সিরাত বিশ্বকোষ
সিরাত বিশ্বকোষ

৬. (৩) আল-উশাইরা অভিযান   – Patrol of Zul Al-Ushairah  

লেখক: আহমাদ রিফআত

বিষয় : বিষয়ভিত্তিক সিরাত

৬. (৩) আল-উশাইরা অভিযান  – Patrol of Zul Al-Ushairah

৩. আল-উশাইরা অভিযান বা গাজওয়া আলউশাইরা

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে সংঘটিত গাজওয়া : ৩

তারিখ হিজরি দ্বিতীয় সনের জুমাদাল উলার মাঝামাঝি সময়
পতাকা এই অভিযানে হামজা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর হাতে পতাকা ছিল।
কারণ কাফেরদের কোনো বাণিজ্যিক কাফেলার প্রতিহত করা।
ফলাফল কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
বিবাদমান পক্ষ
মদিনার মুসলমানগণ (মুহাজির) মক্কার কুরাইশগণ
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
শক্তি
২০০ যোদ্ধা
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
কোনো লড়াই হয়নি, কোনো ক্ষতি নেই। কোনো লড়াই হয়নি, কোনো ক্ষতি নেই।

পরিচিতি ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ

 

সময়টি হিজরি দ্বিতীয় সনের জুমাদাল উলার মাঝামাঝি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে দুইশত মুহাজির। কুরাইশদের সিরিয়াগামী এক কাফেলার উপর হামলা করার জন্য উশাইরা নামক স্থানের দিকে তারা রওনা হন। এ সময় আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদ মাখমিকে মদিনার শাসক নিয়োগ করা হয়। কুরাইশদের এই কাফেলা পণ্যসামগ্রী নিয়ে মক্কা থেকে সিরিয়া অভিমুখে রওনা হয়েছিল। ‘ইয়ানবু’ নামক স্থানে পৌঁছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলেন, কাফেলা ইতিপূর্বেই সিরিয়া চলে গেছে বিধায় কাফেলার অপেক্ষায় জুমাদাল উলার অবশিষ্ট দিন ও জুমাদাস সানিয়ার কয়েক দিন সেই স্থানে অবস্থান করেন। অবশেষে মুদলিজ গোত্র ও তাদের মিত্র বনু দামরার সাথে সন্ধি চুক্তি করে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। এই অভিযানে হামজা রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর হাতে পতাকা ছিল। উল্লেখ থাকে, কুরাইশদের বাণিজ্যিক কাফেলাটি যখন সিরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করে, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে পর্যুদস্ত করার জন্য পুনরায় অভিযানে বের হন, তখনই মূল বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।[1]

এই অভিযানে মুদলিজ গোত্র ও তাদের মিত্র গোত্র বনু দামরার সাথে যে সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল—তা নিম্নরূপ,

بِسْمِ اللهِ الرّحْمَنِ الرّحِيمِ هَذَا كِتَابٌ مِنْ مُحَمّدٍ رَسُولِ اللهِ لِبَنِي ضَمْرَةَ، فَإِنّهُمْ آمِنُونَ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ، وَأَنّ لَهُمْ النّصْرَ عَلَى مَنْ رَامَهُمْ إلّا أَنْ يُحَارِبُوا فِي دِينِ اللهِ مَا بَلّ بَحْرٌ صُوفَةً، وَإِنّ النّبِيّ إذَا دَعَاهُمْ لِنَصْرِهِ، أَجَابُوهُ، عَلَيْهِمْ بِذَلِكَ ذِمّةُ اللهِ وَذِمّةُ رَسُولِهِ، وَلَهُمْ النّصْرُ عَلَى مَنْ بَرّ مِنْهُمْ وَاتّقَى

‘দয়াময় পরম ‘দয়ালু আল্লাহর নামে। এই চুক্তিপত্র আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে বনু দামরার প্রতি; তাদের জীবন ও ধনসম্পদ নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি বা দামরার সাথে অনর্থক যুদ্ধের ইচ্ছা করবে, তার বিরুদ্ধে বনু দামরাকে সাহায্য করা হবে এ শর্তে যে, সমুদ্র শুষ্ক হয়ে যাওয়ার পূর্ব-পর্যন্ত তারা আল্লাহর দীনের বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহ করবে না (অর্থাৎ এই হুকুম সর্বদা বলবৎ থাকবে)। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদেরকে তার সাহায্যের জন্য আহ্বান করবেন, তখন তারা তার ডাকে সাড়া দেবে। যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে এবং পরহেজগারি অবলম্বন করবে, তাদের সাথে আল্লাহ ও তার রাসুলের সাহায্যের অঙ্গীকারনামা ও তাদের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব আল্লাহ ও তার রাসুলের জিম্মায় থাকবে।[2]

আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ – Expedition of Abu Ubaidah ibn al Jarrah

আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবু কাতাদা ইবনে রিবঈ – Expedition of Abu Qatadah ibn Rab’i al-Ansari (Batn Edam)

আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবু সালামা – Expedition of Qatan

আল-উশাইরা অভিযান স্থল
আল-উশাইরা অভিযান স্থল

মানচিত্র (০৬) : আল-উশাইরা অভিযান স্থল

 

এই অভিযান সম্পর্কে ইমাম বুখারি রহ. আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন,

حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا وَهْبٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، كُنْتُ إِلَى جَنْبِ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، فَقِيلَ لَهُ: كَمْ غَزَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ غَزْوَةٍ؟ قَالَ: تِسْعَ عَشْرَةَ قِيلَ: كَمْ غَزَوْتَ أَنْتَ مَعَهُ؟ قَالَ: سَبْعَ عَشْرَةَ، قُلْتُ: فَأَيُّهُمْ كَانَتْ أَوَّلَ؟ قَالَ: العُسَيْرَةُ أَوِ العُشَيْرُ فَذَكَرْتُ لِقَتَادَةَ فَقَالَ: العُشَيْرُ

‘আবু ইসহাক রহ. বলেন, আমি জায়েদ ইবনে আরকাম রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর পাশে উপস্থিত ছিলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোট কতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন? তিনি বললেন, উনিশটিতে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি তার সাথে কয়টি যুদ্ধে শরিক ছিলেন? তিনি বললেন, সতেরোটিতে। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, প্রথম যুদ্ধ কোনটি? তিনি বললেন, উশাইরা কিংবা উসাইরা।’[3] এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, ইসলামের প্রথম গাজওয়া হলো উশাইরা।[4] এই অভিযানে আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আবু তুরাব (أبو تراب) উপনামে ভূষিত হয়েছেন।[5]

আরো পড়ুন : সাফওয়ানা অভিযান – First Expedition to Badr (Safwan)

আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস রা. – Expedition of Abdullah Ibn Unais

আরো পড়ুন : সারিয়্যা আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা রা. – ‘Abdullah ibn Hudaffa

তথ্যসূত্র

[1]. ফাতহুল বারি : ৭/২২৩; উমদাতুল-কারি : ১/৭৪; ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা : ২/২৪৮

[2]. আর-রাওদুল উনুফ : ৫/৭৮; আবু আল-কাসিম আবদুর রহমান বিন আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আস-সুহাইলি (মৃত্যু : ৫৮১ হিজরি), প্রকাশক : দারু ইহইয়ায়িত তুরাস আল-আরাবি, বৈরুত; সংস্করণ : প্রথম, ১৪১২ হিজরি/১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ।

[3]. সহিহ বুখারি : ৫/৭১

[4]. ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৩/৩০২

[5]. ইবনে সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা : ১/৩১০

শেয়ার করুন

সূচীপত্র

error: Content is protected !!