৩২. (১৩) মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর অভিযান – Expedition of Muhammad ibn Maslamah
১৩. সারিয়্যা মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাযিয়াল্লাহু আনহু বা মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর অভিযান | |||||||
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কর্তৃক প্রেরিত সারিয়্যা : ১৩ | |||||||
|
|||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা | সুমামা ইবনে উসাল | ||||||
শক্তি | |||||||
৩০ | অজ্ঞাত | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
শাহাদাত : ০ | নিহত : ১০ সুমামা ইবনে উসাল বন্দি |
সময়কাল
খন্দক ও বনু কুরাইজা যুদ্ধের পর এটি ছিল প্রথম সামরিক অভিযান। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর নেতৃত্বে ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাস মোতবেক ৬ষ্ঠ হিজরির ১০ই মুহাররম মাসে ৩০ জন সাহাবির সমন্বয়ে গঠিত একটি দল এই অভিযানে অংশ নেন।[1]
অভিযান সূচনা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু বকরের (বনু বকর বিন ওয়ায়েল) সাথে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ইবনে মাসলামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর নেতৃত্বে ৩০ জন সাহাবির একটি দল প্রেরণ করেন।
নজদের অভ্যন্তরে বাকরাত এলাকার যারিয়ায় এই সেনাদল প্রেরণ করা হয়। যারিয়া এবং মদিনার মধ্যে সাত রাতের দূরত্ব। লক্ষ্য ছিল বনু বকর ইবনে কিলাব গোত্রের একটি শাখা।
মুসলমানরা ধাওয়া করলে শত্রুরা সকলেই পালিয়ে যায়। শত্রুদের ১০ জন নিহত হয়। মুসলমানরা ১৫০টি উট এবং ৩০০০টি ছাগল অধিকার করে এবং মুহাররমের একদিন বাকি থাকতেই মদিনায় এসে পৌঁছান।[2] বনু হানিফা গোত্রের (বনু বকরের একটি শাখা) সর্দার সুমামা ইবনে উসাল হানাফিকেও গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন। সুমামা ভণ্ড নবী মুসাইলামা কাযযাবের নির্দেশে ছদ্মবেশ ধারণ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে বেরিয়েছিল।[3]
আরো পড়ুন : গাজওয়া মুরাইসি – Expedition of al-Muraysi’
আরো পড়ুন : গাজওয়া যাতুর-রিকা – Expedition of Dhat al-Riqa
আরো পড়ুন : গাজওয়া যি-কারাদ বা গাজওয়া গাবা – Expedition of Dhu Qarad
বিস্তারিত ঘটনাটি ইমাম আত-তাবারি তার ‘আল-কামিল ফিত তারিখ’[4] গ্রন্থে উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও ইবনে কাইয়িম আল-জাওজিয়া তার রচিত যাদুল মাআদ-এ[5] ঘটনাটি উল্লেখ করেন। এ ছাড়া, আর-রাহিকুল মাখতুম [6] ও আত-তাবাকাতুল কুবরা-গ্রন্থেও[7] ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।
সুমামা ইবনে উসালের ইসলাম গ্রহণ
এই অভিযানে বনু হানিফা গোত্রের প্রধান সুমামা ইবনে উসাল আল-হানাফি বন্দি হন। আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে সহিহ মুসলিম গ্রন্থে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নজদ এ কিছু ঘোড়সওয়ার প্রেরণ করেন। তারা এক ব্যক্তিকে বন্দি করে নিয়ে যায়। তিনি বনু হানিফা গোত্রের ছিলেন এবং তাকে সুমামা ইবনে উসাল বলা হতো। তিনি ইয়ামামার লোকদের প্রধান ছিলেন। লোকেরা তাকে মসজিদের একটি স্তম্ভের সাথে বেঁধে রাখে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে বের হন। তিনি বলেন, “হে সুমামা, তোমার কিছু বলার আছে?” উত্তরে সে বলল, “মুহাম্মাদ, আপনার সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা আছে। আমাকে মেরে ফেললে এমন একজনকে মেরে ফেলা হবে, যার রক্ত ঝরেছে। আপনি যদি আমার একটি উপকার করেন, তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপকার করা হবে। আপনি যদি সম্পদ চান, বলেন এবং আপনি যা চাইবেন, তাই পাবেন।”
মানচিত্র (৩৩) : মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর অভিযান স্থল
আরো পড়ুন : গাজওয়া বদর আল-আখিরা – Expedition of Badr al-Maw’id
আরো পড়ুন : গাজওয়া বনি নাজির – Invasion of Banu Nadir
আরো পড়ুন : গাজওয়া বনু কায়নুকা – Invasion of Banu Qaynuqa
রাসুল তাকে এ অবস্থায় দুদিনের জন্য রেখে গেলেন। দুদিন পর আবার তার কাছে এসে বললেন, “হে সুমামা, তোমার কিছু বলার আছে?” উত্তরে সে বলল, “যা আমি আপনাকে আগেই বলেছি। আপনি যদি আমার একটি উপকার করেন, তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপকার করা হবে। আমাকে মেরে ফেললে এমন একজনকে মেরে ফেলা হবে—যার রক্ত ঝরেছে। আপনি যদি সম্পদ চান, বলেন এবং আপনি যা চাইবেন, তাই পাবেন।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পরের দিন পর্যন্ত রেখে গেলেন এবং পরদিন যখন আবার তার কাছে এসে বললেন, “হে সুমামা, তোমার কিছু বলার আছে?” উত্তরে বলল, “যা আমি আপনাকে আগেই বলেছি। আপনি যদি আমার একটি উপকার করেন, তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপকার করা হবে। আমাকে মেরে ফেললে এমন একজনকে মেরে ফেলা হবে যার রক্ত ঝরেছে। আপনি সম্পদ চাইলে বলেন এবং যা চাইবেন, তাই পাবেন।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের বললেন, “সুমামাকে মুক্ত করে দাও।” তিনি মসজিদের কাছে একটি খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করলেন। অতঃপর তিনি মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসুল। হে রাসুল, আল্লাহর কসম, পৃথিবীতে আমার কাছে আপনার চেহারার চেয়ে ঘৃণ্য আর কোনো চেহারা ছিল না, কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সব চেহারার চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আল্লাহর কসম, আপনার দীনের চেয়ে আমার কাছে বিদ্বেষপূর্ণ কোনো দীন ছিল না, কিন্তু এখন আপনার দীন আমার কাছে সব দীনের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আল্লাহর কসম, আপনার শহরের চেয়ে আমার কাছে ঘৃণ্য কোনো শহর ছিল না, কিন্তু এখন আপনার শহর আমার কাছে সব শহরের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠেছে। আমি যখন উমরাহ করতে যাচ্ছিলাম, তখন আপনার ঘোড়সওয়াররা আমাকে বন্দি করে। এখন এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সুসংবাদ দিলেন এবং উমরাহয় যেতে বললেন। যখন তিনি মক্কায় পৌঁছালেন, তখন কিছু লোক তাকে বলল, “তুমি কি ধর্ম পরিবর্তন করেছ?” তিনি বললেন, “না! আমি বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম, ইয়ামামা থেকে তোমরা একটি গমের দানাও পাবে না, যতক্ষণ না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি না দেন।”’[8]
তথ্যসূত্র
[1]. আত-তাবাকাতুল কুবরা : ২/৬০; আর-রাহিকুল মাখতুম : ২৯৪-২৯৫
[2]. আত-তাবাকাতুল কুবরা : ২/৬০
[3]. আত-তাবাকাতুল কুবরা : ২/৬০
[4]. আল-কামিল ফিত তারিখ : ২/ ২১০
[5]. যাদুল মাআদ : ১/১১৯
[6]. আর-রাহিকুল মাখতুম : ২৯৪-২৯৫
[7]. আত-তাবাকাতুল কুবরা : ২/৬০
[8]. সহিহ মুসলিম : ১৭৬৪