২১. (৯) সারিয়্যা আবু সালামা – Expedition of Qatan
০৯. বনু আসাদ বিন খুজায়মাহ গোত্রের উপর অভিযান
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কর্তৃক প্রেরিত সারিয়্যা : ৯ |
|||||||
|
|||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
মুসলমান | বনু আসাদ ইবনে খুজায়মাহ গোত্র | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
আবু সালামা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ | তুলায়হা | ||||||
শক্তি | |||||||
১৫০ | অজ্ঞাত | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
০ | ৩ বন্দি |
পরিচিতি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবি আবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর অধিনায়কত্বে হিজরতের ৩৫ তম মাসে অর্থাৎ হিজরির মুহাররম মাসে কাতান পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আসাদ গোত্রের বিরুদ্ধে এই ক্ষুদ্র সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়। উহুদ যুদ্ধে আবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর বাহুতে একটি তির বিদ্ধ হলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। মাসাধিক কাল চিকিৎসা গ্রহণের পর আহত স্থানের ঘা শুকালেও দেহের অভ্যন্তরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় তার উপর বনু আসাদ গোত্রের এলাকায় অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয়।
মানচিত্র (২২) : অবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-র অভিযান স্থল
আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এই মর্মে সংবাদ পৌঁছায়, তুলায়হা ও তার ভাই সালামা ইবনে খুওয়ালিদ নিজেদের গোত্র এবং তাদের প্রভাবাধীন, অন্যান্য ক্ষুদ্র গোত্ৰসমূহকে মদিনার উপর আক্রমণের জন্য উত্তেজিত করছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এই ষড়যন্ত্রের মূলোচ্ছেদ করার জন্য মুহাজির ও আনসার সাহাবিগণের সমন্বয়ে গঠিত দেড়শত মুজাহিদের একটি বাহিনী গঠন করেন এবং আবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে এটির সেনাপতি নিযুক্ত করে ‘কাতান’ অভিমুখে যাত্রার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এই অভিযানে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, উসাইদ ইবনে হুদাইর, আরকাম ইবনে আবিল আরকাম রাযিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ সাহাবিও অংশগ্রহণ করেন।[1]
আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা. – Expedition of Abu Ubaidah ibn al Jarrah
আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবু বকর সিদ্দিক রা. – Expedition of Abu Bakr As-Siddiq
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট সামরিক বাহিনীর পতাকা অর্পণের প্রাক্কালে বলেন, ‘রওনা হয়ে যাও এবং আসাদ গোত্র ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পূর্বেই তাদের ছত্রভঙ্গ করে দাও।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ও তার সঙ্গীদের তাকওয়া অবলম্বনের উপদেশ দেন। আবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু সচরাচর ব্যবহৃত পথ দিয়ে না গিয়ে ভিন্ন এক পথ ধরে অগ্রসর হলেন এবং অকস্মাৎ আসাদ গোত্রের জনপদে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
আসাদ গোত্র মুসলিম বাহিনীর আকস্মিক উপস্থিতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পালিয়ে যেতে লাগল। আবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু তার ক্ষুদ্র বাহিনীকে তিন ভাগে বিভক্ত করে পলায়নকারীদের পশ্চাদ্ধাবন করে তাদের বহু দূর নিয়ে যান। তিনি এখানে তেরো দিন অবস্থান করেন।
এই অভিযানে মুসলিম বাহিনী পর্যাপ্তসংখ্যক উট ও ছাগল-ভেড়া গনিমত হিসেবে লাভ করে এবং তা মদিনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অংশে একটি গোলাম এবং এক-পঞ্চমাংশ পৃথক করার পর অবশিষ্ট গনিমত সৈনিকগণের মধ্যে বণ্টন করা হয়। প্রত্যেক সৈনিক ৭টি করে উট এবং কিছু ছাগল লাভ করেন। যুদ্ধের সংবাদ প্রদানকারী আসাদ গোয় ব্যক্তিকে গনিমত থেকে একটি পূর্ণ অংশ প্রদান করা হয়।
এই অভিযানে কোনো লোকক্ষয় হয়েছিল কি না, তা জানা যায় না। তবে ইবনে কাসির শত্রুদের তিনজন দাস বন্দি হওয়ার উল্লেখ করেন।[2] মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পর আবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পূর্বের ক্ষতস্থানের ঘা মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং জুমাদাল উলা মাসের ২৭ তারিখে তিনি ইনতেকাল করেন।[3]
ইবনে সাদ-এর মতে তিনি জিলকদ মাসে ইনতেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রী উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে তার ইদ্দতশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ করেন।
আরো পড়ুন : সারিয়্যা শুজা ইবনে ওয়াহব আল-আসাদি – Expedition of Shuja ibn Wahb al-Asadi
আরো পড়ুন : সারিয়্যা সাঈদ ইবনে জায়েদ আল-আশহালি Raid of Sa’d ibn Zaid al-Ashhali
আরো পড়ুন : সারিয়্যা হিসমি – Expedition of Zayd ibn Harithah (Hisma)
তথ্যসূত্র
[1]. মাদারিজুন নুবুওয়াত : ২/২৪৭
[2]. ইবনে কাসির, আল-আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৪/৬১
[3]. আল-আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৪/৬১