১৭. (১০) গাজওয়াতুল বুহরান – Invasion of Buhran
১০. গাজওয়াতুল বুহরান
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে সংঘটিত গাজওয়া : ১০ |
|||||||||
|
|||||||||
শক্তি | |||||||||
তিনশত মুসলিম সৈন্য |
অজ্ঞাত |
নামকরণ
বুহরান শব্দটি দুই ভাবে পঠিত হয়ে থাকে : (ক) বাহরান, অর্থাৎ প্রথম হরফে জবর এবং দ্বিতীয় হরফ সাকিন যোগে।[1]
(খ) বুহরান, অর্থাৎ প্রথম বর্ণে পেশ এবং দ্বিতীয় বর্ণে সাকিন যোগে। ওয়াকিদি রহ.-এর বর্ণনামতে বুরহান শব্দটি মূলত ছিল নাজরান (نَجْران), কিন্তু হাদিসে গাজওয়া বুহরান (بُرْحانْ) ব্যবহৃত হয়েছে।[2]
বুরহান বা বাহরান হলো মদিনার ফুরু-এর পার্শ্ববর্তী একটি স্থানের নাম। ফুরু থেকে মদিনার দূরত্ব আট বুরুদ বা আট মাইল।[3] অন্য বর্ণনামতে, হিজাজের ফুরু সীমান্তে অবস্থিত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ একটি স্থানের নাম বুহরান।[4]
মানচিত্র (১৮) : গাজওয়াতুল বুহরানের স্থান
ঘটনার বিবরণ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাতফান যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর তৃতীয় হিজরির রবিউল আওয়াল মাস মদিনায় অতিবাহিত করেন।[5] এমতাবস্থায় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সংবাদ পৌঁছে, হিজাজের খনি সমৃদ্ধ বুহরান নামক স্থানে বনু সুলাইম মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একত্র হয়েছে এবং ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।[6] এই খবর শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের ২৭ মাসের মাথায় রবিউল আখির, মতান্তরে জুমাদাল উলা মাসে তিনশত মুসলিম সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে তাদের প্রতিহত করার জন্য ‘বুহরান’ নামক স্থানের উদ্দেশে যুদ্ধযাত্রা করেন।[7] যেহেতু ‘বুহরান’ নামক স্থানে এই যুদ্ধাভিযান পরিচালিত হয়, সেজন্য এই যুদ্ধকে ‘গাজওয়া বুহরান’ বলা হয়ে থাকে। সুলাইম গোত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেহেতু এই যুদ্ধের অবতারণা করেছে, সেজন্য কেউ কেউ এই যুদ্ধকে ‘গাজওয়া বনু সুলাইম’ বলেও অভিহিত করেন।[8] এই যুদ্ধাভিযানে যাত্রার প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর উপর অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য মদিনার বিচারকাজ, নামাজের ইমামতি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করে যান।[9]
আরো পড়ুন : সারিয়্যা কুরজ ইবনে জাবির ফিহরি (সারিয়্যা উরায়না) – Expedition of Kurz bin Jabir Al-Fihri
আরো পড়ুন : সারিয়্যা খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. – Expedition of Khalid ibn al-Walid
আরো পড়ুন : সারিয়্যা গালিব ইবনে আবদুল্লাহ আল-লাইসি – Expedition of Ghalib ibn Abdullah al-Laithi (Al-Kadid)
ওয়াকিদি রহ. বলেন, ‘মামার ইবনে রাশিদ ইমাম জুহরি রহ. থেকে আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করেন, বনু সুলাইমের মোকাবেলার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনশত সৈন্যের বাহিনী বুহরান পৌঁছাতে আর মাত্র এক দিনের পথ বাকি থাকতে বনু সুলাইমের এক ব্যক্তির সাথে পথিমধ্যে তাদের সাক্ষাৎ হয়। মুসলমানগণ সুলাইম গোত্র, তাদের রণপ্রস্তুতি এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকটি এই বলে সংবাদ দিল, সুলাইম গোত্রের সমবেত সৈন্যদল গতকালই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং তারা নিজ নিজ স্থলে ফিরে গেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বন্দি করে রাখতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৈন্যবাহিনী নিয়ে বুহরান নামক স্থানে পৌঁছালেন, কিন্তু সেখানে বিপক্ষ দলের কাউকেও দেখতে পেলেন না।[10] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ বিজয়ের নিদর্শনস্বরূপ ওই স্থানে ১০ দিন,[11] মতান্তরে ১৬ জুমাদাল উলা পর্যন্ত অবস্থান করে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন।[12] কোনো কোনো বর্ণনায়, মুসলিম সৈন্যবাহিনী রবিউল-আখির ও জুমাদাল উলা এই দুই মাস সেখানে অবস্থান করেছিল বলে উল্লেখ রয়েছে।[13] এই অভিযানে মুসলিম সৈন্যবাহিনীকে কোনো প্রকার যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়নি। কাফের বাহিনী মুসলিম সৈন্যদের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফিরে গিয়েছিল।[14]
এই সমরাভিযানে প্রত্যক্ষ লড়াই সংঘটিত না হলেও ইসলামের প্রচার-প্রসার ও কাফেরদের হতবিহ্বল করার ক্ষেত্রে এটির ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কাফেরদের পালিয়ে যাওয়া মুসলমানদের শক্তি ও সাহস বৃদ্ধি করেছিল, ইসলামের জয়যাত্রা ও উত্তরণের পথকে করেছিল সুগম ও সুসংহত।
তথ্যসূত্র
[1]. আল-কামিল ফিত-তারিখ : ২/১৪২
[2]. ওয়াকিদি, কিতাবুল মাগাজি : ১/১৯৬
[3]. ইবনু সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা : ২/৩৫
[4]. তারিখুত তাবারি : ২/১৭৭; মোবারকপুরি, আর-রাহিকুল মাখতুম : ২৭৩
[5]. ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ২/৪
[6]. ইবনু সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা : ২/৩৫
[7]. ওয়াফাউল ওয়াফা : ২/৬৮৩; নুরুল ইয়াকিন : ১২৪
[8]. সিরাতে মুহাম্মদিয়া, তরজমা মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যা : ৩৫৩
[9]. সিরাতুল মুস্তফা : ২/১৭৫; সিরাতু মুহাম্মাদিয়া : ৩৫৩
[10]. ওয়াকিদি, কিতাবুল মাগাজি : ১/১৯৬
[11]. ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ২/৪; আল-কামিল ফিত-তারিখ : ২/১৪২; ইবনু সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা : ২/৩৬
[12]. ফাতহুল-বারি : ৭/২৫৯; সিরাতুল মুস্তফা : ২/১৭৫
[13]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ৩/৫; তারিখুত তাবারি : ২/১৭৭; মোবারকপুরি, আর-রাহিকুল মাখতুম : ২৭৩
[14]. সিরাত ইবনে ইসহাক : ২১৯; ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মাআদ : ২৩/৯১; Majid Ali Khan, Muhammad the Final Messenger, p. ১৭৭