সিরাত বিশ্বকোষ
সিরাত বিশ্বকোষ

২৫. (১৩) গাজওয়া বনি নাজির – Invasion of Banu Nadir

২৫. (১৩) গাজওয়া বনি নাজির – Invasion of Banu Nadir

১৩. গাজওয়া বনি নাজির

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে সংঘটিত গাজওয়া : ১৩

তারিখ সফর, ৪ হিজরি; আগস্ট, ৬২৫ খ্রি.
অবস্থান মদিনা, হেজাজ, আরব।
ফলাফল অভিযান এবং অবরোধ সফল হয়।
কারণ বনু নাজিরের চুক্তি ভঙ্গ
বিবাদমান পক্ষ
মদিনার মুসলমান বনু নাজির গোত্র
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুয়াই ইবনে আখতাব
শক্তি
৮০০ অজানা
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। মদিনা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

 

 

বনু নাজির পরিচিতি

 

বনু নাজির শব্দটির (নাদির) আরবি মূল রূপ হলো (النُضِير)। নাজিরকে কোনো গোত্রের দিকে ইঙ্গিত করতে চাইলে নাদরিয়ু বলতে হবে। বনু নাজিরের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেন, তবে তাদের মূল বক্তব্য প্রায় একই রকম। যেমন, লিসানুল আরব আভিধানিক বলেন, ‘তারা হারুন আলাইহিস সালাম-এর উত্তরসূরি। তারা কোনো একসময় আরবে এসেছিল এবং খায়বারে ইহুদিদের একটি গোত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।’ এভাবে আল-মুনজিদ অভিধানের রচয়িতা বলেন, ‘বনু নাজির মদিনায় ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি গোত্র। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছিল। সেই কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মদিনা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন এবং তাদের মালিকানাভুক্ত সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন।’[1] ইয়াকুবি বলেন, ‘তারা ছিল জুযামি আরবদের একটি সম্প্রদায়, যারা ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছিল। অন্য এক মতে তারা ছিল আদিতে ইহুদি এবং খায়বারবস্থিত ইহুদিদের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল।’[2]

বিজ্ঞাপন

 

বনু নাজির নাম গ্রহণের ব্যাপারে একটি মত পাওয়া যায়, প্রথমে তারা আন-নাজির নামক পার্বত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে, এজন্যই তাদের বনু নাজির বলা হয়।[3]

 

তারা কোন সময় মদিনায় এসে বসতি স্থাপন করে, এর কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। অনেকেই মনে করেন, তারা রোমান শাসনামলে কোনো এক অজ্ঞাত সময়ে ফিলিস্তিন থেকে ইয়াসরিব (মদিনা) এসে বসতি স্থাপন করেছিল।[4]

 

আরো পড়ুন : আল-আবওয়া অভিযান – Patrol of Wa ddan (al-Abwa)

 

আরো পড়ুন : আল-উশাইরা অভিযান – Patrol of Zul Al-Ushairah

 

আরো পড়ুন : আসমা বিনতে মারওয়ান হত্যা – Killing of Asma Bint Marwan

 

কোনো কোনো আরব ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেন, ‘তাদের মাঝে আরবি রক্তের সংমিশ্রণ থাকাও সম্ভব। মদিনায় অন্যান্য ইহুদিদের ন্যায় তারা আরবি নাম গ্রহণ করত, কিন্তু নিজেদের স্বকীয়তাও বজায় রাখত এবং একটি নিজস্ব উপভাষায় কথা বলত। তারা কৃষিকাজ, ঋণ প্রদান, অস্ত্রশস্ত্র ও অলংকারের ব্যবসা দ্বারা নিজেদের আর্থিক সমৃদ্ধি সাধন করেছিল।

 

সামাজিকভাবে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তারা বিভিন্ন গোত্রের সাথে সন্ধিবদ্ধ হতো এবং প্রয়োজনে সন্ধিবদ্ধ গোত্রের সহযোগিতা গ্রহণ করত। মদিনার আওস গোত্রের সাথে তাদের ছিল মিত্ৰবন্ধন। এই মিত্রবন্ধন ও সন্ধি থাকার কারণে খাযরাজ গোত্রের সাথে বিবাদের সময় তারা আওসের সাথে যোগ দিত। অবশ্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পর হিজরি প্রথম বর্ষে আওস ও খাযরাজসহ মদিনার অন্যান্য ইহুদি গোত্রের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত মদিনা সনদে স্বাক্ষর করেছিল।

 

বনু নাজিরের তদানীন্তন সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী গোত্রপতি হুয়াই ইবনে আখতাব-এর কন্যা সাফিয়্যা রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ করেছিলেন।[5]

 

 

মানচিত্র (২৬) : বনু নাজিরের অবস্থান

 

তাদের আবাসভূমি

 

বনু নাজির বহুকাল যাবত ইয়াসরিবে প্রভাব-প্রতিপত্তির সাথে বসবাস করে আসছিল। মদিনার বাইরে তাদের গোটা জনবসতি একসাথেই ছিল। নিজ গোত্রের লোকজন ছাড়া অপর কোনো গোত্রের লোকজন তাদের মধ্যে ছিল না। গোটা বসতি এলাকাকে তারা একটি দুর্গে রূপান্তরিত করেছিল। সাধারণত বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ও নিরাপত্তাহীন উপজাতীয় এলাকায় ঘরবাড়ি যেভাবে নির্মাণ করা হয়ে থাকে, তাদের ঘরবাড়িও ঠিক তেমনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এইগুলো ছিল ছোট ছোট দুর্গের মতো। তা ছাড়া তাদের সংখ্যাও সেই সময়ের মুসলমানদের সংখ্যা থেকে কম ছিল না। এমনকি মদিনার অভ্যন্তরেও বহুসংখ্যক মুনাফিক তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করত। তাই মুসলমানগণও কখনো এই আশা করেনি, লড়াই ছাড়া শুধু অবরোধের কারণেই দিশেহারা হয়ে তারা নিজেদের বসতভিটা ছেড়ে চলে যাবে। বনু নাজির গোত্রের লোকজন নিজেরাও এই কথা কল্পনা করেনি, কোনো শক্তি মাত্র ছয় দিনের মধ্যেই তাদের হাত থেকে এই জায়গা ছিনিয়ে নেবে।

 

বনু নাজিরের চুক্তি ভঙ্গ

 

মদিনায় ইসলামের দ্রুত প্রসার হতে থাকলে ইহুদিদের ধর্মীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি লোপ পেতে থাকে। ফলে মদিনায় অন্যান্য ইহুদি সম্প্রদায়ের সাথে বনু নাজিরও প্রথমে গোপনে ও পরে প্রকাশ্যে মদিনা সনদের শর্ত ভঙ্গ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। চুক্তির বিরুদ্ধে খোলাখুলি এই শত্রুতামূলক আচরণ সীমিত পর্যায়ে তারা বদর যুদ্ধ আরম্ভের পূর্ব থেকেই শুরু করেছিল। কিন্তু বদরযুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানগণ কুরাইশদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিজয় লাভ করলে তারা এবং তাদের হিংসা ও বিদ্বেষের আগুন আরও অধিক প্রজ্বলিত হয়। তারা আশা করেছিল, এই যুদ্ধে কুরাইশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মুসলমানরা ধ্বংস হয়ে যাবে। ইসলামের এই বিজয়ের খবর পৌঁছাবার পূর্বেই তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু ও মুসলমানদের পরাজয়ের গুজব ছড়াতে থাকে। কিন্তু ফলাফল তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত হলে তারা রাগে ও দুঃখে ফেটে পড়ার উপক্রম হয়। বনু নাজির গোত্রের নেতা কাব ইবনে আশরাফ চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ যদি আরবের এই সকল সম্মানিত নেতাদের হত্যা করে থাকে, তাহলে পৃথিবীর উপরিভাগের চেয়ে অভ্যন্তরভাগই আমাদের জন্য অধিক উত্তম।’ এভাবে সে মক্কায় গিয়ে শোকগাথা রচনা করে তাদের উসকানি দিতে থাকে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ও কাব ইবনে আশরাফকে হত্যা ও পরবর্তী সময়ে তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে কুরাইশরা বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মদিনা আক্রমণ করলে ইহুদিরা দেখলো, তিন হাজার কাফের সৈন্যের বিরুদ্ধে মাত্র এক হাজার মুসলিম সৈন্য। আবার তাদের পক্ষ থেকে তিনশত মুনাফিক দলত্যাগ করে ফিরে এসেছে। তখন তারা স্পষ্টভাবে প্রথমবারের মতো চুক্তি ভঙ্গ করে বসল এবং সুযোগ বুঝে মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার পরিকল্পনা করল।

 

আরো পড়ুন : বুওয়াত অভিযান – Patrol of Buwat

 

আরো পড়ুন : আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার অভিযান – Expedition Abdullah ibn Rawaha

 

আরো পড়ুন : আবু আফাক হত্যা – Killing of Abu Afak

 

বনু নাজিরের বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুদ্ধ

 

উহুদের পর বির মাউনার ঘটনায় মদিনার ইহুদি ও মুনাফিকরা আরও বেশি আনন্দিত হলো। তারা এসব ঘটনায় মুসলমানদের প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করতে লাগল। এ দিকে মুসলমানদের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়া মদিনাবাসীদের জন্য ভয়ের কারণ ছিল। তা ছাড়া মদিনার আশেপাশের রাষ্ট্রগুলো মদিনার অভ্যন্তরের এই পারস্পরিক বিরোধের খবর জানতে পারলে, তারাও মদিনা আক্রমণ করে বসবে। এমনি অবস্থার পাশাপাশি ইহুদিরাও সেই সময়ের অপেক্ষা করছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ভালো করেই জানতেন। শিবলি নোমানি বলেন, ‘কুরাইশগণ পত্র লিখেছিল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করো। অন্যথায় আমরা নিজেরাই এসে তোমাদের সমূলে উচ্ছেদ করব।’

 

বনু নাজির প্রথম থেকেই ইসলামের শত্রু ছিল। কুরাইশদের এই বার্তা পেয়ে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সংবাদ পাঠাল, ‘আপনি ত্রিশজন লোক নিয়ে আসুন, আমরাও আমাদের পাদরিদের সঙ্গে রাখব। আপনার কথা শুনে যদি আমাদের পাদরিরা বিশ্বাস করতে পারেন, তাহলে আপনার ধর্ম গ্রহণ করার ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিধা থাকবে না।’ ইহুদিদের গোপন ষড়যন্ত্রের কথা অনুমান করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখে পাঠালেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একটি চুক্তিপত্র না লিখে দেবে, ততক্ষণ আমি তোমাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারি না।’ কিন্তু তারা এই প্রস্তাবে রাজি হলো না।

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের বন্ধু ভাবাপন্ন বনু কুরাইজার নিকট গমন করে তাদের চুক্তিপত্র পুনঃস্বাক্ষর করতে বললে তারা পুনরায় স্বাক্ষর করল। বনু নাজিরের জন্য এটি একটা হুমকিস্বরূপ ছিল, তাদের বন্ধুগণ সন্ধি করল কিন্তু তারা করতে পারল না।[6] তদুপরি তারা পুনরায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বার্তা পাঠিয়েছিল, ‘আপনি তিনজন লোক নিয়ে আসুন, আমরাও তিনজন আলেম নিয়ে আসছি। এই আলেমগণ যদি আপনার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেন, তাহলে আমরাও আপনার উপর বিশ্বাস স্থাপন করব।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এই প্রস্তাবে সম্মত হলেন। কিন্তু পথিমধ্যে বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারলেন, ইহুদিদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেই তাকে হত্যা করা হবে।[7]

 

আরো পড়ুন : সিফুল বাহার অভিযান – Expedition of Hamza ibn Abdul-Muttalib

 

আরো পড়ুন : হুদাইবিয়ার সন্ধি – Treaty of Hudaybiyyah

 

তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের অবস্থা জানার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ইতিপূর্বে বনু কিলাব গোত্রের ভুলবশত দুই ব্যক্তির হত্যার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে আলাপ ও পরামর্শের জন্য মদিনা শহরের দুই মাইল দূরে কুকার উপকণ্ঠে বনু নাজিরের বসতিতে গমন করলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দশজন সাহাবি ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আবু বকর, উমর, আলি ইবনে আবু তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় সাহাবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূল উদ্দেশ্য গোপন করে বনু নাজিরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা বনু কিলাব গোত্রের একজন নিহত ব্যক্তির হত্যার ক্ষতিপূরণ কী হওয়া উচিত?’[8]

 

গাজওয়া বনু নাজির-এর সময়কাল

 

হিজরি ৪র্থ সনের প্রথমদিকে গাজওয়া উহুদের পরে ও গাজওয়া আহজাবের পূর্বে গাজওয়া বনু নাজির সংঘটিত হয়। ইবনে ইসহাক রহ.-এর মতে, বিরে মাউনা ও উহুদের পর গাজওয়া বনু নাজির সংঘটিত হয়। ইমাম জুহরি উরওয়া ইবনে জুবাইরের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন, এই যুদ্ধ বদর যুদ্ধের ছয় মাস পর সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু ইবনু সাদ, ইবনে হিশাম ও বালাজুরি এটিকে হিজরি চতুর্থ সনের রবিউল আওয়াল মাসের ঘটনা বলে বর্ণনা করেন। আর এটিই সঠিক বলে মনে করা হয়। কারণ সমস্ত বর্ণনা অনুসারে এই যুদ্ধ বিরে মাউনার দুঃখজনক ঘটনার পরে সংঘটিত হয়েছিল। এই বিষয়টিও ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, বিরে মাউনার ঘটনা উহুদ যুদ্ধের পরে ঘটেছিল।

 

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক হুঁশিয়ারি

 

ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু নাজির সম্প্রদায়কে মদিনা থেকে বহিষ্কার করে নেওয়ার জন্য ১০ জন সাহাবিকে পাঠালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলে পাঠালেন, ‘তোমাদের ১০ দিনের সময় দেওয়া গেল। এই সময়ের মধ্যে তোমরা মদিনা ত্যাগ করে চলে যাবে, অন্যথায় ১০ দিন পর তোমাদের মধ্যে থেকে যাকেই মদিনার ত্রি-সীমানার ভেতরে পাওয়া যাবে, তাকেই হত্যা করা হবে।’ তারা মদিনা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।[9] এ সময় মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই সংবাদ পেয়ে ইহুদিদের এই বলে প্ররোচনা দিল, তোমরা তোমাদের অবস্থানে অবিচল থাকো, প্রয়োজনে আমি তোমাদের লোকবল দিয়ে সহযোগিতা করব। এভাবে বনু নাজিরের সর্দার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট চিঠি লিখল, আমরা কোনোভাবেই মদিনা ত্যাগ করব না, আপনার যা করার তা করতে পারেন। এই সংবাদ পেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআল্লাহ আকবার’ ধ্বনি দিলেন এবং বললেন, ইহুদিদের ধ্বংস হয়েছে। তাদের দুর্গ লক্ষ করে তিনি যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।[10]

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা ফাদাক, ফাদাকের দ্বিতীয় অভিযান – Expedition of Muhaysa ibn Massud (Fadak)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা ফাদাক, ফাদাকের প্রথম অভিযান – Expedition of ʿAlī ibn Abī Ṭālib (Fadak)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যায়ে ওয়াদিউল কুরা (প্রথম) – Expedition of Zayd ibn Harithah (Wadi al-Qura)

 

পবিত্র কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াত দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায়, বনু নাজিরের যুদ্ধ ছিল মূলত মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে। যেমন কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

 

سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (১) هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ مَا ظَنَنْتُمْ أَنْ يَخْرُجُوا وَظَنُّوا أَنَّهُمْ مَانِعَتُهُمْ حُصُونُهُمْ مِنَ اللَّهِ فَأَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُمْ بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَاأُولِي الْأَبْصَارِ (২)

 

‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সমস্তই তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে; তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তিনিই কিতাবিদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে প্রথমবার সমবেতভাবে তাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করলেন। তোমরা কল্পনাও কোরোনি যে, তারা নির্বাসিত হবে এবং তারা মনে করেছিল দুর্ভেদ্য দুর্গগুলো তাদের রক্ষা করবে আল্লাহ থেকে। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি এমন এক দিক থেকে এলো, যা ছিল তাদের ধারণাতীত এবং তাদের অন্তরে তা ত্রাসের সঞ্চার করল। তারা ধ্বংস করে ফেলল নিজেদের বাড়িঘর নিজেদের হাতে এবং মুমিনদের হাতেও। অতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’[11]

 

পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের দ্বারা এটিই প্রতীয়মান হয়, বনু নাজিরের যুদ্ধ হয়েছিল মূলত আল্লাহর বিরুদ্ধে। প্রকৃত ব্যাপারও ছিল তাই। ইহুদি জাতির মানসিকতা ও শত শত বছরের ঐতিহ্য হলো, তারা এমন এক অদ্ভূত জাতি—যারা জেনেশুনে মহান আল্লাহর মোকাবেলা করে আসছিল। তারা আল্লাহর রাসুলদেরকে আল্লাহর রাসুল জেনেও হত্যা করেছিল এবং অহংকারের সাথে বলেছে, আমরা আল্লাহর রাসুলকে হত্যা করেছি।

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার ষড়যন্ত্র

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবি আমর ইবনে উমাইয়া রাযিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক নিহত বা আমেরের দুজন লোকের জন্য রক্তপণ আদায় করার ব্যাপারে সাহায্য চাইতে বনু নাজিরের কাছে গেলেন। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলেন। বনু নাজির ও বনু আমেরের মধ্যেও অনুরূপ চুক্তি ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বনু নাজিরের কাছে গেলেন, তখন তারা তাকে স্বাগত জানাল এবং রক্তপণের ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে সম্মত হলো। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তাদের মনে এক কুটিল ষড়যন্ত্রের কথা জাগল। তারা গোপনে শলাপরামর্শ করতে লাগল, কীভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করা যায়। তারা মনে করল, এমন মোক্ষম সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। ওই সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা প্রাচীরের পাশে বসাছিলেন। তার সাথে ছিলেন আবু বকর, উমর ও আলি (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)।

 

বনু নাজিরের লোকেরা পরস্পর শলাপরামর্শ করল। তারা বলল, ‘কে আছো যে পাশের ঘরের ছাদে উঠে বড় একটি পাথর মুহাম্মাদের উপর ফেলে দিতে পারবে এবং তার কবল থেকে আমাদের মুক্তি দেবে?’ বনু নাজিরের এক ব্যক্তি আমর ইবনে জাহাশ ইবনে কাব এই কাজের জন্য প্রস্তুত হলো। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর পাথর ফেলে দেওয়ার জন্য ছাদের উপর আরোহণ করল। সালাম ইবনে মিশকাম নামের এক ইহুদি বলল, ‘সাবধান! এমন কাজ কোরো না। আল্লাহর কসম! তোমাদের ইচ্ছার খবর আল্লাহর রাসুল পেয়ে যাবেন। আল্লাহ পাকই তাকে খবর দেবেন। তা ছাড়া মুসলমানদের সাথে আমাদের যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা-ও লঙ্ঘন করা হবে।’ কিন্তু দুবৃত্ত স্বভাবের দুর্ভাগা ইহুদিরা কোনো কথাই কানে তুলল না। তারা নিজেদের অসদুদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অটল রইল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব থেকেই এসব ব্যাপার গভীরভাবে ও সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন। এ দিকে রাব্বুল আলামিন আল্লাহ পাক তার প্রিয় রাসুলের নিকট জিবরাঈল আলাইহিস সালাম-কে প্রেরণ করলেন। আল্লাহর রাসুল দ্রুত সেই জায়গা থেকে উঠে মদিনার পথে রওনা হলেন। তার সঙ্গী সাহাবিগণ তখনো টের পাননি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় গেছেন। কিন্তু বনু নাজিরের লোকেরা ব্যাপারটি বুঝে ফেলল। তারা বুঝতে পারল, তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণের সাথেও একই ব্যবহার করবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ল। তাদের একটি অংশ ভাবল, ‘আমরা যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণের সাথেও একই ব্যবহার করি, তা হলে অবশ্যই তিনি আমাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন।’ তারা আরও ভাবল, ‘যদি তার সাথিগণ নিরাপদে ফিরে যান, তাহলে তারা হয়তো আমাদের ষড়যন্ত্রের কথা বুঝতেই পারবে না। তাতে মুসলমানদের সাথে আমাদের পুরোনো চুক্তি বহাল থাকবে।’[12]

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা গালিব ইবনে আবদুল্লাহ, ফাদাকের চতুর্থ অভিযান – Expedition of Ghalib ibn Abdullah al-Laithi (Fadak)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা তারাফ – Expedition of Zayd ibn Harithah (At-taraf)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা ফাদাক, ফাদাকের তৃতীয় অভিযান – Expedition of Bashir Ibn Sa’d al-Ansari (Fadak)

 

এ দিকে সাহাবিগণ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন দেখলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরছেন না, তখন তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোঁজে বের হলেন। তারা প্রথমে মনে করেছিলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাহিরে গেছেন। কিন্তু পথিমধ্যে এক ব্যক্তিকে পেলেন, যে মদিনা থেকে ফিরে আসছিল। সাহাবিগণ তার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধান চাইলেন। সে বলল, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি মদিনায় প্রবেশ করতে দেখেছি।’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করতে দেখেছি।’[13]

 

সাহাবিগণ তৎক্ষণাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছালেন। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, সাহাবায়ে কেরাম তাকে অনুসরণ করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এত দ্রুত চলে এলেন, আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুচক্রী ইহুদিদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সাহাবিদের অবহিত করলেন। তিনি তাদের বনু নাজিরের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিলেন। মদিনায় ফিরে আসার পর আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে বনু নাজিরের লোকের নিকট প্রেরণ করেন এবং তাদের এই নোটিশ দেন, ‘তোমরা অবিলম্বে মদিনা থেকে বের হয়ে যাও। এখানে তোমরা আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। তোমাদের ১০ দিনের সময় দেওয়া হলো। এরপর তোমাদের মধ্যে যাকে পাওয়া যাবে, তার শিরচ্ছেদ করা হবে।’

 

এই চরম নির্দেশ শুনে বনু নাজির হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল। তাদের মুখে কোনো কথা এলো না। তারা শুধু এতটুকুই বলল, ‘হে ইবনে মাসলামা! আওস গোত্রের কোনো লোক এরূপ চরম সংবাদ আমাদের নিকট নিয়ে আসবে—এ কথা আমরা কোনো দিন কল্পনাও করিনি।’ এই উক্তির মাধ্যমে আওস গোত্রের সাথে তাদের সম্পাদিত একটি অতীত চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসার আগে খাযরাজদের বিরুদ্ধে আওস গোত্র ইহুদিদের সাথে উক্ত চুক্তি সম্পাদন করেছিল। সেসময়ে ইহুদি ও আওসরা ছিল একে অপরের মিত্র। ইহুদিদের মন্তব্যের জবাবে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাযিয়াল্লাহু আনহু শুধু এতটুকুই বললেন, ‘এখন আর মনের অবস্থা সেরূপ নেই।’

 

এই নোটিশ পাওয়ার পর ইহুদিরা বহিষ্কার হওয়া ব্যতীত অন্য কোনো উপায় খুঁজে পেল না। কয়েক দিনের মধ্যে তারা সফরের প্রস্তুতি শুরু করল। কিন্তু মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইহুদিদের খবর পাঠাল, ‘তোমরা নিজেদের জায়গায় অটল থাকো, বাড়িঘর ছেড়ে যেয়ো না। আমার নিয়ন্ত্রণে দুই হাজার যোদ্ধা রয়েছে, যারা তোমাদের সঙ্গে দুর্গে প্রবেশ করবে। তারা তোমাদের নিরাপত্তায় জীবন পর্যন্ত দিয়ে দেবে। এটির পরও যদি তোমাদের বের করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরাও তোমাদের সাথে বের হয়ে যাব। তোমাদের ব্যাপারে কারো হুমকিতে আমরা প্রভাবান্বিত হবো না। যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করা হয়, তবে আমরা তোমাদের সাহায্য করব। বনু কুরায়জা এবং বনু গাতফান তোমাদের মিত্র। তারাও তোমাদের সাহায্য করবে।’

 

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই প্রেরিত এই খবর পেয়ে ইহুদিরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ল। তাদের মধ্যে অনেকেরই আবদুল্লাহর কথার প্রতি আস্থা ছিল না। কারণ এর পূর্বে বনু কায়নুকাকে বহিষ্কারের প্রাক্কালে আবদুল্লাহ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত তাদের অসহায় অবস্থায় ফেলে নিজের পথ ধরেছিল। তাই তারা তাদের সন্ধিচুক্তি থাকায় অপারগতা প্রকাশ করল। তারা চিন্তা করল, ‘আমাদের যদি মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হতেই হয়, তাহলে আমরা খায়বার কিংবা মদিনার আশেপাশে কোনো স্থানে গিয়ে বসবাস করব, যাতে মদিনায় আমাদের বাগানগুলো থেকে ফল-ফলাদি সংগ্রহ করতে পারি। এরূপ অবস্থায় মদিনা থেকে নির্বাসিত হলে আমাদের খুব একটা ক্ষতি হবে না।’[14] ইহুদিদের একাংশ যখন এই সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করছিল, ঠিক এই সময় আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, বহিষ্কৃত হওয়ার পরিবর্তে তারা যুদ্ধ করবে। ইহুদি নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব আশা করেছিল, মুনাফিক নেতা তার কথা রাখবে। তাই তাদের সবচেয়ে বড় নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব বলল, ‘না, তা হবে না, আমি মুহাম্মাদকে জানিয়ে দিচ্ছি, আমরা আমাদের ঘরবাড়ি কখনো ত্যাগ করব না, বিষয়-সম্পত্তিও ছাড়ব না। আমাদের বিরুদ্ধে আপনি যা ইচ্ছা করতে পারেন।’[15]

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা. – Expedition of Abu Ubaidah ibn al Jarrah

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবু বকর সিদ্দিক রা. – Expedition of Abu Bakr As-Siddiq

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা গালিব ইবনে আবদুল্লাহ আল-লাইসি (মায়ফাহ) – Expedition of Ghalib ibn Abdullah al-Laithi (Mayfah)

 

ইহুদিদের ঔদ্ধত্যের কারণ

 

বনু নাজিরের ঔদ্ধত্যের বহু কারণ ছিল। তারা অত্যন্ত মজবুত দুর্গে অবস্থান করত, যা অবরোধ করা সহজসাধ্য ছিল না। দ্বিতীয়ত, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বার্তা পাঠিয়েছিল, তোমরা আত্মসমর্পণ কোরো না। বনু কুরাইজা তোমাদের সহযোগিতা করবে এবং আমিও দুই হাজার লোক নিয়ে তোমাদের সাহায্যের জন্য আসবো।[16] আল-কুরআনে এই সম্পর্কে বলা হয়েছে,

 

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ نَافَقُوا يَقُولُونَ لِإِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَئِنْ أُخْرِجْتُمْ لَنَخْرُجَنَّ مَعَكُمْ وَلَا نُطِيعُ فِيكُمْ أَحَدًا أَبَدًا وَإِنْ قُوتِلْتُمْ لَنَنْصُرَنَّكُمْ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ (১১) لَئِنْ أُخْرِجُوا لَا يَخْرُجُونَ مَعَهُمْ وَلَئِنْ قُوتِلُوا لَا يَنْصُرُونَهُمْ وَلَئِنْ نَصَرُوهُمْ لَيُوَلُّنَّ الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنْصَرُونَ (১২) لَأَنْتُمْ أَشَدُّ رَهْبَةً فِي صُدُورِهِمْ مِنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَفْقَهُونَ (১৩)

 

‘আপনি কি মুনাফিকদের দেখেননি? তারা তাদের কিতাবধারী কাফের ভাইদের বলে, তোমরা যদি বহিষ্কৃত হও, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে দেশ থেকে বের হয়ে যাব এবং তোমাদের ব্যাপারে আমরা কখনো কারো কথা মানব না। আর যদি তোমরা আক্রান্ত হও, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের সাহায্য করব। আল্লাহ তায়ালা সাক্ষ্য দেন, ওরা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। যদি তারা বহিষ্কৃত হয়, তবে মুনাফিকরা তাদের সাথে দেশত্যাগ করবে না আর যদি তারা আক্রান্ত হয়, তবে তারা তাদের সাহায্য করবে না। যদি তাদের সাহায্য করে, তবে অবশ্যই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যাবে। এরপর কাফেররা কোনো সাহায্য পাবে না। নিশ্চয় তোমরা তাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালা অপেক্ষা অধিকতর ভয়াবহ। এটা এ কারণে যে, তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।’[17]

 

 

ইহুদিদের রণপ্রস্তুতি

 

ইহুদিনেতা হুয়াই ইবনে আখতাব তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে দুর্গবন্দি হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করল এবং তার সঙ্গী-সাথিদের বলল, ‘এসো! আমরা সবাই নিজ নিজ দুর্গ মজবুত করে সেখানে বসে পড়ি। দুর্গ অবরোধকারীদের উপর ছুড়ে মারার জন্য ছাদে ছাদে পাথরের টুকরা জমা করে রাখতে হবে। আমাদের অবরোধ করা হলে তাতে ভয়ের কিছু নেই। কারণ আমাদের গোলাভরা খাদ্যশস্য রয়েছে। এক বছরেও এসব শেষ হবে না। পানির প্রাকৃতিক উৎসও আমাদের দখলে রয়েছে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বছর পর্যন্ত আমাদের অবরোধ করে রাখতে পারবে না।’[18]

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বনু নাজিরকে অবরোধ

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেঁধে দেওয়া দশ দিন সময় শেষ হয়ে গেল। এদিকে ইহুদিরা তাদের নিজ নিজ ঘর থেকে আর বের হলো না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমকে মদিনায় তার স্থলাভিষিক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলেন।[19] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে মুসলমানগণ অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে ইহুদি বসতি অবরোধ করলেন। ইতিমধ্যে মুসলমানগণ ইহুদিদের কোনো বাড়ি বা ইমারত দখল করলে ইহুদিরা তা ছেড়ে দিয়ে অন্য ইমারত বা বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া শুরু করল। অবশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তাদের খেজুরের বাগানগুলো কেটে জ্বালিয়ে দাও। তাতে আর্থিক ক্ষতির চিন্তায় তারা শক্তি ও সাহস হাড়িয়ে ফেলবে। এই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ইহুদিরা অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ল। তারা ফরিয়াদ করে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি তো অন্যদের বিশৃঙ্খল হতে বারণ করেন, এখন আপনি নিজেই আমাদের খেজুরের বাগানগুলো কেটে জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। এটি কোন ধরনের ইনসাফ।’[20]

 

লিনা নামক খেজুর বৃক্ষ কর্তন

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পেয়ে সাহাবিগণ ইহুদিদের দুর্গের চতুষ্পার্শ্বে যে খেজুর বাগান ছিল, তা থেকে কিছু গাছ কেটে ফেললেন। এটি ছিল এক ধরনের খেজুর গাছ যেখানের ফল আরবরা সাধারণত ভক্ষণ করত না। রাওদাতুল উনুফ গ্রন্থে সুহাইলি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেজুর গাছ কর্তনকে যারা শত্রুদের গাছ কাটা জায়েজ বলে মনে করেন, এটি ঠিক নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অফলবান বৃক্ষ কর্তন করেছিলেন, কোথাও ফলবান উন্নত জাতের গাছ কাটা হয়নি।’[21] আর এটি হয়েছিল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশক্রমে। মূলত সমস্ত খেজুর গাছ কাটা হয়নি। লিনা নামের একপ্রকার বিশেষ ধরনের খেজুর গাছই শুধু কাটা হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত আছে,

 

مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ (৫)

 

‘তুমি যে খেজুর (লিনা) বৃক্ষ কেটেছ এবং যা রেখে দিয়েছ, সবই আল্লাহর হুকুমে হয়েছে। তা এজন্য যে, আল্লাহ পাপাচারীদের অপমানিত করবেন।’[22]

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা শুজা ইবনে ওয়াহব আল-আসাদি – Expedition of Shuja ibn Wahb al-Asadi

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা সাঈদ ইবনে জায়েদ আল-আশহালি Raid of Sa’d ibn Zaid al-Ashhali

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা হিসমি – Expedition of Zayd ibn Harithah (Hisma)

 

গাছ কর্তনের কারণ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ রহ. মন্তব্য করেন, ‘সম্ভবত গাছের আড়াল থেকে সংবাদ আদান-প্রদান করা হতো, যার কারণে তা পরিষ্কার করে দেওয়ার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছিল। এটি ছাড়া বৃক্ষাদি তখনই কাটা হয়ে থাকে, যখন যুদ্ধক্ষেত্রে তা কাটার প্রয়োজন হয়ে থাকে।’[23] ইবনে ইসহাক রহ. বলেন, ‘যদি দুশমনরা গাছের আড়ালে অবস্থান নিয়ে থাকে, তাহলে বৃক্ষ কেটে ফেলা সুন্নাত। তবে এমনও হতে পারে, এই সকল গাছের কাণ্ড দ্বারা তির নিক্ষেপের সুবিধাজনক ঘাঁটি বানানো হয়েছিল। আর এটিও উদ্দেশ্য ছিল, অবরোধের মাঝে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে।’[24]

 

বনু নাজির, বনু আওফ ও খাযরাজ গোত্রের কতিপয় ব্যক্তি; আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল, তার আমানত রক্ষক মালিক ইবনে আবু কাওকাল সুওয়াইদ ও দায়িমদের প্রতিশ্রুত সাহায্যের অপেক্ষায় থেকে আত্মসমর্পণ বা মোকাবেলা কোনটাই করল না। আর শেষ পর্যন্ত কোনো সাহায্যও এলো না। মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই দুই হাজার সৈন্য নিয়ে এগিয়ে আসেনি এবং আরবের অন্য কোনো গোত্রও তাদের এই বিপদে চোখ তুলে তাকায়নি। আল্লাহ তাদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দিলেন।[25] অবরুদ্ধ অবস্থায় পনেরো দিন কাটাবার পর ইহুদিদের প্রমাদ গুণতে লাগল। তাদের রসদপত্রও ফুারিয়ে এলো। অন্য বর্ণনায় এসেছে, বিশ দিন পর্যন্ত এই অবরোধ অব্যাহত থাকে।[26] কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 

هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِنْ دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ مَا ظَنَنْتُمْ أَنْ يَخْرُجُوا وَظَنُّوا أَنَّهُمْ مَانِعَتُهُمْ حُصُونُهُمْ مِنَ اللَّهِ فَأَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُمْ بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَاأُولِي الْأَبْصَارِ (২)

 

‘তিনিই কিতাবিদের মধ্যে যারা কাফের, তাদের প্রথমবার সমবেতভাবে আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। তোমরা কল্পনাও করোনি যে, তারা নির্বাসিত হবে এবং তারা মনে করেছিল দুর্ভেদ্য দুর্গগুলো তাদের রক্ষা করবে আল্লাহ থেকে। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি এমন একদিক থেকে এলো, যা ছিল তাদের ধারণাতীত এবং তাদের অন্তরে তা ত্রাসের সঞ্চার করল। তারা ধ্বংস করে ফেলল নিজেদের বাড়িঘর নিজেদের হাতে এবং মুমিনদের হাতেও। অতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’[27]

 

হাদিসে বর্ণিত আছে,

 

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: حَارَبَتِ النَّضِيرُ، وَقُرَيْظَةُ، فَأَجْلَى بَنِي النَّضِيرِ، وَأَقَرَّ قُرَيْظَةَ وَمَنَّ عَلَيْهِمْ، حَتَّى حَارَبَتْ قُرَيْظَةُ، فَقَتَلَ رِجَالَهُمْ، وَقَسَمَ نِسَاءَهُمْ وَأَوْلاَدَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بَيْنَ المُسْلِمِينَ، إِلَّا بَعْضَهُمْ لَحِقُوا بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَآمَنَهُمْ وَأَسْلَمُوا، وَأَجْلَى يَهُودَ المَدِينَةِ كُلَّهُمْ: بَنِي قَيْنُقَاعٍ، وَهُمْ رَهْطُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ، وَيَهُودَ بَنِي حَارِثَةَ، وَكُلَّ يَهُودِ المَدِينَةِ.

 

‘ইবনু উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি বনু কুরাইজা ও বনু নাজির গোত্রের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম, অতঃপর বনু নাজিরকে উচ্ছেদ করলাম এবং বনু কুরাইজাকে (কর প্রদানে সম্মত হওয়ায়) বহাল রাখলাম। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা হলো। অতঃপর বনু কুরাইজা যুদ্ধ শুরু করল। তখন তাদের পুরুষদের হত্যা করা হলো, তাদের নারীগণ, সন্তান-সন্ততি ও সম্পদসমূহ মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হলো। আর তাদের অল্পসংখ্যক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিরাপত্তা দান করলেন ও পরবর্তী সময়ে তারা দীন ইসলামে দীক্ষিত হলো।’[28]

 

 

দুর্গের ধ্বংসসাধন

 

যে দুর্গের মধ্যে তারা আশ্রয় নিয়েছিল, মুসলমানগণ বাহির থেকে অবরোধ করে ভেঙে ফেলতে শুরু করল। আর ভেতর থেকে তারা নিজেরা প্রথমত মুসলমানদের প্রতিহত করার জন্য জায়গায় জায়গায় কাঠ ও পাথরের প্রতিবন্ধক বসাল এবং সেজন্য নিজেদের ঘর-দরজা ভেঙে আবর্জনা জমা করল। এর পরে যখন তারা নিশ্চিত বুঝতে পারল, এই জায়গা ছেড়ে তাদের চলে যেতে হবে, তখন তারা নিজেদের হাতে নিজেদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করতে শুরু করল, যাতে তা মুসলমানদের কোনো কাজে না আসে। অথচ একসময় বড় আগ্রহ করে তারা এসব নির্মাণ করেছিল। এরপর তারা যখন এই শর্তে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সন্ধি করল, তাদের প্রাণে বধ করা হবে না এবং অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া আর যা তারা নিয়ে যেতে সক্ষম হবে নিয়ে যেতে পারবে, তখন যাওয়ার বেলায় তারা ঘরের দরজা-জানালা এবং খুঁটি পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ে গেল। এমনকি অনেকে ঘরের কড়িকাঠ এবং কাঠের চাল পর্যন্ত উটের পিঠে তুলে নিল।’ এই সম্পর্কে কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে,

 

لَا يُقَاتِلُونَكُمْ جَمِيعًا إِلَّا فِي قُرًى مُحَصَّنَةٍ أَوْ مِنْ وَرَاءِ جُدُرٍ بَأْسُهُمْ بَيْنَهُمْ شَدِيدٌ تَحْسَبُهُمْ جَمِيعًا وَقُلُوبُهُمْ شَتَّى ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَعْقِلُونَ (১৪) كَمَثَلِ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ قَرِيبًا ذَاقُوا وَبَالَ أَمْرِهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ (১৫) كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنْكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ (১৬) فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِينَ (১৭)

 

‘এরা সকলে সংঘবদ্ধভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম হবে না, কিন্তু কেবল সুরক্ষিত জনপদের অভ্যন্তরে অথবা দুর্গ প্রাচীরের অন্তরালে থেকে। পরস্পরের মধ্যে তাদের যুদ্ধ প্রচণ্ড। তুমি মনে করো তারা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু তাদের মনের মিল নেই। এটি এজন্য যে, এরা এক নির্বোধ সম্প্রদায়। এরা সেই লোকদের মতো, যারা তাদের অব্যবহিত পূর্বে নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করেছে, তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। এরা শয়তানের মতো, সে মানুষকে বলে, কুফরি করো। অতঃপর যখন সে কুফরি করে শয়তান তখন বলে, তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আমি তো জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। ফলে উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে এরা স্থায়ী হবে এবং এটিই জালেমদের কর্মফল।’[29]

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা বাশির ইবনে সাদ আনসারি – Expedition of Bashir Ibn Sa’d al-Ansari

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা বাশির ইবনে সাদ আল-আনসারি – Expedition of Bashir Ibn Sa’d al-Ansari (Fadak)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা যুল-কাস্‌সা – Expedition of Muhammad ibn Maslamah

 

অবশেষে যখন তারা নিশ্চিত হলো, অবরোধ দীর্ঘায়িত হলে এটির পরিণাম তাদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ হবে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন তারা দূত পাঠিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুরোধ করল, ‘রক্তপাত করবেন না; বরং আমাদেরকে বহিষ্কার করুন। আমরা আমাদের সব অস্ত্রশস্ত্র রেখে যাব। অস্থাবর সম্পত্তির যতটুকু প্রত্যেকের উট বহন করে নিয়ে যেতে পারবে, ততটুকুই নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিন।’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের প্রতি তিনজনে এক উট বোঝাই খাদ্যশস্য ও অন্য যেকোনো সম্পদ তোমরা ইচ্ছা করবে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে।’[30]

 

বনু নাজিরের খায়বার গমন

 

বনু নাজিরের প্রস্তাব অনুসারেই অনুমতি দেওয়া হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন বিশ্বাসঘাতকদেরকেও কোনো প্রকার শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিতে সম্মত হলেন। শুধু এই শর্তটি জুড়ে দিলেন, ‘দেশত্যাগের সময় যুদ্ধাস্ত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না।’ সুতরাং তারা মালামাল উটের উপর বোঝাই করে মদিনা ছেড়ে চলে গেল।[31] তারা উটের পিঠে বহনোপযোগী অস্থাবর সম্পদ নিয়ে গেল। যারা খায়বার গিয়েছিল, তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিল সাল্লাম ইবনে আবুল হুকাইক, কিনানা ইবনে রাবি ইবনে আবিল হুকাইক ও হুয়াই ইবনে আখতাব। খায়বারের অধিবাসীরা তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করল।[32] তাদের কিছুসংখ্যক খায়বারে বসতি স্থাপন করে আর কিছুসংখ্যক সিরিয়ার এজরাট (আরিয়াত) জনপদে চলে যায়।[33] খায়বারের লোকেরা তাদের এমন সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে আরম্ভ করল, তারা খায়বারের সর্দার নিযুক্ত হলো। এই ঘটনা মূলত পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত খায়বার যুদ্ধের সূচনা-পর্ব ছিল।[34]

 

বনু নাজির দেশ ছেড়ে যাচ্ছিল। আর তাদের গায়িকারা তবলা বাজিয়ে গান গাইতে গাইতে হেলেদুলে চলছিল। তাদের পুরুষরা উটের পিঠে চড়ে বাজনা বাজিয়ে গায়িকা রমণীদের উৎসাহিত করছিল। মদিনাবাসীদের বক্তব্য, এমন ধন-সম্পদ বহনকারী সওয়ারী ইতিপূর্বে কখনো তাদের চোখে পড়েনি।[35] তাদের প্রস্থানের সময় যা সমস্যা হয়ে দেখা দিল তা হলো, আনসারদের যেসকল সন্তান-সন্ততি ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছিল, ইহুদিরা তাদের নিয়ে যাচ্ছিল, আর আনসারগণ তাদের যেতে বাধা দান করছেন।[36] এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পবিত্র কুরআনের আয়াত নাজিল হয়,

 

لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ

 

‘দীন সম্পর্কে জবরদস্তি নেই।’[37]

 

আবু দাউদ গ্রন্থের ‘বাবু ফিল আসিরি ইয়ারাহু আলাল ইসলাম’ শিরোনামে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর বর্ণিত হাদিসে এই ঘটনার বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।[38] এই আয়াত অনুযায়ী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এদের আবদ্ধ করে রাখার অধিকার তোমাদের নেই। যার ইচ্ছা হয় থাকুক, আর যার ইচ্ছা হয় ইহুদিদের সঙ্গে চলে যাক।’[39]

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি

 

এরা দেশান্তরিত হওয়ার ফলে মুসলমানদের অসুবিধা দূর হলো। ইসলাম বিরোধী যে শক্তি ভেতরে দানা বেঁধে উঠছিল, তা তিরোহিত হলো। কুরাইশদের গুপ্ত ষড়যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেল। তাতে মুসলমানদের প্রতিপত্তিও অনেকখানি বেড়ে গেল। তাদের পরিত্যক্ত ভূ-সম্পত্তি ও অস্ত্রশস্ত্র মুসলমানদের অধিকারে আসায় তারা যথেষ্ট লাভবান হলো।[40]

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওহি লেখক পরিবর্তন

 

এত দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওহি লেখক ছিল একজন ইহুদি যুবক। সে হিব্রু ও সুরিয়ানি ভাষায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠিপত্র লিখত; কিন্তু বনু নাজিরের সঙ্গে এই লোকও দেশত্যাগ করে চলে গেল। এটি ছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহি লেখার ব্যাপারে কোনো অমুসলিমের উপর নির্ভর করা সমীচীন মনে করলেন না। তিনি জায়েদ ইবনে সাবিতকে হিব্রু ও সুরিয়ানি ভাষা শিখে নেওয়ার নির্দেশ দিলেন।[41]

 

ফায় লাভ ও কুরআনের বাণী

 

বনু নাজিরের নির্বাসনের পর অনেকগুলো খাদ্যশস্য ভর্তি গোলা, ফলের বাগান ও আবাদি জমি মুসলমানদের হস্তগত হয়। এটি ছাড়া ৫০টি বর্ম এবং ৩৪০টি তরবারি পাওয়া যায়।[42] আল্লামা শিবলি নোমানিও তার সিরাতুন নবীতে একই সংখ্যা উল্লেখ করেন।[43] এসব সম্পত্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বনু নাজির থেকে প্রাপ্ত ধন-সম্পদও মুহাজিরদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন, যেন আনসার সাহাবিদের উপর তাদের ভরণ-পোষণের ভার লাঘব হয়। এর কিছু অংশ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মালে (রাষ্ট্রীয় কোষাগারে) রেখে দিলেন।[44] এ ছাড়া ওই সকল লোকদেরকেও কিছু অংশ দিলেন, যারা মক্কা শরিফে ও আরবের অন্যান্য এলাকা থেকে ইসলাম গ্রহণের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা জায়েদ ইবনে হারিসা (কারাদা অভিযান) – Expedition of Zayd ibn Haritha

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা জায়েদ বিন হারিসা (জামুম) – Expedition of Zayd ibn Harithah (Al-Jumum)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা দাহহাক ইবনে সুফিয়ান – Expedition of Dahhak al-Kilabi

 

বনু নাজির গোত্রের এলাকা বিজিত হওয়া পর্যন্ত এই সকল মুহাজিরের জীবনযাপনের কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। বনু নাজিরের এলাকা বিজিত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এখন একটা বন্দোবস্ত হতে পারে এভাবে যে, তোমাদের বিষয় সম্পদ এবং ইহুদিদের পরিত্যক্ত ফল-ফলাদি ও খেজুর বাগান মিলিয়ে একত্র করে সম্পূর্ণটি তোমাদের ও মুহাজিরদের মাঝে বণ্টন করে দাও। আরেকটা বন্দোবস্ত হতে পারে এভাবে, তোমাদের বিষয়-সম্পদ নিজেরাই ভোগ দখল করো। আর পরিত্যক্ত এসব ভূমি মুহাজিরদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। আনসারগণ সমস্বরে বললেন, এ সকল সহায়-সম্পদ আপনি মুহাজিরদের মাঝে বণ্টন করুন। আর চাইলে আমাদের বিষয়-সম্পদের যতটাই ইচ্ছা তাদের দিয়ে দিতে পারেন। তাতে আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু উচ্চৈঃস্বরে বললেন, ‘জাযাকুমুল্লাহ ইয়া মা’শারাল আনসারি খায়রান’—হে আনসারগণ! আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন।[45] এভাবে আনসারদের সম্মতির ভিত্তিতেই ইহুদিদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি মুহাজিরদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হলো।

 

অবশ্য আনসারদের মধ্যে আবু দুজানা এবং সাহল ইবনে হুনাইকেও মুহাজিরদের সমপরিমাণ অংশ দেওয়া হয়। কারণ, তাদের আথির্ক অবস্থাও ভালো ছিল না। এই সময় দুজন ইহুদি ইসলাম গ্রহণ করল। তাদের সম্পত্তি তাদের ভোগ করতে দেওয়া হলো।[46] কারো কারো বর্ণনা অনুসারে হারেস ইবনে নেসাকে অংশ দেওয়া হয়েছিল। কারণ তিনিও অত্যন্ত গরিব ছিলেন।[47]

 

তথ্যসূত্র

 

[1]. ইয়াকুবি : ১/৪৯

[2]. সিরাত আল-হালাবিয়্যা : ৩/২

[3]. সিরাত আল-হালাবিয়্যা : ৩/২

[4]. ইয়াকুবি : ২/৪৯

[5]. সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ : ১০৮

[6]. আল্লামা শিবলি নোমানি, সিরাতুন নবী গ্রন্থে আবু দাউদ শরিফের রেফারেন্সে এই ঘটনা বর্ণনা করেন : ৪০৭-৪৯৮

[7]. ফাতহুল বারি : ৭/১৫৫

[8]. মূল ড: মুহাম্মাদ হুসাইন ইবনে হায়কাল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন-চরিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা ১৯৯৮ ঈসাব্দ

[9]. মওলানা মুহাম্মাদ তফাজ্জল হোছাইন, সম্পা. ডঃ এ. এইচ. এম. মুজতবা হোছাইন; হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম: সমকালীন পরিবেশ ও জীবন, ৫৮৪

[10]. ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, কিতাবুল মাগাজি : ৭/৩৮৪

[11]. সুরা হাশর : ১-২

[12]. মুহাম্মাদ হুসাইন হায়কাল : ৪০০

[13]. মুহাম্মাদ হুসাইন হায়কাল : ৪০০

[14]. ডঃ মুহাম্মাদ হুসাইন হায়কাল : ৪০১

[15]. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত : ৪০২

[16]. শিবলি নোমানি, সিরাতুন নবী : ১/৪০৮

[17]. সুরা হাশর : ১১-১৩

[18]. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত : ৪০২

[19]. হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সমকালীন পরিবেশ ও জীবন : ৫৫

[20]. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত, ৪০২

[21]. সিরাতুন নবী, শিবলি নোমানি : ২০৫

[22]. সুরা হাশর : ৫

[23]. সিরাতুন নবী : ৪০৯

[24]. শিবলি নোমানী, সিরাতুন নবী : ২০৫-২০৬

[25]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ২০০

[26]. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত : ৪০২

[27]. সুরা হাশর : ২

[28]. ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি শরহুল বুখারি, কিতাবুল মাগাজি : ৭/৩৮৫

[29]. সুরা হাশর : ১৪-১৭

[30]. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত : ৪০৩

[31]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ১৯০-১৯১

[32]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ২০০

[33]. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন চরিত : ৪০৩

[34]. সিরাতুন নবী : ৪১০

[35]. সিরাতুন নবী : ৪১০

[36]. সুনানে আবু দাউদ : ২/৯

[37]. সুরা বাকারা, ২৫৬

[38]. সিরাতুন নবী : ৪১০

[39]. সমকালীন পরিবেশ ও জীবন : ৫৮৬

[40]. সমকালীন পরিবেশ ও জীবন : ৫৮৫

[41]. ড. মুহাম্মাদ হুসাইন হায়কাল, প্রাগুক্ত : ৪০৪

[42]. ড. মুহাম্মাদ হুসাইন হায়কাল : ৪০৩

[43]. সিরাতুন নবী : ৪১০

[44]. সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ : ২/১০৯

[45]. ইয়াহইয়া ইবনে আদম, বালাজুরি।

[46]. ড. মুহাম্মাদ হুসাইন হায়কাল, মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন চরিত : ৪০৩

[47]. বালাজুরি, ইবনে হিশাম, রুহুল মাআনি।

শেয়ার করুন

সূচীপত্র

error: Content is protected !!