১. (১.) সিফুল বাহার অভিযান – Expedition of Hamza ibn Abdul-Muttalib[1]
১. (১.) সারিয়্যা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু
(সিফুল বাহার অভিযান) |
|||||||
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রেরিত সারিয়্যা : ০১ | |||||||
সাধারণ তথ্য | |||||||
|
|||||||
নেতৃত্ব | |||||||
আবু জাহল ইবনে হিশাম | হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব | ||||||
শক্তি | |||||||
৩০০ জন অশ্বারোহী | ৩০ জনের বাহিনী | ||||||
নোট | |||||||
এ যুদ্ধে হামজা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পতাকা ছিল ইসলামের প্রথম পতাকা, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মোবারক হাত দ্বারা বেঁধে দিয়েছিলেন। |
সময়কাল
হিজরি ১ম বর্ষ রমজান মাস মোতাবেক মার্চ ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের অভিযান সংঘটিত হয়।[2]

ঘটনার বিবরণ
ইবনে ইসহাক বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশেমকে ৩০ জনের একটি বাহিনীসহ ঈস নামক স্থানের দিকে সিফুল বাহরে (সমুদ্র তীরে) প্রেরণ করেন। এ বাহিনীতে কোনো আনসারি সাহাবি ছিল না। দলটি সমুদ্র তীরে আবু জাহল ইবনে হিশামের নেতৃত্বে পরিচালিত ৩০০ অশ্বারোহী বাহিনীর মুখোমুখি হয়। এখানে মাজদি ইবনে আমর আল-জুহানি উভয় বাহিনীর মধ্যে মধ্যস্থতা করে সমঝোতা করে দেন। ফলে উভয় দলের লোকেরা ফিরে যান—তাদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি।[4]
ইবনে ইসহাকের মতে, কেউ কেউ বলেন, হামজার পতাকা ছিল প্রথম পতাকা, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মুসলমানের হাতে তুলে দেন। মূলত, হামজা আর উবায়দার বাহিনী একই সময় প্রেরণ করা হয়, তাই অনেকের নিকট সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সফিউর রহমান মোবারকপুরি রহ. এ প্রসঙ্গে লেখেন, হামজা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর এটা ছিল প্রথম পতাকা, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মোবারক হাত দ্বারা বেঁধে দিয়েছিলেন। এর বহনকারী ছিলেন আবু মারসাদ কিনাজ ইবনে হাসিন গানাভি রাযিয়াল্লাহু আনহু।[5]
মুসা ইবনে উকবা জুহরি থেকে বর্ণনা করেন, উবায়দা ইবনে হারেসের বাহিনীর পূর্বে হামজার বাহিনীকে প্রেরণ করা হয়। আর হামজার বাহিনীকে যে আবওয়ার যুদ্ধের পূর্বে প্রেরণ করা হয়, তিনি তার পক্ষে প্রমাণও পেশ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবওয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করে মুহাজিরদের ৬০ জনের বাহিনীসহ উবায়দা ইবনে হারেসকে প্রেরণ করেন। ইতিপূর্বে ওয়াকিদির উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন, প্রথম হিজরি সনের রমজান মাসে হামজার বাহিনীকে প্রেরণ করা হয়, এরপর শাওয়াল মাসে প্রেরণ করা হয় উবায়দার বাহিনীকে। আল্লাহই ভালো জানেন।[6]
আরো পড়ুন : সারিয়্যা ফাদাক, ফাদাকের দ্বিতীয় অভিযান – Expedition of Muhaysa ibn Massud (Fadak)
আরো পড়ুন : সারিয়্যা ফাদাক, ফাদাকের প্রথম অভিযান – Expedition of ʿAlī ibn Abī Ṭālib (Fadak)
আরো পড়ুন : সারিয়্যায়ে ওয়াদিউল কুরা (প্রথম) – Expedition of Zayd ibn Harithah (Wadi al-Qura)
ইবনে ইসহাক হামজা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর একটা কবিতা উল্লেখ করেছেন, যা থেকে প্রতীয়মান হয়, ইসলামে তার পতাকাই ছিল প্রথম পতাকা। তবে ইবনে ইসহাক বলেন, হামজা এ কবিতা বলে থাকলে ঠিকই বলেছেন। কারণ, তিনি সত্য কথাই বলেন। মূলত কোনটা ঘটেছিল, তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। তবে আমরা জ্ঞানীদের থেকে যা শুনেছি, সে অনুযায়ী উবায়দাই ছিলেন অগ্রবতী। আর তার কাসিদাটি এই–
أَلَا يَا لَقَوْمِي لِلتَّحَلُّمِ وَالْجَهْلِ … وللنقض مِنْ رَأْيِ الرِّجَالِ وَلِلْعَقْلِ
وَلِلرَّاكِبِينَا بِالْمَظَالِمِ لَمْ نَطَأْ … لَهُمْ حُرُمَاتٌ مِنْ سَوَامٍ وَلَا أَهْلِ
كأنا بتلناهم ولا بتل عِنْدَنَا … لَهُمْ غَيْرُ أَمْرٍ بِالْعَفَافِ وَبِالْعَدْلِ
وَأَمْرٍ بِإِسْلَامٍ فَلَا يَقْبَلُونَهُ … وَيَنْزِلُ مِنْهُمْ مِثْلَ مَنْزِلَةِ الْهَزْلِ
فَمَا بَرِحُوا حَتَّى انْتَدَبْتُ لِغَارَةٍ … لَهُمْ حَيْثُ حَلُّوا أَبْتَغِي رَاحَةَ الْفَضْلِ
بِأَمْرِ رَسُولِ اللَّهِ أَوَّلُ خَافِقٍ … عَلَيْهِ لِوَاءٌ لَمْ يَكُنْ لاح من قبل
لِوَاءٌ لَدَيْهِ النَّصْرُ مِنْ ذِي كَرَامَةٍ … إِلَهٍ عَزِيزٍ فِعْلُهُ أَفْضَلُ الْفِعْلِ
عَشِيَّةَ سَارُوا حَاشِدِينَ وَكُلُّنَا … مَرَاجِلُهُ مِنْ غَيْظِ أَصْحَابِهِ تَغْلِي
فَلَمَّا تَرَاءَيْنَا أَنَاخُوا فَعَقَّلُوا … مَطَايَا وَعَقَّلْنَا مَدَى غَرَضِ النَّبْلِ
وَقُلْنَا لَهُمْ حَبْلُ الْإِلَهِ نَصِيرُنَا … وَمَا لَكُمُ إِلَّا الضَّلَالَةُ مِنْ حَبْلِ
فَثَارَ أَبُو جَهْلٍ هُنَالِكَ بَاغِيًا … فَخَابَ وَرَدَّ اللَّهُ كَيْدَ أَبِي جَهْلِ
وَمَا نَحْنُ إِلَّا فِي ثَلَاثِينَ رَاكِبًا … وَهُمْ مِائَتَانِ بَعْدَ وَاحِدَةٍ فَضْلِ
فِيَالَ لُؤَيٍّ لَا تُطِيعُوا غُوَاتَكُمْ … وَفِيئُوا إِلَى الْإِسْلَامِ وَالْمَنْهَجِ السَّهْلِ
فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ يَصُبَّ عَلَيْكُمُ … عذاب فتدعوا بالندامة والثكل
‘হে আমার সম্প্রদায়, সাবধান! নিজেদের মিথ্যা স্বপ্ন আর অজ্ঞতার জন্য বিস্ময় প্রকাশ করো; বিস্ময় প্রকাশ করো জ্ঞানবুদ্ধি আর লোকের মতের বিরুদ্ধাচরণের জন্যও।
আরও বিস্ময় প্রকাশ করো অশ্বারোহী বাহিনীর জুলুম নির্যাতনের জন্য। আমরা তাদের সম্পদ আর জনবলের অবমাননা করিনি।
যেন আমরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি, অথচ আমরা তা করি না। আমরা তাদের জন্য পবিত্ৰতা আর ইনসাফের হুকুম ছাড়া আর কিছুই করি না।
ইসলাম গ্রহণের হুকুম ছাড়া আমরা অন্য কোনো হুকুম করি না। তবে তারা ইসলাম কবুল করে না; বরং উপহাসের অবস্থান গ্রহণ করে।
তারা অটল থাকে (একই অবস্থায়), শেষ পর্যন্ত আমি প্রেরিত হই একটি আকস্মিক অভিযানে। যেখানেই তারা অবস্থান নেয়, সেখানে আমি তাদের জন্য শান্তি আর কল্যাণ কামনা করি।
রাসুলের নির্দেশে তার উপর প্রথম পতাকা উড়ছে, যা ইতিপূর্বে কখনো উড্ডীন হয়নি।
এ পতাকার সঙ্গে রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার সাহায্য, যে আল্লাহ সর্বশক্তিমান, যার কাজ সর্বোত্তম কাজ।
তারা রাতের প্রথম প্রহরে প্রস্তুত হয়ে যাত্রা করে, আর তাদের প্রতি ক্ৰোধের ফলে আমাদের হৃদয় উত্তেজিত হচ্ছিল।
আমরা যখন পরস্পর মুখোমুখি হলাম, তারা তখন সওয়ারি বসিয়ে বেঁধে ফেলল। আমরাও তখন বাহনগুলো বেঁধে নিই তিরের লক্ষ্যসীমার বাইরে, আর তোমাদের জন্য তো গোমরাহি ছাড়া কোনো আশ্রয় নেই।
সেখানে আবু জাহল গর্জে উঠে ঔদ্ধত্যে, আবু জাহলের চক্রান্তকে ব্যৰ্থ করে দেন আল্লাহ।
আমরা ছিলাম কেবল ত্ৰিশজন অশ্বারোহী! আর তারা ছিল দুশো একজন।
হে লুয়াই গোত্রের লোকেরা! তোমরা আনুগত্য কোরো না তোমাদের গোমরাহ লোকদের। ফিরে এসো তোমরা ইসলামে, সরল পথে।
আমার আশঙ্কা হয়, তোমাদের উপর আজাব নাজিল হবে, তখন তোমরা লাঞ্ছিত হয়ে সন্তান হারানোর জন্য রোদন করবে।’[7]
আরো পড়ুন : বুওয়াত অভিযান – Patrol of Buwat
আরো পড়ুন : আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার অভিযান – Expedition Abdullah ibn Rawaha
আরো পড়ুন : আবু আফাক হত্যা – Killing of Abu Afak
ইবনে ইসহাক বলেন, আবু জাহল–তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত হোক—এর জবাবে বলে,
عَجِبْتُ لِأَسْبَابِ الْحَفِيظَةِ وَالْجَهْلِ … وَلِلشَّاغِبِينَ بِالْخِلَافِ وَبِالْبُطْلِ
وَلِلتَّارِكِينَ مَا وَجَدْنَا جُدُودَنَا … عَلَيْهِ ذَوِي الْأَحْسَابِ وَالسُّؤْدُدِ الْجَزْلِ
‘এসব রাগ-লোভ আর অজ্ঞতার সমূহ কারণ নিয়ে আমি অবাক, বিরোধ আর অর্থহীন কথায় যারা মেতে ওঠে, তাদের জন্য আমি অবাক হই।
যারা বিসর্জন দেয় পূর্বপুরুষের রীতিনীতি, (তাদের জন্য বিস্ময়) যারা ছিলেন বংশমর্যাদা আর নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের অধিকারী।’[8]
তথ্যসূত্র
[1]. বিস্তারিত দেখুন : (سَرِيّةُ حَمْزَةَ إلَى سَيْفِ الْبَحْرِ) তারিখুল ইসলাম, ২/৫১৭, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/২৬, তারিখে খলিফা ইবনে খাইয়্যাত : ৬১, দলায়েলুন নবুওয়াত : ৪/৪০৬, আর রাওদুল উনফ : ৫/৪৩, ইমতাউল আসমা : ১/৭১, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ৬/১১, সিরাতে ইবনে হিশাম : ১/৫৯৫, আর-রাহিকুল মাখতুম : ১৭৮
[2]. মোবারকপুরি, আর-রাহিকুল মাখতুম : ১৭৮
[3]. মানচিত্রগুলো মুসলিম ভিলেজ কতৃক প্রকাশিত ‘মানচিত্রে সিরাহ’ ও মাকতাবাতুল খিদমাহ থেকে প্রকাশিত ‘আল কুরআনের মানচিত্র’ বইদুটি থেকে সংগৃহীত। মানচিত্রগুলোর রঙ্গিন ও ঝকঝকে সংস্করণ দেখতে বই দুটো সংগ্রহ করার অনুরোধ রইলো।
[4]. ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/২৬; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ২/৬৩২
[5]. মোবারকপুরি, আর-রাহিকুল মাখতুম : ১৭৮
[6]. ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/২৬
[7]. ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/২৭
[8]. ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫/২৭