেয়ে বলেন,

ألا رجل يكفينا هذه؟

‘আমাদের মধ্যে এমন কেউ কি নেই যে তার (আসমার) জন্য একাই যথেষ্ট?’

তখন তার স্বগোত্রীয় একজন বলে উঠল, ‘আমি আছি হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!’ অতঃপর ওই সাহাবি আসমার কাছে এলো এমতাবস্থায়, তখন আসমা খেজুর বিক্রি করছিল। সে এসে আসমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এটি অপেক্ষা ভালো খেজুর তোমার নিকট আছে কি?’ সে উত্তর দিল, ‘আছে।’ এই বলে সে ঘরে প্রবেশ করল। লোকটি বলল, আমিও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঘরে প্রবেশ করলাম কিছু খেজুর গ্রহণ করার মানসে। ঘরে প্রবেশ করে সে ডান-বাম ভালো করে দেখে নিল, কেউ কোথাও আছে কি না। সে দেখে আশেপাশে কেউ নেই। সুতরাং এটিকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে তার মাথায় ও পাঁজরে আঘাত করল। শেষ পর্যন্ত তাকে সে হত্যা করল।’[7]

ইবনে হিশামসহ অন্যান্যদের বিবরণ থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষণা উমায়ের ইবনে আদি রাযিয়াল্লাহু আনহু শুনতে পান। কারণ সেসময় তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছেই ছিলেন।

فَلَمَّا أَمْسَى مِنْ تِلْكَ اللَّيْلَةِ سَرَى عَلَيْهَا فِي بَيْتِهَا فَقَتَلَهَا

‘অতঃপর যখন রাতের আঁধার নেমে এলো, উমায়ের তখন তার ঘরে প্রবেশ করল। সে দেখল, তার পাশেই তার সন্তানরা ঘুমিয়ে আছে। এমনকি সে নিজেও ঘুমিয়ে আছে। তাদের মাঝে এমন একজন ছিল, যে এখনও দুধ পান করত। সে মায়ের বুকের উপর ঘুমিয়েছিল। তখন তাকে সে নিজ হাতে বন্দি করল, দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে তার বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিল, যেন তার কোনোরূপ ক্ষতি না হয়। তারপর তরবারি আসমার বুকে বসিয়ে দিল। তার পৃষ্ঠদেশ ভেদ করে বের হলো তরবারি। উল্লেখ্য, উমায়ের ছিল অন্ধ।’[8]

আরো পড়ুন : সারিয়্যা কুরজ ইবনে জাবির ফিহরি (সারিয়্যা উরায়না) – Expedition of Kurz bin Jabir Al-Fihri

আরো পড়ুন : সারিয়্যা খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. – Expedition of Khalid ibn al-Walid

আরো পড়ুন : সারিয়্যা গালিব ইবনে আবদুল্লাহ আল-লাইসি – Expedition of Ghalib ibn Abdullah al-Laithi (Al-Kadid)

উমায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহু আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যা করে নিরাপদে মদিনায় ফিরে আসেন। অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মদিনায় ফজরের নামাজ আদায় করেন। তারপর বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তাকে হত্যা করেছি।’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘হে উমায়ের! তুমি আল্লাহ ও তার রাসুলকে সাহায্য করেছ।’[9]

তারপর উমায়ের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন,

فهل علي في ذلك من شيء؟ فقال: لا ينتطح فيها عنزان، فكانت هذه الكلمة أول ما سمعت من النبي صلى الله عليه وسلم أي: لا يعارض فيها معارض ليأخذ بثأرها ولا يسأل عنها يطلب بدمها فإنها هدر

‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই হত্যার কোনো দায়ভার কি আমার উপর বর্তাবে?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না, কেউ এই হত্যার প্রতিশোধ নিতে আসবে না, আর কেউ এটির রক্তপণও দাবি করবে না। কেননা তার রক্ত মূল্যহীন।’[10]

আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং লোকজনের সম্মুখে বলেন,

من أحب أن ينظر إلى رجل كان في نصرة الله ورسوله، فلينظر إلى عمير بن عدي

‘কেউ যদি এমন ব্যক্তিকে দেখতে চায়, যে আল্লাহ ও তার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহায্য করেছে, সে যেন উমায়ের ইবনে আদিকে দেখে।’

তিনি ছিলেন অন্ধ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকতেন ‘দৃষ্টিমান উমায়ের’ বলে। উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলতেন,

انظروا إلى هذ الأعمى الذي يرى. وفي رواية: بات في طاعة الله، فقال صلى الله عليه وسلم: مه يا عمر، فإنه بصير

‘দেখো ওই অন্ধকে যে চোখে দেখে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেন, থামো হে উমর! তাকে অন্ধ বোলো না; বরং সে দৃষ্টিমান।’[11]

অতঃপর উমায়ের নিজ কওমের নিকট প্রত্যাবর্তন করেন। তারা তখন বিনতে মারওয়ান সম্পর্কে পর্যালোচনা করছেন। আসমার ছিল পাঁচ সন্তান। তারাও সেখানে উপস্থিত ছিল। উমায়ের তাদের নিকট উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলেন, ‘হে খাতমাহ সম্প্রদায়ের লোকজন! জেনে রাখো, আসমাকে আমিই হত্যা করেছি। যদি তোমরা এই হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাও, তবে তোমরা সকলে মিলে আমার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারো। কিন্তু এই সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ আর পাবে না।’ তারপর তিনি সম্প্রদায়ের লোকজনকে লক্ষ করে বললেন,

فوالذي نفسي بيده، لو قلتم بأجمعكم ما قالت لضربتكم بسيفي هذا حتى أموت أو أقتلكم.

‘ওই সত্তার শপথ যার হাতে আমার জীবন। যদি তোমরা সকলেও বলতে, আমরা তো মন্দ কিছুই বলিনি, তবে অবশ্যই আমার এই তরবারি দ্বারা তোমাদের সকলকেই হত্যা করতাম অথবা নিজেই মরতাম।’[12]

আরো পড়ুন : সারিয়্যা কাআব ইবনে উমায়ের আল-গিফারি – Expedition of Ka’b ibn ‘Umair al-Ghifari

আরো পড়ুন : সারিয়্যা কাআব ইবনে উমায়ের আল-গিফারি রা. – Sariya Ka’ab ibn Umair al-Ghifari

আরো পড়ুন : সারিয়্যা কুতবা ইবনে আমের – Expedition of Qutbah ibn Amir

উমায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহু সেদিনই প্রথম তার ইসলাম গ্রহণের কথা নিজ কওম বনু খাতমাহ-এর নিকট প্রকাশ করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তিনি তার ইসলাম গ্রহণের কথা নিজ কওমের নিকট গোপন করে আসছিলেন। আর তিনিই ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী বনু খাতমাহ গোত্রের প্রথম মুসলমান। তিনি নিজেকে কুরআন শিক্ষাদানকারী বলে দাবি করতেন। সেদিনই ইসলামের ইজ্জত, সম্মান, শক্তি আর দাপট দেখে বনু খাতমাহ গোত্রের কতিপয় লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আওস ও খুজায়মা ইবনে সাবেত অন্যতম।[13]

পরিশেষে বলা যায়, উক্ত সারিয়্যা ছিল একটি সম্পূর্ণ সফল ও সার্থক অভিযান। ফলাফল ছিল অত্যন্ত সন্তোষজনক। উমায়ের ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন আসমা বিনতে মারওয়ানকে অতি সহজেই কতল করেন এবং নিরাপদে মদিনায় ফিরে আসেন। এই অভিযানে মুসলমানদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।[14]

আরো পড়ুন : সারিয়্যা উম্মু কিরফা – Killing of Umm Qirfa

আরো পড়ুন : সারিয়্যা উয়ায়না ইবনে হিসন আল-ফাজারি – Expedition of Uyainah bin Hisn

আরো পড়ুন : সারিয়্যা উসামা ইবনে জায়েদ – Expedition of Usama bin Zayd

তথ্যসূত্র

 

 

[1]. ইবনু সাইয়িদিন নাস, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ১/৩৪০; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা :৪/২১৪; সুহাইলি, আর-রাউদুল উনুফ : খ/৪৯৯; ড. ইয়াসিন মাজহার, রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সরকার কাঠামো : ৪৬

[2]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৪/২১৪; জুরকানি, শরহুল মাওয়াহিবুল-লাদুন্নিয়া : ১/৪৫৩; আল-হালাবী, আস-সিরাতুল হালাবিয়্যা : ৩/১৫৭

[3]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ১/৩৪১; আস-সিরাতুল হালাবিয়্যা : ৪/২১৪

[4]. জুরকানি, শরহুল মাওয়াহিবুল-লাদুন্নিয়া : ১/৪৫৩; আস-সিরাতুল হালাবিয়্যা : ৩৩, ১৫৮

[5]. আর-রাওদুল উনুফ : ৭/৪৯৯; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৪/২১৪

[6]. আর-রাউদুল উনুফ : ৭/৪০০; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৪/২১৪ ২১৫

[7]. জুরকানি, শরহুল মাওয়াহিবুল-লাদুন্নিয়া : ১/৪৫৪; আস-সিরাতুল হালাবিয়্যা : ৩/১৫৮

[8]. ইবনু সাইয়্যিদিন নাস, উয়ুনুল আসার : ১২/৩৪১; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৪/২১৫; মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া : ১/৩৭৮; আস-সিরাতুল হালবিয়্যা : ৩/১৫৭

[9]. আর-রাউদুল উনুফ : ৭/৫০০; ইবনু সাইয়্যিদিন নাস, উয়ুনুল আসার : ১/৩৪০; আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া : ১/৩৭৮; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৪/২১৫; আস-সিরাতুল হালাবিয়্যা : ৩/১৫৭

[10]. জুরকানি, শরহুল মাওয়াহিবুল-লাদুন্নিয়া : ১/৪৫৪; আর-রাউদুল উনুফ : ৭/৫০০; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৪/২১৫

[11]. জুরকানি, শরহুল মাওয়াহিবুল-লাদুন্নিয়া : ১/৪৫৪; আস-সিরাতুল হালাবিয়্যা : ৩/১৫৮; মাদারিজুন নুবুওয়াত : ২/১৭৭

[12]. আর-রাউদুল উনুফ : ৭/৫০০-৫০১; জুরকানি, শরহুল মাওয়াহিবুল-লাদুন্নিয়া : ১/৪৫৪; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৪/২১৫; আস-সিরাতুল হালাবিয়্যা : ৩/১৫৮

[13]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৪/২১৫; আর-রাউদুল উনুফ : ৭/৫০১; জুরকানি, শরহুল মাওয়াহিবুল-লাদুন্নিয়া : ১/৪৫৪; আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ১/৩৪০; আস-সিরাতুল হালাবিয়্যা : ৩/১৫৮

[14]. রাহমাতুল্লিল আলামিন : ২/.২৩২; মাদারিজুন-নুবুওয়াত : ২/১৭৭

শেয়ার করুন

সূচীপত্র

error: Content is protected !!