সিরাত বিশ্বকোষ
সিরাত বিশ্বকোষ

২. (২.) বাতনে রাগিব অভিযান – Expedition of Ubaydah ibn al-Harith

লেখক: আহমাদ রিফআত

বিষয় : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুদ্ধ-জিহাদ

২. (২.) বাতনে রাগিব অভিযান – Expedition of Ubaydah ibn al-Harith

২. সারিয়্যা উবায়দা ইবনে হারেস রাযিয়াল্লাহু আনহু (বাতনে রাগিব অভিযান)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রেরিত সারিয়্যা : ০২
সাধারণ তথ্য
হিজরি ১ম বর্ষের শাওয়াল মাস তারিখ
মক্কার কুরাইশগণ মদিনার সীমান্ত অঞ্চলে বাহিনী প্রেরণ যুদ্ধের কারণ
উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলেও সেখানে কোনো যুদ্ধ হয়নি। ফলাফল
নেতৃত্ব
আবু জাহল-পুত্র ইকরিমা উবায়দা ইবনে হারেস রাযিয়াল্লাহু আনহু
শক্তি
২০০ জন ৬০-৮০ জন মুহাজির অশ্বারোহী
নোট
 সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু কাফের বাহিনীর দিকে একটি তির ছুড়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে এটিই ছিল কাফেরদের প্রতি নিক্ষিপ্ত সর্বপ্রথম তির।

 

 

পরিচিতি

এ অভিযান পরিচালিত হয় হিজরি ১ম বর্ষের শাওয়াল মাস মোতাবেক এপ্রিল, ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে। মক্কার কুরাইশগণ মদিনার সীমান্ত অঞ্চলে একটি বাহিনী প্রেরণ করেছে, এই সংবাদ পেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন চাচাতো ভাই উবায়দা ইবনে হারেসের নেতৃত্বে ষাটজন অশ্বরোহী মুহাজির সাহাবির একটি দলকে রাবিগ অভিমুখে প্রেরণ করেন।[1] মতান্তরে সাহাবিগণের সংখ্যা ছিল আশিজন। কোনো আনসার সাহাবি এতে শামিল ছিলেন না।

 

আরো পড়ুন : সিফুল বাহার অভিযান – Expedition of Hamza ibn Abdul-Muttalib

বিজ্ঞাপন

 

আরো পড়ুন : হুদাইবিয়ার সন্ধি – Treaty of Hudaybiyyah

বাতনে রাগিব অভিযান স্থান

মানচিত্র (০২) : বাতনে রাগিব অভিযান স্থান

 

অবস্থান

রাবিগ উপত্যকার সানিয়াতুল মাররা নামক স্থানে একটি জলাশয়ের নিকট উপনীত হলে তারা সেখানে বিপুলসংখ্যক কুরাইশের জমায়েত লক্ষ করেন। সংখ্যায় তারা ছিল ২০০ জন। ওই সমাবেশে আবু সুফিয়ানও ছিল। ইবনে ইসহাকের ভাষ্যমতে, ওই কুরাইশ দলের নেতৃত্বে ছিল আবু জাহল-পুত্র ইকরিমা। উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলেও সেখানে কোনো যুদ্ধ হয়নি। তবে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু কাফের বাহিনীর দিকে একটি তির ছুড়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে এটিই ছিল কাফেরদের প্রতি নিক্ষিপ্ত সর্বপ্রথম তির।

 

সময়কাল

ইবনে হিশাম—সারিয়্যাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াদ্দান অভিযানের পরবর্তী সময়ে প্রেরিত হয়েছিল বলে উল্লেখ করলেও আল্লামা শিবলি নোমানি সেটি তার উক্ত অভিযানের পূর্ববর্তীকালের ঘটনা বলে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।[2]

 

সফিউর রহমান মোবারকপুরি ওই সারিয়্যা শাওয়াল ১ম হিজরি মোতাবেক এপ্রিল ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।[3]

 

পরিসংখ্যান

মাওলানা দানাপুরিও এই অভিযানের সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে—সারিয়্যা হামজার পর ১ম হিজরির শাওয়াল মাসে হিজরতের অষ্টম মাসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬০ মতান্তরে ৮০ জন অশ্বরোহী মুহাজির সাহাবিকে উবায়দা ইবনে হারেসের নেতৃত্বে রাবিগ প্রেরণ করেন। এজন্য যে পতাকা তৈরি করা হয়, তাও শ্বেতবর্ণের ছিল এবং পতাকা বহনকারী ছিলেন মিসতাহ ইবনে উসাসা রাযিয়াল্লাহু আনহু।[4]

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা ফাদাক, ফাদাকের দ্বিতীয় অভিযান – Expedition of Muhaysa ibn Massud (Fadak)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা ফাদাক, ফাদাকের প্রথম অভিযান – Expedition of ʿAlī ibn Abī Ṭālib (Fadak)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যায়ে ওয়াদিউল কুরা (প্রথম) – Expedition of Zayd ibn Harithah (Wadi al-Qura)

 

একটি ঘটনা

মিকদাদ ইবনে আমর বাহরানি ও উতবা ইবনে গাজওয়ান আল-মাজিনি নামক দুই ব্যক্তি মুশরিক শিবির থেকে পালিয়ে এই সময় মুসলিম শিবিরে চলে আসেন। ইবনে ইসহাক বলেন, তারা দুজন মুসলমানই ছিলেন। তারা কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।[5]

 

প্রাসঙ্গিক আলোচনা

ইবনে ইসহাক বলেন, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু তার তির নিক্ষেপ সম্পর্কে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন বলে কথিত আছে। কবিতাটি ছিল নিম্নরূপ :

أَلا هَلْ أَتَى رَسُولَ اللَّهِ أَنِّي … حَمَيْتُ صِحَابَتِي بِصُدُورِ نَبْلِي

أَذُودُ بِهَا عَدُوَّهُمُ ذِيَادًا … بِكُلِّ حُزُونَةٍ وَبِكُلِّ سَهْلِ

فَمَا يُعْتَدُّ رَامٍ مِنْ مَعَدٍّ … بِسَهْمٍ مَعْ رَسُولِ اللَّهِ قَبْلِي

وذلك أن دينك دين صدق … وذو حق أتيت به وعدل

ينجى المؤمنون به ويجزي …به الكفار عند مقام مهل

فمهلا قد غويت فلا تعبني …غوي الحي ويحك يابن جهل

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এই সংবাদ পৌঁছেছে, আমি আমার সঙ্গীগণকে তির দ্বারা রক্ষা করেছি। আমি তাদের প্রত্যেক পার্বত্যভূমি ও সমভূমিতে তাদের অগ্রবর্তী শত্রুদের প্রতিহত করেছি।

 

আমার পূর্বে আর কেউই শত্রুবাহিনীর প্রতি তির নিক্ষেপ করেনি। বস্তুত আপনার আনীত দীন সত্য, ন্যায় ও সুবিচারের দীন। এর মাধ্যমে মুমিনদের পরিত্রাণ দেওয়া হবে এবং কাফেরদের এটি (অগ্রাহ্য করার কারণে স্থায়ীভাবে লাঞ্ছিত করা হবে।)

 

‘হে জাহল (মূর্খ) নন্দন! তোমার জন্য পরিতাপ, তুমি তো বিপথগামী হয়েছ। এজন্য আমার প্রতি দোষারোপ করবে না। তুমি কিছুদিন অপেক্ষা করো (এবং দেখো, তোমার জন্য কী পরিণতি অপেক্ষা করছে)।’[6]

 

ইবনে হিশাম সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের বলে কথিত উপরোল্লিখিত কবিতা প্রকৃতপক্ষে তার নয় বলে মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন।

 

ইবনে ইসহাক এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমার নিকট এই মর্মে তথ্য পৌঁছেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম যার হাতে পতাকা তুলে দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন এই উবায়দা ইবনে হারেস রাযিয়াল্লাহু আনহু।

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা গালিব ইবনে আবদুল্লাহ, ফাদাকের চতুর্থ অভিযান – Expedition of Ghalib ibn Abdullah al-Laithi (Fadak)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা তারাফ – Expedition of Zayd ibn Harithah (At-taraf)

 

আরো পড়ুন : সারিয়্যা ফাদাক, ফাদাকের তৃতীয় অভিযান – Expedition of Bashir Ibn Sa’d al-Ansari (Fadak)

 

 উবায়দা ইবনে হারেস রাযিয়াল্লাহু আনহু পরিচালিত অভিযানটি সারিয়্যা রাবিগ নামেও পরিচিত। তবে এই অভিযানে উভয় সৈন্যদল কোনো প্রকার সংঘর্ষ ছাড়াই নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে গিয়েছিল।

 

তথ্যসূত্র

 

 

[1]. মোবারকপুরি, আর-রাহিকুল মাখতুম : ১৭৮

[2]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ২/২৮২; শিবলি নোমানি, সিরাতুন নবী (উর্দু) : ১২/৩১০

[3]. মোবারকপুরি, আর-রাহিকুল মাখতুম : ২১৯, প্রথম মুদ্রণ, ১৯৮০ খ্রি.।

[4]. আসাহহুস সিয়ার : ৮০

[5]. ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ২/২৮২; ইবনে সাদ, আত-তাবকাতুল কুবরা : ১/৭

[6]. ইবনে হাজার, আল-ইসাবাহ : ২/৩৪; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ২/২৩৪; ইবনে সাদ, আত-তাবকাতুল কুবরা : ৩/১৪০; ইবনুল আসির, উসদুল গাবাহ : ২/২৯১

শেয়ার করুন

সূচীপত্র

error: Content is protected !!